শে’আরে ইসলাম ‘সালাম’ -হুসাইন আহমদ মিসবাহ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

অক্টোবর ২১ ২০২০, ১৭:০৪

‘সালাম’ বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা. এর সুন্নত। সালাম আদান-প্রদানে বিশেষ উপকারিতা রয়েছে। যে সালাম দেবেনা, সে বিরাট উপকার থেকে বঞ্চিত হলেও অপরাধী হবেনা। তবে কোন মুসলমান যদি ‘সালাম’ সুন্নত সেটা অস্বীকার করে, বা ‘সালাম’ নিয়ে ব্যাঙ্গ করে, বাজে মন্তব্য করে, তাহলে তার ঈমান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে! সে তাওবা না করলে সে খাটি মুমিন হয়ে পারবেনা। কারণ নবী সা. এর যত সুন্নতে মুস্তাহাব্বা আছে, সেগুলো পালন করা ইচ্ছাধীন হলেও, ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ না করে বিশ্বাস করা মুসলমানদের জন্য ফরজ।

বিশ্বাস  উপলব্দির সীমাবদ্ধতা, অনুশীলনের অভাব, প্রাশ্চাত্য কালচারের প্রভাবে, সালাম নিজ দেশেই পরবাসী। নব্য সালাম, আধুনিক সালাম, ভার্চুয়াল সালাম, লৌকিক সালাম, ভীত সালাম, স্বার্থ সালাম, নানা সালামের যাতাকলে “সালাম” আজ অসহায়। পাশাপাশি রয়েছে কিছু জ্ঞানপাপীদের রয়েছে ‘সালাম’ নিয়ে মারাত্মক এলার্জি। তাই সালাম নিয়েই চলমান প্রয়াস।

পরিচয়:
সালাম শব্দের অর্থ শান্তি। ইসলামের পরিভাষায়- পরস্পরের শান্তি, কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও ভালবাসা সৃষ্টির অভিলাষে, আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুল সা. নির্দেশিত বাক্যের মাধ্যমে সম্ভাষণই হল সালাম।

সালামের সূচনা:
আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আদম আ. কে সালামের শিক্ষা দেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, “রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ পাক আদম আ. কে সৃষ্টি করে বললেন, যাও ফেরেশতাদের দলকে সালাম দাও এবং মন দিয়ে শুন তারা তোমার সালোমের কি জবাব দেয়।এটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের সালাম এবং সালামের জবাব। তখন আদম আ. ফেরেস্তাদের কাছে গিয়ে বললেন, “আস্‌সালামু আলাইকুম”। ফেরেশতাগণ জবাব দিলেন, “ওয়া আলাইকুমুসসালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহ”। ফেরেশতাগণ রাহমাতুল্লাহ বৃদ্ধি করলেন।(মিশকাত, কিতাবুল আদাব, বাবুস সালাম, হাদীস নং-৪৬২৮।

অন্যান্য নবীদের জীবনে সালাম:
আল্লাহ পাক বলেন, “অবশ্যই আমার প্রেরিত ফেরেশতারা ইব্রাহীম আ. এর কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিলেন, তারা বললেন, ‘সালাম’ তিনিও বললেন, ‘সালাম’।” (সুরা হুদ আয়াত নং-৬৯)
আল্লাহ পাক অন্যত্র বলেন, “হে নুহ! আমার পক্ষ হতে সালাম এবং আপনার নিজের এবং সঙ্গীয় সম্প্রদায়গুলোর উপর বরকত সহকারে অবতরণ করুন।” (সুরা হুদ ৪৮)

