শিরকমুক্ত আমলই হবে পরকালীন মুক্তির একমাত্র উপায়

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ১৭ ২০২০, ১৫:৫৮

মুফতি আহমদ যাকারিয়া
যেহেতু শিরক তাওহীদের সম্পূর্ণ বিপরীত, কাজেই শিরক সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে তাওহীদ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।
তাওহীদ:
শুধু তাওহীদ বলতে তাওহীদে মুতলাক বা অবিভক্ত তাওহীদকে বুঝায়। যার অর্থ হলো; এককত্ব বা একত্বে ভূষিত করা। সালফে সালেহীনগণ তাওহীদকে বিভিন্ন সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করেছেন।
১. তাওহীদ হলো, কায়মনোবাক্যে এ সুদৃঢ় বিশ্বাস পোষন করা যে, সকল বিষয়েই আল্লাহ এক ও একক, অদ্বিতীয়, নিরুপম, সমকক্ষহীন, তুলনাহীন। তিনি ব্যক্তিসত্ত্বা, কর্মরাজি, সুন্দর নামসমূহ ও গুনাবলী এবং ইবাদতের সার্বভৌম অধিকারে সম্পূর্ন এক ও একক। তেমনিভাবে তিনি একত্বের অধিকারী সৃষ্টিকর্মে ও নির্দেশ প্রদানে।
(শরহু আক্বিদাতুত তাহাবি)
২. তাওহীদ হচ্ছে- আল্লাহর লেশমাত্র দোষহীন, পরিপূর্ণ গুনরাজিতে আল্লাহর একত্বের হৃদয়গত ইলম ও বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও ইবাদতের ক্ষেত্রে তাঁর একত্ব প্রতিষ্ঠা করা। (কিতাবুত তাওহীদ)
৩. তাওহীদ হচ্ছে- একমাত্র সত্য মা’বুদের জন্যে একমাত্র সত্য দ্বীন ও ঈমানের পথে এক অভিমুখী বান্দাহ হয়ে যাওয়া।
(ইবনুল কাইয়্যিম রহঃ)
৪. তাওহীদ হচ্ছে- দাসত্ব ও সাহায্য প্রার্থনা একমাত্র আল্লাহর সাথে বিশেষিত করা।
(কিতাবুত তাওহীদ লি ইবনে তাইমিয়্যাহ রহঃ)
শিরক কাকে বলে?
শিরক শব্দের অর্থ: অংশীদারিত্ব, অংশিবাদ, মিলানো, সমকক্ষ করা, সমান করা, শরিক করা, ভাগাভাগি করা। ইংরেজীতে Polytheism (একাধিক উপাস্যে বিশ্বাস), Associate, partner. বিশ্বাসগতভাবে, আমলগতভাবে আল্লাহর সাথে ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে আল্লাহর অংশিদার বা সমতুল্য কিংবা সমান বানানো। আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার মানা, আল্লাহর অস্তিত্ব ও গুণরাজিতে কাউকে শরীক করে নেয়া। মূলত রব ও ইলাহ হিসেবে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশিদার সাব্যস্ত করার নামই হলো শিরক৷
আরো সহজ করে বললে বলতে হয় যে, শিরক হলো; আল্লাহর সার্বভৌমত্বে অংশীদার স্থাপন, একত্রিকরণ, দুই বা দুয়ের অধিক অংশীদারীর সংমিশ্রণ করণ।
পরিভাষায় শিরক বলা হয়;
কুরআনে আল্লাহর যে সমস্ত নাম ও গুনাবলী উল্লেখিত হয়েছে সেগুলোকে অবিশ্বাস করা; যে সকল ইবাদত ও আমলের জন্য আল্লাহ বান্দাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তাতে তাঁর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত করা থেকে বিরত থাকা এবং বিরত রাখা। সর্বোপরি আল্লাহর কৃতকর্মে অস্বীকার করা। পাশাপাশি গাইরুল্লাহকে মা’বুদ ও মান্যবর হিসেবে গ্রহণ করা।
কারো কারো মতে, শিরক হলো; “শরীয়তের পরিভাষায় যেসব গুনাবলী কেবল আল্লাহর জন্য নির্ধারিত, সেসব গুণে অন্য কাউকে গুনান্বিত ভাবা বা এতে অন্য কারো অংশ আছে বলে মনে করাই শিরক।”
“শিরক্ হচ্ছে বান্দাহর আল্লাহর সাথে তাঁর রুবুবিয়্যাত সংক্রান্ত কর্ম কিংবা তাঁর নাম ও গুনাবলী অথবা ইবাদতে কাউকে শরীক করা”।
(মিরাসিল আম্বিয়া, পৃঃ ৮)
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, শিরক হলো, আল্লাহর নিরংকুশ প্রভূত্বে কারো অংশীদারিত্বের আক্বীদা পোষণ করা।
আবার কারো মতে, শিরক হচ্ছে আল্লাহর সাথে এমন বিষয়ে সমকক্ষ স্থির করা, যেটা আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য। যেমন- আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করা, অন্য কারো নিকট আশা করা, আল্লাহর চাইতে অন্য কাউকে বেশী ভালবাসা, অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদতের কোন একটি অন্যের দিকে সম্বোধন করাকেই শিরক বলে।
আক্বীদার পরিভাষায়, শিরক বলা হয়, আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট ও সীমাবদ্ধ কোন বিষয় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে উলুহিয়্যাত তথা ইলাহ হিসেবে আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়৷ যেমন আল্লাহর সাথে অন্য কারো নিকট দোয়া করা কিংবা বিভিন্ন প্রকার ইবাদত যেমন যবেহ, মান্নত, ভয়, কুরবানী, আশা, মোহাব্বাত, আনুগত্য, ভরসা ইত্যাদি কোন কিছু গাইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে নিবেদন করা৷ আল্লাহকে ডাকার মতো অন্যকে ডাকা, আল্লাহকে ভয় করার মতো অন্যকে ভয় করা, তাঁর কাছে যা কামনা করা হয়, অন্যের কাছে তা কামনা করা। তাঁকে ভালোবাসার মতো অন্যকেও ভালোবাসা।
