শুক্রবারের বিশেষ আয়োজন: শিল্প-সাহিত্য

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ১০ ২০২০, ১২:৫৯

ক বি তা


তোমাদের পূণ্যেই আমার ভরসা

সায়ীদ উসমান

আমাকে আঘাত করতে থাকো
হিংসার আগুন উগড়ে দিতে থাকো আমার উপর
কষ্ট পাবো না। আমার তো অভ্যেস হয়ে গেছে।

প্রতিবার যাওয়ার সময় লাথি মেরে যাও
মারো চর, থাপ্পড়। মন চাইলে কিল ঘুষিও মেরে দিয়ো দুয়েকটা
আমার কষ্ট হবে না। আমার তো অভ্যেস হয়ে গেছে।

যা নিয়েছো ছিনিয়ে, তাতো নিয়েছোই
আরো যা আছে, নিয়ে যাও। রাগ করবো না
এভাবে দান করতে করতে আমার অভ্যেস হয়ে গেছে।

আমাকে নিয়ে ঠোঁটকর্ম চালাতে চালাতে
দাঁতকর্ম করতে করতে এই যে তোমরা ক্লান্ত-শ্রান্ত
আহা! তোমাদের দেখলে আমার যে কী মায়া লাগে!
তোমরা তেরজন! তোমরাই আমার চোখের মণি!
আমি তো পূণ্যবান নই, তোমাদের পূণ্যেই আমার ভরসা।


আমি অন্ধ, বধির, বোবা
মাহমুদ সালিম

এই যে আমি অন্ধ বধির আড়াল হয়ে থাকি,
বোবা হয়ে হাত বাড়িয়ে চুপটি করে ডাকি।
লোকে বলে পাথর বোবা কয় না কেন কথা,
বলবে কি সে অন্তরে যার হাজার রকম ব্যথা।
একলা আমি থাকি বলে বোবা হয়ে চলি,
তাই তো আমি ন্যায়ের কথা কলম দিয়ে বলি।

হাসতে জানি বোবা হয়ে বাসতে জানি ভালো,
অন্ধ চোখে তবু ফোটে হরেক রকম আলো।
কানা আমি চোখ দেখেনা চোখের পাওয়ার নাই,
সত্য ন্যায়ের প্রতিশ্রুতি দিতে আমি চাই।
আমায় নিয়ে কত্তোকিছু কত লোকে বলে,
আমায় দেখে কতেক আবার সত্য পথে চলে।

এই যে আমি দিনের কানা বধির রাতের বেলা,
বধির বলে কেউ দেখে না করে অবহেলা।
বল দেখেছ খেলার মাঠে কেমন করে ঘুরে?
চাপ দিলে সে বেলুন হয়ে আকাশেতে উড়ে।
কানার চোখে কাঁদলে কি আর, আসবে বলো পানি?
যায় না দেখা কানার চোখে কত্ত দুঃখ গ্লানী।

সমাজ বলে আর বলো না সমাজপতির কথা
টাকায় নাকি সব চলে যায় আহ! সত্য অযথা।
ভাবছি এবার আর যাব না অবহেলার মাঠে,
যা আছে আজ নিয়ে বসি সত্য জানার পাঠে।
জানব আগে মানব পরে কেউ না মানুক তবে,
আমার জানা জানব আমি হৃদয় মাঝে রবে।

এই যে আমি আমার কথা বলে দিলাম ঘরে,
সত্য কথায় বিপদ নাকি মাথার উপর পড়ে।
যে যা বলুক বলে বেড়াক সত্যতে নেই শরম,
ন্যায়ের কথা বললে দেখি রাগ উঠে তার চরম।
মিথ্যেবাদীর গা জ্বলে যায় সত্য যখন আসে,
অন্ধ, বধির, কানা এবার ফ্যালফ্যালিয়ে হাসে।


বৈশাখে তুমি
ইলিয়াস সারোয়ার

টগর কেও ভাটে তুমি
জাভানিকা ছাপড়িতে
কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙেতে
লাল গোলাপের পাপড়িতে।

কনকচূড়ার মাঝে তুমি
স্বর্ণচাপার স্নিগ্ধতায়
সোনালুদের সোনার মালায়
উদয়পদ্ম শুভ্রতায়।

দীঘির জলে শাপলা তুমি
বেলি লিলির সুঘ্রাণে
গন্ধরাজের গন্ধে তুমি
পালাম বনপারুল প্রাণে।

পাদউকেদের হলদে রঙে
তুমি জারুল মিষ্টিতে
গোলাপচাঁপার গন্ধে রূপে
ফুলকলিদের সৃষ্টিতে।