সালামের গুরত্ব ও ফযিলত:
আমরা যে বস্তুরই গুরুত্ব অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছি, যে কোন মূল্যে তাকে আকড়ে ধরার চেষ্টা করেছি। সালামের গুরুত্ব বুঝতে পারলে, সালাম আর নিজ আঙ্গিনায় প্রবাসী হবেনা। তাই দেখা যাক, ইসলামে সালামের অবস্থান কোথায়-
ক. সালাম প্রনঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন, “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যাতীত অন্য কারও গৃহে, গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে ‘সালাম’ না দিয়ে প্রবেশ করো না”। (সূরা নুর-২৭)
খ. আল্লাহ পাক অন্যত্র বলেন, “যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি ‘সালাম’ বলবে। এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন”।(সূরা নুর-৬১)
গ. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আ’স রা. হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল সা. জিজ্ঞাসা করল, ‘সর্বোত্তম ইসলামী কাজ কি?’ তিনি বললেন, “(ক্ষুধার্তকে) অন্নদান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে সালাম পেশ করবে”।
ঘ. হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, “তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্য়ন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ না তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা গড়ে উঠবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলে দেব? যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসতে লাগবে? (তা হচ্ছে) তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালাম প্রচার কর।
ঙ. রাসুল সা.বলেন, পারষ্পরিক সালাম বিনিময়ে পারষ্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।(মিশকাত-৪৬৩১)
চ. অন্য হাদীসে রাসুল সা. বলেন, “এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের ৬টি অধিকার রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল যখন তার সাথে সাক্ষাত হবে তখন তাকে সালাম দিবে”।(মিশকাত-৪৬৩০)
ছ. সালাম না দেয়া একটি কৃপণতা । রাসুল সা. বলেন, “যে সালাম দিতে কার্পন্য করে তার চেয়ে বেশী কেউ কৃপণ নয়”। (মিশকাত-৪৬৬৫)
সালাম সংক্রান্ত অসংখ্য আয়াত ও অগনন হাদীস থেকে এখানে মাত্র ২টি আয়াত ও কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হল। আয়াতদ্বয়ের আল্লাহ পাক বলেছেন, কারো গৃহে কিংবা নিজের গৃহে প্রবেশ করতে হলে পূর্বে সালাম দিতে হবে। আর হাদীসে রাসুল সা. সালামকে ইসলামের সর্বোত্তম ইবাদত ও জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম আখ্যায়িত করেছেন। বিশ্বনবী সা. সালাম পরস্পারের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সালামকে মুসলমানের অধিকার ধার্য্য করেছেন।

সালাম প্রদানকারীর মর্যদা:
প্রথমে এই ব্যাপারে একটি বিভ্রান্তির নিয়ে কিছু আলোকপাত করি। আমাদের কিছু মুরব্বী, আকাবীর, নেতা, উলামা হযরাতের চাল-চলনে মনে হয়, তারা অন্যের সালাম গ্রহণের জন্য অপেক্ষমান থাকেন। তাদের কাউকে সাধারণত সালাম দিতে দেখা যায়না। সন্তুষ্টিচিত্তে কেবল সালামের জবাব দেন। জুনিয়ন বা ছাত্রদের কেউ সালাম না দিলে বেয়াদব উপাধী দিতে এরা কোন কার্পণ্য করেন না। বাস্তবে এরূপ চিন্তা-চেতনা একেবারেই ভুল ও ইসলামী আদর্শ বিরুধী।
পৃথিবীর সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বশ্রেষ্ট জ্ঞানী-গুণী সম্মানী মহামানব বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা. কে কেউ কোনদিন সরাসরি সালাম দিতে পারেনি, কারণ প্রিয়নবী সা. সাক্ষাতে প্রথমেই সালাম দিয়ে দিতেন। সাহাবায়ে কেরামসহ পৃথিবীর সব কিছুইতো ছিল নবী সা. থেকে জুনিয়র এবং কম মর্যাদার। তাহলে যারা জুনিয়র বা ছাত্র থেকে সালামের জন্য অপেক্ষা করেন, তাদের এই চিন্তা-ভাবনা কি নবী সা. এর আদর্শের পরিপন্থী নয়? তারা কি নিজেদেরকে বিশ্বনবী থেকেও …….. মনে করেন!?
সালামের রীতিহল, মুসলমার পরস্পরকে সালাম দেবে। স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী স্ত্রীকে, ছোট বড়কে, বড় ছোটকে, ছাত্র শিক্ষককে, শিক্ষক ছাত্রকে, কমী নেতাকে, নেতা কর্মীকে সালাম দেবে। বিশ্বনবী সা. শিশুদেরকেও সালাম দিতেন। যেমন-
عَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أنَّهُ مَرَّ عَلَى صِبْيَانٍ، فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ، وَقَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَفْعَلُهُ. متفقٌ عَلَيْهِ
হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি কতিপয় শিশুর নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাদেরকে সালাম দিলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরূপ করতেন। (বুখারি-৬২৪৭, মুসলিম-২১৬৮)।
সালাম গ্রহণকারী থেকে সালাম প্রদানকারীর মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশী। রাসুল সা. বলেন-
وَعَنْ أَبي أُمَامَةَ صُدَيِّ بنِ عَجلاَنَ البَاهِلِي رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: إنَّ أَوْلى النَّاسِ بِاللهِ. مَنْ بَدَأهُمْ بِالسَّلامِ َ .
الرَّجُلاَنِ يَلْتَقِيَانِ أَيُّهُمَا يَبْدَأُ بِالسَّلاَمِ؟ قَالَ أَوْلاَهُمَا بِاللهِ تَعَالَى : قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، عَن أَبي أُمَامَةَ رضي الله عنه
হযরত উমামাহ সুদাই ইবনে আজলান আল বাহেলী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহর নিকটবর্তী সেই, যে লোকদেরকে প্রথমে সালাম করে।’’
তিরমিযিও আবূ উমামাহ কর্তৃক বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, জিজ্ঞাসা করা হল, “হে আল্লাহর রসূল! দু’জনের সাক্ষাৎকালে তাদের মধ্যে কে প্রথমে সালাম দেবে?’ তিনি বললেন, যে মহান আল্লাহর সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে।’’৷ (তিরমিযি-২৬৯৪, আবু দাউদ-৫১৯৭, আহমদ- ২১৬৮৮)
আরো অগনন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, সালাম দাতার মর্যদা বেশী। সালাম গ্রহীতা থেকে সালাম দাতার সাওয়াবও ১০ গুণ বেশী। তাই কারো মনে সালাম গ্রহণের খাহেশ থাকলে সেটা পরিহার করে, সালাম প্রদানের মানসিকতা তৈরী করা উচিত ।

