সময় টিভি শুধু মাওলানা মাহফুজুল হককে নয়, গোটা আলেম সমাজকেই অপমানিত করেছে

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ২২ ২০২০, ০২:১৭

।। মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়া ।।


প্রত্যেক পেশাজীবীর পেশাগত নীতি নৈতিকতার সীমারেখার ভিতর থাকতে হয়। এ সীমারেখা অতিক্রম করলেই সে অসৎ, অনৈতিক হয়ে যায়। অসৎ, অনৈতিক হলে সংশ্লিষ্ট পেশার প্রতি সর্বসাধারণের ইতিবাচক মনোভাব নেতিবাচকে রূপান্তরিত হয়। তাই পেশার মর্যাদা রক্ষায় পেশাজীবীর দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হয়।

ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া থেকে বাস্তব ও ন্যায়সঙ্গত সংবাদের প্রত্যাশা রাখে সকলে। জুলুম, অন্যায়, অবিচার, অপশাসনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা কামনা করে। সত্য ও ন্যায়ের প্রচারের আশা রাখে।

কি প্রয়োজন ছিল মাওলানা মাহফুযুল হকের নামে মিথ্যা ফোনালাপ সম্প্রচার করার? মাওলানা মাহফুযুল হকের ভয়েস তো আর অপরিচিত নয়! এ ভয়েসের সাথে এ দেশের অজস্র মানুষ পরিচিত। এটা জালিয়াতি। এটা মহাপ্রতারণা, শঠতা, ধোঁকাবাজি।

সময় টিভির কথিত ফোনালাপ সম্প্রচার ধর্মীয় ব্যক্তিদের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ করার ইঙ্গিত বহন করে। ধর্মীয় ব্যক্তিদের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারলেই ধর্মের প্রতি অনিহাভাব তৈরির পথ সুগম হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হবে। বহু আগে থেকেই ধর্ম, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করার জন্য বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে নানা কৌশলে কাজ করা হচ্ছে। আজকাল এ ময়দানে কতিপয় ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া উলঙ্গভাবে অপতৎপরতায় লিপ্ত। কয়েকটি টিভি চ্যানেল টকশোর ছদ্মাবরণে ইনিয়ে বিনিয়ে, ছলেবলে কৌশলে তাদের হেয় করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।

মাওলানা যুবায়ের আহমদ আনসারী রহ. একজন পপুলার ধর্মীয় আলোচক। দীর্ঘদিন জটিল রোগে ভুগছিলেন। এ কারণেও ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ভালোবাসা তার প্রতি বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছিল। যার প্রমাণ তার জানাযার নামায। মরহুমের পরিবার, প্রতিষ্ঠান এমনকি স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বারণ করা পরও হাজার জনতা পদব্রজে মাইলের পর মাইল অতিক্রম করে তাঁর জানাযায় শরীক হয়েছেন। যা সংশ্লিষ্টদের ধারণার বাইরে ছিল। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বল প্রয়োগ করতে গেলে হয়তো এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো যা জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ থেকে আরো বিপদজনক হয়ে দাঁড়াত। এই ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার সাম্প্রতিক কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা কারো অজানা থাকার কথা নয়। গোটা বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, সেসময়ে নবীনগরবাসী কয়েকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মেতে উঠেছিল। জীবন্ত মানুষের পা কেটে উল্লাস পর্যন্ত করেছে এরা। যদিও এসব বিষয় নিয়ে ঐসব মিডিয়াকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি।

একটি টিভি চ্যানেল তার জন্মলগ্ন থেকেই ইসলাম, মুসলমান, ইসলামী অনুষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানকে ভিন্নরূপে উপস্থাপনে সচেষ্ট। মসজিদে জামায়াতবদ্ধ নামায নিষিদ্ধে করোনা সংক্রমণের কথা বলে কতোই না মায়াকান্না করল। করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের পুড়িয়ে ফেলার ব্যপারে জনমত তৈরিতে কতোই না চেষ্টা করেছিল। একজন মুসলিম যেভাবে, যে রোগেই মারা যাক না কেন, তাকে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক দাফন-কাফন করতে হবে। অগ্নিদগ্ধ করার কোনো বৈধতা নেই। ইউরোপ, আমেরিকায় যেখানে হাজার লোক মারা যাচ্ছে সেখানেও তো না পুড়িয়ে কবরস্থ করা হচ্ছে। তাদের এ অপতৎপরতা অন্য ধর্মীয় রীতিতে মুসলিমের শেষকৃত্য করার দিকে নিয়ে যাওয়া ছাড়া কিছুই নয়।

করোনা প্রকোপের কারণে জরুরী অবস্থা ঘোষিত হওয়ার পর হাটে-বাজারে, শিল্প এলাকায় গণসমাবেশ নিয়ে বর্ণচোরা মিডিয়াগুলো নীরব। ত্রাণচোর, মোনাফাখোর, মজুদদার, কালোবাজারি, আরৎদারদের নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, তাদের ব্রতই হলো ইসলাম, ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের জাতির সামনে বিতর্কিত করা।

এ কারণে এসব মিডিয়াকে হলুদ মিডিয়া এবং সংবাদকর্মীকে হলুদ সাংবাদিক বলা হয়। এরা সাদাকে সাদা বলতে পারে না। কালোকে কালো বলতে পারে না। ‌সত্যকে সত্য বলতে পারে না। মিথ্যাকে মিথ্যা বলে সৎ সাহসের পরিচয় দিতে পারে না।

এই ঘটনায় একজন মাহফুযুল হকের নামে মিথ্যাচার নয়, বরং গোটা আলেম সমাজকেই অপমানিত করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না হলে তাদের দুঃসাহস আরো বেড়ে যাবে। মাহফুযুল হকের ন্যায় বহু আলেমের নামে মিথ্যাচার করা হবে।

সরকারেরও দায়িত্ব হলো, যে বা যারা মিথ্যা, অসত্যের সম্প্রচার করে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার অপচেষ্টায় রত হবে, তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।