ইলশেগুড়ি বৃষ্টি তুমি
নীল আকাশের কাল মেঘ
আমার জীবন মরণ তুমি
এই জীবনের সব আবেগ।

২৮.০৪.২০১২, ঢাকা।


দুঃস্বপ্নের তাবীর
মাহমুদুল্লাহ মুহিব

পৃথিবীতে মানবসংখ্যা
হ্রাস পাচ্ছে ক্রমশ—
চারদিকে হিংস্র শকুনের
পাখা ঝাপটানোর শব্দ;
অকস্মাৎ দুঃস্বপ্নের মত—
ভীষণ ভয় পাইয়ে দেয়।

ডানপাশে কুকুরের ঘেউঘেউ,
বাঁ-পাশে
আজদাহা এক প্রাণী অপেক্ষমাণ;
কাঙ্ক্ষিত শিকারের আশায়
জ্বলজ্বল করছে একজোড়া চোখ ।

ক্রমাগত প্রাগৈতিহাসিকের অন্ধত্বে
তলিয়ে যাচ্ছি—
মানবহীন ভয়ার্ত পৃথিবীপৃষ্ঠে,
গা শিউরে ওঠে বারবার।
হায়েনাদের চেচামেচির
ওপাশ থেকে হঠাৎ অশ্বের ধ্বনি—
তন্দ্রাচ্ছন্ন স্বপ্নের তাবীর!

পৃথিবী মানুষের হবে,
মানবময় পৃথিবী বিনির্মাণের জন্যই
শেষ সময়ের দ্বন্দ;
অতঃপর মানবরূপি পশুদের
পরাজয় নিশ্চিত।।


ভালোবাসি প্রিয়তমা
মোশারফ ওয়াহিদ ভূঁইয়া

কবে যে তোমাকে ভালোবাসিয়াছি প্রিয়তমা
আমার ঠিক জানা নেই!
তুমি আমাকে সত্যিই ভালোবেসেছিলে কি না,
এখনো ভালোবাসো কিনা,কোন জিজ্ঞাসা নেই
আমার,কোন কৈফিয়ত নেই।
এই জানি,শুধু আমি তোমাকে ভালোবাসি;
প্রচন্ড রকম ভালোবাসি।
আমার সকল তৃপ্তিতে তোমার ঢের অবদান পাই
আর তোমাতেই বর্তায় আমার সকল ব্যর্থতার দ্বায়।
কেন মুখফোটে বলেছিলে ভালোবাসি,
আবার কেন চলে গেলে?
থাক এসব কথা,
আমার হেরে যাওয়া প্রেমের অপূর্ণতা!

তোমাকে আমি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি;
প্রবাহমান নদী গুলোর অনন্তকাল বয়ে চলার ন্যায় ভালোবাসি
ফুলের বিলিয়ে দেওয়া নিস্বার্থ সুঘ্রাণের ন্যায় ভালোবাসি
কিংবা আকাশের বিশালতার সমান ভালোবাসি।
সেই তুমি এখন না থেকেও সমস্তদিন আমাদের কথা হয়,
তোমার ঘর্মাক্ত চুলের ঘ্রাণ,মায়াবী চোখ দুটো,
তোমার হাসিমাখা অথবা মলিন মুখ।
তোমার দেওয়া আদেশ অথবা আমার ঐতিহ্যকে বাদ দিয়ে
তোমার করে যাওয়া বারণ,
যতটুকু ভালোবাসলে তুমি যে একদিন আমার ছিলে।
ততটুকু ভালোবেসে চিরদিনের জন্যই আমাকে তোমার করে নিলে!



অ ণু গ ল্প



স্বদেশ প্রেমের গল্প

মাহমুদুল হাসান আরমান

হাঁটতে হাঁটতে অস্হির হয়ে একটা বটবৃক্ষের তলায় গিয়ে বসলো আবির।তেজস্বী  সূর্য ধীরে ধীরে শান্ত হতে চলেছে।মধ্যাহ্ন ভোজের পর ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিয়েছে সবাই।মৃদু বাতাসে বটপাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ।অলস দুপুরে এসে যেনো নেতিয়ে পড়েছে প্রকৃতি। মাঝে মধ্যে ঘুঘু পাখির ডাকে জেগে উঠছে চারদিক। তেতে ওঠা রোদ্দুর আর ঘন বনানীর রোদছায়া খেলা চলছে অনেক্ষণ।প্রকৃতি জুড়ে যেনো স্বর্গীয় আবহ বইছে এখন;কিন্তু আবিরের এসবে মন নেই কোন।ক্ষুধায় ওর পেট পিন পিন করছে।
শুধু পানিতে আর কয়দিন বাঁচা যায়!পেটের পোকাগুলো নাড়ি ভুঁড়ি কামড়ে ধরছে এখন।উঠতে,বসতে, চলতে কিছুতেই ভালো লাগছে না আর। অস্থির হয়ে পড়েছে আবিরের দেহমন।তবুও উঠতে হবে তাকে। নরপিচাসগুলো যে মরিয়া হয়ে খুঁজছে ওকে।কোন মতন সন্ধান পেলেই হলোএকবার।রক্ষে নেই আর। হায়েনাগুলো কি যে করবে!