সালাম দানের ভুল রীতি:
প্রথমে এই সংক্রান্ত কিছু কুসংস্কার নিয়ে কথা বলবো। অনেককে দেখা যায় সালাম দিতে গিয়ে সালামের বাক্যকে বিকৃত করে বলেন, সামালেকুম, স্লামালেকুম, স্লামালাইকুম, আস্লামালেকুম, আস্লামালাইকুম, সামেকুম, সালাম ইত্যাদি। সালামের বাক্যগুলো বিকৃত করা হারাম। যেমন হাদীসে আছে, নবী করীম সা. বলেন, ইহুদীরা যখন তোমাদেরকে সালাম দেয় তখন তারা বলে, আস-সামু আলাইকা (অর্থ, তোমার ধ্বংস হোক) এর জওয়াবে তুমি বলবে ওয়া আলাইকা।(মিশকাত-৪৬৩৬)
কাউকে আবার দেখা যায় সালামের পরিবর্তে পশ্চিমা ষ্টাইলে হাত উঠান। হাত উঠানোকে আর যাই বলা হোক, ইসলামে সেটাকে সালাম গণ্য করা হয়না।
কেউ কেউ আবার সালামের নামে পায়ে হাত দেন, পা ছুঁয়ে সেই হাতকে নিজ কপালে বা বুকে লাগান, এটাকে ইসলামের সালাম বলেনা। সেটাকে কদমবুচি বলা যেতে পারে। তবে তাতেও শর্ত আছে।
জবাব দানের বেলায়ও অনেককে দেখা যায় যে, মুখে কিছু না বলে কেবলমাত্র মাথা নাড়ান, কখনো হাত তুলেন, সেটাও ইসলামী রীতি নয়।

সালামের বাক্য:
ইসলামী শরীয়তের সালামের সর্বনিম্ন বাক্য হচ্ছে, “আস্‌সালামু আলাইকুম” বর্ধিত করে, “আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” আরো বাড়িয়ে, “আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু”। সমস্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা. এভাবেই সাহাবায়ে কেরাম রা. কে সালাম শিক্ষা দিয়েছেন।