“শিরকের ক্ষেত্রে একটা বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, এতে দু‘শরীকের অংশ সমান হওয়া আবশ্যক নয়। বরং শতভাগের একভাগের অংশীদার হলেও তাকে অংশীদার বলা হয়। তাই আল্লাহ তা‘য়ালার হকের সামান্যতম অংশ অন্যকে দিলেই তা শিরকে পরিণত হবে। এতে আল্লাহর অংশটা যতই বড় রাখা হোক না কেন।”
প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ বিভিন্নভাবে খোদার সার্বভৌমত্বে শরীক বানিয়েছে। মানুষ কখনও একাধিক খোদা বানিয়েছে। কখনও খোদাকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেছে। আবার কখনও বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি ও বস্তুকে খোদা বানিয়েছে। কখনও নিজেরাই মূর্তি তৈরি করে তার পূঁজা করেছে। আবার কখনও কখনও শক্তিশালী মানুষকে খোদার মর্যাদা দিয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে বলেছেন, “আমি মানুষকে আমার ইবাদতের উদ্দেশ্য ব্যতিত অন্য কোনে কারণে সৃষ্টি করিনি।” অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করার জন্যই আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকটি কাজ যখনই যথাযথভাবে আদায় হবে, তখনই তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। পাশাপাশি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ব্যতিক্রম  কোনো কাজ করলেই তা হবে অবাধ্যতা। তাই ইবাদতের পাশাপাশি অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন। অবাধ্যতা তথা পাপ কাজের মধ্যে সবচেয়ে বড় অবাধ্যতা হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা। যা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বলে আল্লাহ্ ঘোষণা করেছেন।
শিরক কেন সবচেয়ে বড় গোনাহ হিসাবে বিবেচিত?
আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারও ইবাদত করার নামই হলো শিরক; এদিকে ইঙ্গিত করে ই আল্লাহ্ বলেন;
وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهَِ  (سورة يونس)
‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর ইবাদত করে, যা না তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে, না করতে পারে, কোন উপকার৷ আর তারা বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী৷’
শিরকের ভয়াবহতা কত মারাত্মক সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ্ বলেন;
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ  (سورة لقمان)
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়৷’
আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের জন্য শর্ত-ই হলো শিরকমুক্ত জীবন; এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ্ বলেন;
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
(سورة الكهف)
‘অতএব যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সত্কর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’
শিরক করার পর যে ব্যক্তি তা থেকে তাওবাহ করবে না, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন না৷ আল্লাহ বলেন;
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا (سورة النساء)
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর তাঁর সাথে শরীক করার পাপ ক্ষমা করেন না৷ এতদ্ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ তিনি ক্ষমা করেন, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন৷‘
মুশরিকদের জন্য জান্নাত হারাম; তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে;
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ  (سورة المائدة)
‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম৷ অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই৷’
শিরক সকল আমলকে নষ্ট  করে দেয়;
وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ  (سورة الأنعام)
‘যদি তারা শিরক করত, তবে তাদের কাজকর্ম নিষ্ফল হয়ে যেত৷’
শিরক সকল আমলকে নিষ্ফল করে দেয়;
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ (سورة الزمر)
‘আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন৷’
শিরক এর অপকারিতা তুলে ধরতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন;
ألَا أنَبِئكُمْ بِأكْبَرِ الكَبَائرِ؟ قُلْنَا بَلَى يَارَسُوْلَ الله . قاَلَ الْإشْرَاكُ بِالله وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ.
‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহের সংবাদ দিব না? আমরা বললাম- জ্বী, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল ! তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং পিতা- মাতার অবাধ্য হওয়া৷’
শিরক কত বড় অপরাধ নবী সা. এর এই হাদীস থেকেই প্রতীয়মান হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন;
أمِرْتُ أنْ أقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُوْلُوْا لَاإلَهَ إلَّا الله، فإذَا قَالُوْاهَا عَصَمُوْا مِنِّي دِمَاءهُم وَأمْوَالَهُم إلَّا بِحَقِّهَا
‘আল্লাহ ছাড়া আর কোন হক মা’বুদ নাই, একথা বলা পর্যন্ত লোকজনের সাথে লড়ে যাওয়ার জন্য আমাকে আদেশ করা হয়েছে৷ অতঃপর যখনই তারা এই বাণী উচ্চরণ করল, আমার হাত থেকে তাদের জান-মাল তারা রক্ষা করে নিল৷ অবশ্য এ বাণীর দাবী অনুযায়ীকৃত দন্ডনীয় অপরাধের সাজা পেতেই হবে৷’
লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদত করলে সেটাও শিরক এর পর্যায়ে পড়বে। (যদিও সেটা শিরক-এ আসগর) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন;
أخوف ما أخاف عليكم الشرك الأصغر، قالوا يارسول الله وما الشرك الأصغر قال: الرياء
‘তোমাদের উপর আমি যে জিনিসের ভয় সবচেয়ে বিশী করছি তা হল শিরকে আসগরধ৷ সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! শিরকে আসগর কি? তিনি বললেন: রিয়া (লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করা)
পার্থিব লোভে পড়ে আমল করাও শিরক-এ আসগরের আওতাভুক্ত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন;
تعس عبد الدينار و تعس عبد الدرهم، تعس عبد الخميصة، تعس عبدالخميلة إن أعطي رضي إن لم يعط سخط.
‘দীনার, দিরহাম এবং খামিসা- খামিলা (তথা উত্তম পোশক-পরিচ্ছদ- এর যারা দাস, তাদের ধ্বংস৷ তাকে দেয়া হলে সে সন্তুষ্ট হয়, আর না দেয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়৷‘
শিরকের ভয়াবহতা:
শিরক হচ্ছে সকল পাপের চাইতে বড় পাপ। যা আল্লাহ তায়ালা যা কখনোই ক্ষমা করবেন না। যদি কোন ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে মারা যায় তাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকতে হবে। শিরকের ভয়বহতা এত বেশি, শিরকের ভয়বহতা এত বেশি যে, যে শিরক মানুষের সব ইবাদত ও আমল বিনস্ট করে দেয়, মানুষকে চিরস্থায়ী জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়।
শিরক কত প্রকার?
