সিলেটের ওসমানীনগরে ভাইদের দ্বারা হয়রানির শিকার প্রবাসী 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

অক্টোবর ২৭ ২০২০, ১৮:৩১

আহমদ মালিক, ওসমানীনগর প্রতিনিধি: সিলেটের ওসমানীনগরে পাওনা টাকা ও ভূ-সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য আলাদতে মামলা করে হয়রানির শিকার হচ্ছেন এক প্রবাসী। টাকা ও সম্পত্তি আত্মসাতের অপকৌশল হিসেবে প্রতিপক্ষের লোকজন নাটকীয় গুমের মামলা দিয়ে প্রবাসী তিন ভাইকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন ওসমানীনগর উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের সিকন্দর (মাইজগাঁও) গ্রামের মৃত ছিফত উল্যার ছেলে জসশেদ আলী ওরফে লেফাস মিয়া। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লেফাস মিয়া বলেন, ওসমানীনগর উপজেলাধীন আব্দুল্লাপুর (পুর্ব কালনিচর) গ্রামের ছিদ্দেক আলীর ছেলে রানু মিয়া ও জানু মিয়া আমার আপন চাচাতো ভাই। ওসমানীনগর উপজেলার সম্মানপুর মৌজার জেএলনং-৩০, ভিন্ন-ভিন্ন খতিয়ানে আমি ও আমার চাচাতো ভাইদের যৌথ মালিকানাধীন ১০ দশমিক ৫০ কেয়ার ভূমি রয়েছে। ৭ বছর পূর্বে চাচাতো ভাই ও আমার যৌথ সম্পত্তির অংশ আপোষে ভাগ-বাটোয়ারা করে একটি ফিশারী করার উদ্যোগ নেই। ফিশারী করার জন্য তাদের ভূমির অংশ আমার নিকট বাৎসরিক ২৫হাজার টাকা হারে মৌখিক ইজারা দিয়ে দেবেন। আর আমার তৈরী করা ফিশারীতে তারা (রানু-জানু) মাসিক ৮ হাজার টাকা বেতনে কর্মচারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ২০১৩ সালে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ফিশারীর জন্য পুকুর খনন করে ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে ফিশারীতে মাছের পোনাসহ আরো প্রায় ৫লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করি। ২০১৭সাল পর্যন্ত ফিশারিতে বিনিযোগ করা ব্যবসার কোনো হিসাব না দিয়ে তারা প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেন। আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং মুরব্বীয়ানদের বিষয়টি অবহিত করলে রানু ও জানু হিসাব বুঝিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে বলেন- হিসাব বুঝিয়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত ফিশারীতে তারা কোনো ধরনের ব্যঘাত সৃষ্টি করবেন না।

২০১৮ সাল থেকে ফিশারীতে আমি কয়েকজন কর্মচারি নিয়োগ দেই। ২০১৯ সালে নতুন করে ফিশারীতে আরো ৫লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করি। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৪-১৫ লক্ষ টাকা হবে। রানু ও জানু আমাকে টাকার হিসাব ও টাকা পরিশোধ করতে বিলম্ব করলে আমি আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে মুরব্বীয়ানদের অবহিত করি। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সহযোগি মফিজুর ও ইবরুর নেতৃত্বে চলতি বছরের ১৪ মে আমার মালিকানাধীন ৯০ শতক ভূমিতে ৪৫ হাজার টাকা ক্ষতি করে। তারা আমার বাড়িতে থাকা মূল্যবান গাছও কেটে নেয়। এসব ঘটনা উল্লেখ করে চলতি বছরের ১৫ মে আমি বাদি হয়ে রানু, জানুসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে ওসমানীনগর থানায় অভিযোগ দাখিল করি। ওসমানীনগর থানার এসআই আরিফ রেজা সরজমিন তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পান। কিন্তু পুলিশ আমার অভিযোগটি এফআইআর না করে নন এফআইআর প্রসিকিউসন করেন। এই প্রসিকিউসন চলমান থাকাবস্থায় পরিকল্পিতভাবে চলতি বছরের ১৪ জুন রানু ও জানুর নেতৃত্বে তাদের সহযোগিরা সন্ত্রাসী কায়দায় অস্ত্র-স্বস্ত্র নিয়ে আমার ফিশারীর দায়িত্বে কর্মচারিদের রশি দিয়ে বেঁধে মারপিট ও ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রায় ১৪-১৫ লক্ষ টাকার মাছ লুট করে নিয়ে যান। এসময় তারা ফিশারীতে বিষ প্রয়োগ করলে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকার মাছ মরে যায়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মুরব্বীয়ানদের এঘটনাটি অবহিত করলে তারা আমাকে আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণের পরামর্শ দেন। চলতি বছরের ১৪ জুলাই আমি বাদি হয়ে রানু ও জানুসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করি, ওসমানীনগর সিআর মামলা নং- ৮৬। ওই মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ওসমানীনগর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত।

মহলের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে মামলার মূল আসামীদের বাদ দিয়ে পুলিশ প্রতিবেদন দেয়ার চেষ্টা করছেন। বিষটি জানতে পেরে আমি সিলেটের পুলিশ সুপারের স্মরনাপন্ন হই। রানু ও জানু আমার ফিশারীতে গিয়ে আমাকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিয়ে বলে- মামলা তুলে না নিলে আমি-আমার পরিবারের সদস্য এবং মামলার স্বাক্ষি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রাণে হত্যা করা হবে। এতে প্রতিবাদ করলে তারা আমার ফিশারীতে থাকা কর্মচারিদের মারপিট করতে উদ্যত হলে পাশ্ববর্তী লোকজন এগিয়ে এসে আমাদেরকে রক্ষা করেন।

হুমকির ঘটনায় আমি বাদি হয়ে রানু ও জানুসহ ১১জনকে অভিযুক্ত করে ১৬আগস্ট আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। ওসমানীনগর বিবিধ মামলা নং-৮২/২০। একই বিষয়ে ২৬ আগস্ট আমি সিলেটের পুলিশ সুপারের লিখিত অভিযোগও দেই।

আমার দায়ের করা মামলাগুলো ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করতে এবং আমার পাওনা টাকা আত্মসাৎ করার হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে রানু ও জানু আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন। রানু ও জানুর আরেক ভাই মানসিক ভারসাম্যহীন হামদু মিয়া ২০১২ সালের ১২ আগস্ট তারিখ থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। হামদু মিয়া এর আগেও কয়েকবার নিখোঁজ হয়েছিলেন। নিখোঁজের বিষয়ে ২০১২সালের ২সেপ্টেম্বর রানু মিয়া ওসমানীনগর থানায় একটি জিডি করেন। তাদের হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নিখোঁজের বিষয়টিকে গুমের নাটক সাজিয়ে রানু বাদি হয়ে আমিও আমার দুই প্রবাসী ভাইসহ ৪জনকে অভিযুক্ত করে চলতি বছরের ২০সেপ্টেম্বর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই’র কাছে তদন্তাধীন আছে। এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থা সহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।