সালামের জবাব:
সালাম দেওয়া সুন্নত হলেও সালামের জওয়াব দেয়া ওয়াজিব। সালাম না দিলে বিরাট সাওয়া ও উপকার থেকে বঞ্চিত হলেও কেউ অপরাধী হবেনা, প্রক্ষান্তরে সালামের জবাব না দিলে সাওয়া ও উপকার থেকে বঞ্চিত হবার পাশাপাশী ব্যক্তি ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার জন্য অপরাধী হবেন। সালামের উত্তরে সালাম দাতার বাক্যের চেয়ে বর্ধিত করে বলা উচিত। যেমন- “আস্‌সালামু আলাইকুম” এর জাবাবে, “ওয়া আলাইকুমুস সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলা। “আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” এর জাবাবে, “ওয়া আলাইকুমুস সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” বলা। “আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” এর জাবাবে, “ওয়া আলাইকুমুস সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া মাগফিরাতুহু” বলা উচিৎ। নুন্যতম সালামদাতা যা বলেছেন, সে পরিমাণ বলতে হবে। যেমন “আসসালামু আলাইকুম” এর জবাবে “ওয়া আলাইকুমুস সালাম” বলতে হবে।
আলোচনা, ওয়াজ, চিঠি বা যেকোনো মাধ্যমে সালাম দিলেও তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। দূতের মাধ্যমে সালাম পাঠালে মুস্তাহাব হলো দূতকেও সালাম দেওয়া এবং এভাবে বলা, ‘ওয়া আলাইকা ওয়া আলাইহিস সালাম।’ হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে এক ব্যক্তি এসে বললেন, ‘আমার পিতা আপনাকে সালাম দিয়েছেন।’ এ কথা শুনে রাসুলে আকরাম (সা.) বললেন, ‘তোমার ওপর এবং তোমার পিতার ওপর সালাম।’
সমষ্টিগত ভাবে সালাম দিলে সবার মধ্যে থেকে একজনে সালামের জবাব দিলে সকলের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয়ে যায়। কেউ জবাব না দিলে সবাই পাপী।
কেউ সালাম দিলে সালামের উত্তর মৌখিক দিতে হবে। মাথা বা হাতের ইশারা-ইঙ্গিতে জবাব দিলে উত্তর আদায় হবে না। নিকটবর্তী ব্যক্তিকে শুনিয়ে মৌখিক জবাব দিতে হবে। তবে দূরবতী থাকলে ইশারা-ইঙ্গিতে উত্তর দেয়া যাবে।
বধির ব্যক্তিদের সালাম দেওয়ার সময় মুখে বলার সঙ্গে সঙ্গে হাতে ইশারা করতে হবে।

কখন সালাম দেওয়া অনুচিত:
সালাম ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার মাধ্যমে পারস্পারিক ভ্রাতৃত্ব, মমত্ব, ভালবাসা তৈরী হয়। কিন্তু প্রতিটি কাজের বিধান ও সম্পাদনের সময় রয়েছে। ভাল কাজ অস্থানে বা নীতি বহির্ভূত ভাবে করলে সেটা মন্দে রূপান্তরিত হয়ে যায়। তেমনি ভাবে নিম্নের ১০টি অবস্থায় “সালাম” দেওয়া উচিত নয়!
০১. নামাজ পড়া অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
০২. ইস্তিঞ্জারত অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
০৩. অযুরত অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
০৪. খাবার খাওয়া অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
০৫. কুরআন তিলাওয়াত করা অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
০৬. জিকির ও মোরাকাবায়রত অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
০৭. ওয়াজ ও নসীহত শুনা অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
০৮. তালীমি মজলিসে মশগুল অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
০৯. আযানরত অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
১০. হিসাব নিকাশ বা গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজেরত অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