আবির উঠে দাঁড়ালো।সঙ্গে নিয়ে আসা থলেটা কাঁধে নিয়ে আবার চলতে লাগলো আস্তে আস্তে।পাহাড়ের কোল ঘেষে একফালি রাস্তা।নীরব নিস্তব্ধ গোধূলি পেরিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়েছে প্রায়। যে করেই হোক সূর্য ডুবার আগেই পাহাড়টা পারি দিতে হবে। তাই একটু ঘন ঘন কদম ফেলতে লাগলো আবির।হঠাৎ আজানের শব্দে থমকে দাঁড়ালো সে।প্রথমে আঁচ করতে পারেনি খুব একটা।তাই পা টিপে টিপে আরেকটু সামনে এগুলো,হ্যাঁ,এইতো!ডান দিক থেকেই তো আসছে আওয়াজটা।আবিরের ক্লান্ত শরীরে হঠাৎ আনন্দের ঢেউ খেলে গেলো। সফরের একমাত্র সঙ্গি মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে সামনে চলতে লাগলো আবার।আজানের শব্দ ধরে কিছু দূর এগুতেই স্বদেশী ভাষায় কেউ এক জন চেঁচিয়ে উঠলো- এই কে?কেরে এখানে?একদম সামনে এগুবে না,গুলি করে দেবো বলছি।হঠাৎ ক্লাসিনকোভ তাক করে আবিরের সামনে লাফিয়ে পড়লো একজন।ওর পুরো শরীর ভালো করে চেক করে ক্যাম্পের ভেতরে ধরে নিয়ে গেলো।
আবিরের চেহারায় ভীতির কোন ছাপ নেই;কারন সে ভালো করেই জানে এটাই যে তার নিরাপদ যায়গা।আল্লাহ কুদরতি সাহায্যে তাকে এখানে পৌঁছে দিয়েছেন।আবির ক্যম্পের দায়িত্বশীলদের কাছে তার সব ঘটনা খুলে বললো।সে যে তাদেরই ফেলে আসা জাতি ভাই এটা বুঁজতে পেরে ওরা জড়িয়ে ধরলো আবিরকে।এলাকার সংবাদ জানার জন্য অনেকেই জড়ো হয়ে গেছে এতক্ষণে ওর চারপাশে।আবিরের মুখে রা বেরুচ্ছে না ক্ষুধায়।অনেক কষ্টে বললো-আমাকে থাকলে কিছু খাবার দিন,পেটের যন্ত্রনায় কথা বলতে পারছি না আর।

একজন কিছু রুটি আর পস্তা নিয়ে এলো।খানা শেষ হলে তাকে বিশ্রামে রেখে সবাই রুম খালি করে দিলো।

আবিরের যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে।সবার সঙ্গে নামাজ আদায় করে একজন সাথিকে নিয়ে বের হলো ক্যাম্পটা ঘুরে দেখার জন্য।পাহাড়ি ঝুপ ঝাড়ের ভেতর চমৎকার একটা পরিবেশ।
ত্রিশ জন মুক্তিকামী যোদ্ধার ছোট্ট এ ক্যাম্পটির  কমান্ডার  জুরাইজ আল আরকানী।প্রাতঃভ্রমণের পর আবিরকে নিয়ে যাওয়া হলো কমান্ডার স্যারের কামরায়। জুরাইজ আল আরকানীকে দেখেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়লো আবির।কান্নায় দুচোখ ভিজে উঠলো মনের অজান্তেই।
ওরা আমার বাবাকে শহীদ করেছে।আমার প্রিয় মা ও বোনটাকে অকথ্য নির্যাতনের পর নির্মমভাবে  হত্যা করে দিয়েছে।এখন আমাকেও খুঁজে বেড়াচ্ছে ওরা হন্যে হয়ে।
আমি আমার পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যের রক্তের প্রতিশোধ নিতে চাই;আমি আর পালিয়ে বাঁচতে চাই না।
আমার বুকের প্রতি ফোঁটা রক্তের বিনিময়ে হলেও দেশ ও জনগণকে স্বাধীন করতে চাই।দয়া করে আপনাদের এ মুক্তির মিছিলে আমাকেও শরিক করুন আমির সাহেব!আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি -আমার শরীরের শেষ রক্ত বিন্দু থাকা পর্যন্ত ঐ নরপিচাসদের মোকাবেলা করবো,করবোই ইনশাল্লাহ।