সময়ের কাঙ্খিত প্রশ্ন কোথায় বিএনপি? -সোয়ালেহীন করিম চৌধুরী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ৩০ ২০২১, ০৫:২৭

আপনারা যারা বিএনপি কোথায় বলে আওয়ামী মিডিয়ার মুখে তুলে দেয়া প্রোপাগান্ডায় শরিক হয়ে চিৎকার দেন তাদের জন্য একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান দিচ্ছি-
২০০৯ থেকে ২০১৯ এই ১০ বছরে জেল কাস্টডিতে নির্যাতনে মারা গেছে বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী, গুমের সংখ্যা এই অংকের কাছাকাছি। বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে এক লাখের ওপরে রাজনৈতিক মামলা হয়েছে এবং সেখানে আসামি করা হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ নেতাকর্মী। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ১৯৬ জন এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং অথবা কাস্টোডিয়াল ডেথের শিকার হয়েছে। ২০১৯ সালে হয়েছে ৩৮৮ জন, ২০১৮ সালে হয়েছে ৪৬৬ জন, ২০১৭ সালে হয়েছে ১৬২ জন, ২০১৬ সালে হয়েছে ১৯৫ জন। ২০২০ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের করা পরিসংখ্যান এটি।

তারপরও আপনারা বলবেন বিএনপি কোথায়? এতে আমরা ক্ষুব্ধ নই। কারণ বিএনপির মতো একটি বড় দলের প্রতি আপনাদের প্রত্যাশা বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সব অভিযোগের তীর বিএনপির দিকে দিলে এটা সুবিচার হবে কিনা ভেবে দেখবেন।

আমরা যে চিৎকার করে কাঁদতে চেয়েও কাঁদতে পারছি না এই কথা আপনাদের কিভাবে বুঝাই। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম অথবা আমার বন্ধু দিনারের পরিবার যখন তাদের সন্তান, পিতা বা স্বামীর জন্য অপেক্ষায় থাকে তখন আমরা কিছু বলতে পারি না। কি অপরাধ ছিলো নুরুর? যাকে রাতের অন্ধকারে অবুঝ সন্তানের কাছ থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিলো? অথবা জনির? যে অনাগত সন্তানের দোহাই দিয়েও বাঁচতে পারে নি। ১৭ টি তপ্ত বুলেটে তার বুক ঝাঁজরা করে দেয়া হয়েছিলো। এইতো সেদিন প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় আমাদের ছাত্রদলের এক কর্মীকে বাসায় না পেয়ে তার তিন ভাইকে তুলে নিয়ে যায় আওয়ামী পুলিশ। আপনারাই বলুন কি জবাব দিবো আমরা পরিবারগুলোকে?

তারপরও আপনারা প্রশ্ন করবেন বিএনপি কোথায়? আপনারা কি জানেন কেনো একজন নাসির আহমেদ পিন্টুকে অকালে চলে যেতে হলো? ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একজন ইসহাক সরকার অথবা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম কেনো বছরের পর বছর জেলে বন্দি? তাদের সন্তানদের আমরা কোনো জবাব দিতে পারি না। আপনারা কি জানেন মামলা হামলায় জর্জরিত বিএনপির কতো হাজার নেতাকর্মী এলাকা ছাড়া? পরিবার, ব্যাবসা, বাণিজ্য সব ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় কতো নেতাকর্মী ঢাকায় এসে কায়িক পরিশ্রম করে মানবেতর জীবনযাপন করছে?

আপনারা জানেন না, জানার প্রয়োজনও হয়তো বোধ করেন না। এ দেশ নয় মাসে স্বাধীন হয়েছিলো কিন্তু বিএনপি গত প্রায় এক যুগ যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। বিএনপিকে তিলেতিলে শেষ করে দেয়ার চেষ্টা চলছে। সত্তুরোর্ধ একজন বয়োবৃদ্ধ মহিলাকে সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে বন্দী করে রাখা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার কোনো সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। চল্লিশ বছরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের করে দেয়া হয়েছে। তাঁর সন্তানদের এমন নির্যাতন করা হয়েছে যার কারণে এক সন্তানকে অকালে চলে যেতে হয়েছে। অথছ দেশের কথা চিন্তা না করে একটু আপোষ করলেই তিনি রাজকীয় জীবণ অতিবাহিত করতে পারতেন। হায় আফিসোস!! সেই আপনারা প্রশ্ন করেন বিএনপি কোথায়? অথছ বিএনপিকে শেষ করে দিতে পারলে অথবা ভাঙ্গতে পারলে বাকীদের কাউকে স্বাধীনতা বিরুধী আর কাউকে জঙ্গি তকমা লাগিয়ে শেষ করে দেয়া তাদের কাছে কোনো ব্যাপারই নয়। এতে আন্তর্জাতিক পূর্ণ সমর্থনেও কোনো সমস্যা হবে না তাদের। একবারও কি গভীর ভাবে এটা ভেবে দেখেছেন?

তারপরও আমরা হতাশ নই। ইতিহাস সাক্ষী ফ্যাসিজম বেশীদিন টিকে থাকে না। অন্ধকার যতো গভীর হয় সূর্যোদয়ের আকুতি ততো তীব্রতর হয়। শুধু বুকে সাহস আর ধৈর্যধারণ করে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। দেশপ্রেমিক শক্তির মাঝে ভুলবুঝাবুঝি হয় এমন কথা, এমন কাজ এড়িয়ে চলতে হবে। বুদ্ধিমত্তার সাথে আগাতে হবে। মনে রাখবেন আমরা মোকাবেলা করছি বিশ্বের অন্যতম জঘন্য ফেসিস্ট শাসককে। বিশ্বাস করুন রক্তের সিঁড়ি বেয়ে বিজয় আসবেই ইনশাআল্লাহ।

(লেখকঃ সাবেক সাধারণ সম্পাদক, যুক্তরাজ্য যুবদল)