অমুসলিমদের সালাম দেওয়া:
ইসলাম অন্য ধর্মালম্বীদেরকে সবচেয়ে বেশী সম্মান দেয়। তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে যথেষ্ট সচেতন। বিধি মোতাবেক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ইসলাম গুরুত্বারোপ করেছে। কিন্তু ‘সালাম’ ইসলামের একান্ত পরিভাষা। তাই ইসলামী শরীয়তের বিধানে অমুসলিমদেরকে সালাম দেওয়া যাবে না। যদি কোন অমুসলিম কাউকে সালাম দিয়ে দেয়, তাহলে জবাবে বলতে হবে শুধু ‘ওয়া আলাইকুম’।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, “তোমরা ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকে প্রথমে সালাম দিবে না, তবে যদি তারা সালাম দেয় তবে শুধু ‘ওয়া আলাইকুম’ (আপনার উপরেও) বলে উত্তর দিতে হবে”। (বোখারী, মুসলিম, মিশকাত হা-৪৬৩৫, ৪৬৩৭)।
হযরত আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “ইয়াহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে প্রথমে সালাম দিয়ো না। যখন পথিমধ্যে তাদের কারো সাথে সাক্ষাৎ হবে, তখন তাকে পথের এক প্রান্ত দিয়ে যেতে বাধ্য করো”। (মুসলিম-২১৬৭, তিরমিযি-২৭০০, আবু দাউদ-১৪৯, মুসনাদে আহমদ-৭৫১৩,৭৫৬২, ৮৩৫৬, ৯৪৩৩, ৯৬০৩, ১০৪৪১৮)
হিন্দুদের বা কোন অমুসলিমকে সালাম দেওয়া যাবে না। তবে শিষ্টাচারমূলক সম্ভাষণ করা যাবে। যেমন আদাব ইত্যাদি। ‘আদাব’ শব্দটি আরবী, যার বাংলা অর্থ শিষ্টাচার বা ভদ্রতা। আর সালাম অর্থ শান্তি। মুসলমান পরস্পরকে সালাম দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ্য হতে তার উপরে শান্তি বর্ষণের দো’আ করেন। হিন্দুগণ বা অমুসলিমরা ঈমানদার নন, বিধায় তাদেরকে ইসলামী তরীকায় সালাম দেওয়া যাবে না। আবার ইসলামী আক্বীদা বিরোধী কোন শব্দ, বাক্য বা ইঙ্গিত করা যাবে না। যেমন নমষ্কার বা নমস্ত, যার অর্থ আমি আপনার প্রতি মাথা ঝুঁকালাম, আপনি কবুল করুন। একই ভাবে কারু প্রতি সম্মানার্থে মাথা নিচু করা কিংবা পিঠ ঝুঁকানো যাবে না।
(যাদুল মা’আদ ২/৩৮৮, মাজমূআ ফাতাওয়া উছায়মীন ৩/৩৩, আল-মওসূআতুল ফিক্বহিইয়াহ ২৫/১৬৮)
যদি কোন স্থানে মুসলিম ও অমুসলিম একত্রিত থাকে, তাহলে সেখানে বলতে হবে, “আসসালামু আলা মানিত্তাবাআল হুদা”।

নারীদের সালাম দেওয়া:
নারীদেরকে সব চেয়ে বেশী সম্মান দিয়েছে ইসলাম। দিয়েছে তাদেরকে মানুষ হিশেবে স্বীকৃতি। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ থেকেও বেশি মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম নারীদেরকে। তাই সালামের অধিকার থেকেও ইসলাম নারীদেরকে বঞ্চিত করেনি। নারীদেরকে সালাম দেওয়া জায়েয। যেমন-
عَن أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: مَرّ عَلَيْنَا النَّبِىُّ ﷺ فِى نِسْوَةٍ فَسَلَّمَ عَلَيْنَا. رواه أبوداود َ
হযরত আসমা বিনতে ইয়যিদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একদা নবি করীম সা. আমাদের একদল মহিলার নিকট দিয়ে পার হওয়ার সময় আমাদেরকে সালাম দিলেন।”
(তিরমিযি-২৬৯৭, আবু দাউদ-৫২০৪, ইবন মাজাহ-৩৭০১, মুসনাদে আহমদ-২৭০১৪, দারেমি-২৬৩৭)
তবে নারীদেরকে সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে কখনো শরীয়তের পর্দা বিধান লঙ্গন করা যাবে না। মহিলারা পরস্পরের মাঝে সালাম বিনিময় করবেন। পুরুষগণ নিজ নিজ মুহাররিমাত মহিলাদেরকে সালাম দেবেন। গায়রে মুহরিমের সাথে সালাম আদান-প্রদান করা যাবেনা। কারণ দেহকে পর্দায় রাখা যেভাবে ফরজ, কন্ঠস্বরকে পর্দায় রাথা ঠিক তেমনি ভাবে ফরজ। সালাম দেওয়া সুন্নত আর পর্দা মেনে চলা ফরজ। সুন্নতের জন্য ফাজ লঙ্গন করা যাবেনা।
যেমন আল্লাহ বলেন, “হে নবী পত্নীগণ, তোমরা অন্য নারীদেরমত নও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলনা, যার ফলে সে ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যধি রয়েছে। তোমরা সংযত কথা-বার্তা বল। (সুরা আহযাব, আয়াত নং-৩২)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই সুন্নতের উপর আমল করার তাওফিক দিন। আমীন।