শিরক দুই প্রকার:
১. শিরকে আকবার। (বড় শিরক)
২. শিরকে আসগার। (ছোট শিরক)
১. শিরকে আকবার, (বড় শিরক) যা বান্দাকে মিল্লাতে ইসলামের গন্ডী থেকে বের করে দেয়। এ ধরণের শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি যদি শিরকের উপরই মৃত্যুবরণ করে, এবং তা থেকে তাওবাহ না করে থাকে, তাহলে সে চিরস্থায়িভাবে দোজখে অবস্থান করবে।
শিরকে আকবার হলো; গাইরুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া যেকোন ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর উদ্দেশ্যে কোন ইবাদাত আদায় করা, গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করা, মান্নাত করা, কোন মৃত ব্যক্তি কিংবা জ্বিন অথবা শয়তান আল্লাহর হুকুম ব্যতিত কারো ক্ষতি করতে পারে কিংবা কাউকে অসুস্থ করতে পারে, এ ধরনের ভয় পাওয়া, প্রয়োজন ও চাহিদা পূর্ণ করা এবং বিপদ দূর করার ন্যায় যে সব ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ক্ষমতা রাখেনা সেসব ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে আশা করা।
 আল্লাহ বলেন;
وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهَِ
“তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর ইবাদত করে, যা না তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে, না করতে পারে, কোন উপকার। আর তারা বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী।”
(ইউনুছ ১০:১৮)
শিরকে আকবরের ভয়াবহ পরিণতি:
এ শিরক সম্পাদনকারী সম্পূর্ণরূপে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়। কারণ তা সরাসরি কুফরির নামান্তর। ফলে তার কোন নেক আমল কাজে আসে না বরং সবই বিফলে যায়। শিরক মিশ্রিত কোনো নেক আমলই আল্লাহ তায়ালা কুবল করেন না।
২.শিরকে আসগার; (ছোট শিরক) শিরক আসগার বান্দাকে মুসলিম মিল্লাতের গন্ডী থেকে বের করে দেয় না, তবে তার একত্ববাদের আক্বীদায় ত্রুটি ও কমতির সৃষ্টি করে। এটি শিরকে আকবারে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যম ও কারণ।
এ ধরনের শিরক দু’প্রকার:
প্রথম প্রকার: স্পষ্ট শিরক, এ প্রকারের শিরক কথা ও কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নামে কসম করা।
দ্বিতীয় প্রকার: গোপন শিরক।
এ প্রকার শিরকের স্থান হলো ইচ্ছা, সংকল্প ও নিয়্যাতের মধ্যে। যেমন লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ও প্রসিদ্ধি অর্জনের জন্যে কোন আমল করা। অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় এমন কোন কাজ করে তা দ্বারা মানুষের প্রশংসা লাভের ইচ্ছা করা।
যদি কোন আমলে লোক দেখানোর উদ্দেশ্য সংমিশ্রিত থাকে, তাহলে আল্লাহ তা বাতিল করে দেন।
আল্লাহ বলেন;
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
“অতএব যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাথে সাক্ষাতে আশাবাদী সে যেন নেক আ’মাল  করে এবং তার ইবাদতে কাওকে শরীক না করে।
শিরকে আসগরের কিছু উদাহরণ:
কোনো ব্যক্তির এরূপ বলা যে,
ক. আমি আল্লাহ এবং আপনার উপর ভসরা করছি, আপনিই আমার একমাত্র ভরসা।
খ. আল্লাহ এবং আপনি যা চান।
গ. আল্লাহ আর আপনি যদি না থাকতেন তাহলে মহা বিপদ হয়ে যেত।
ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে কোনো বিষয়ে কথা বলার প্রসঙ্গে বলল, আল্লাহ এবং আপনি যা চান। লোকটি এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি কি আমাকে আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে নিলে?।’
(তাফসিরে ইবনে কাসির)
ঘ. আমি আল্লাহর অনুগ্রহে এবং আপনার দোয়ায় ভাল আছি।
ঙ. এই পোষা কুকুরটি বা বিড়ালটি না হলে আজ রাতে আমার বাড়িতে চোর ঢুকে পড়ত।
চ. মাঝি বড় দক্ষ ছিল, বিধায় আজ জীবন রক্ষা পেল।
ছ. ড্রাইভারের দক্ষতায় বাসটি রক্ষা পেল।
জ. যেমন সার দিয়েছি তেমন ফসল হয়েছে।
ঝ. এই ড্রাইভারের কারণে এমন হলো, নতুবা এমন হতো না।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো কিছুকে অশুভ মনে করা শিরক।
(আবু দাউদ, তিরমিজি,)
পাশাপাশি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন কিছুর নামে কসম করা; যেমন:
ক. মাটি হাতে নিয়ে কসম।
খ. বাবা-মার নামে কসম।
গ. সন্তান-সন্ততির নামে কসম।
ঘ. নবী-রাসূলদের নামে কসম।
ঙ. পরহেজগার ব্যক্তির নামে কসম।
চ. পবিত্র স্থানের নামে কসম।
ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এক ব্যক্তিকে কা’বা ঘরের শপথ করতে শুনে বললেন, আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর শপথ করবে না। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে শপথ করে সে কুফরি করল বা শিরক করল। (তিরমিজি)
ছ. খাবার ছুঁয়ে কসম।
জ. কাউকে ছুঁয়ে কসম।
ঝ. দুনিয়াবি স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে, লোক দেখানো ভঙ্গিমায় ইবাদত-বন্দেগির মতো বিষয়ও শিরকে আসগরের অন্তর্ভূক্ত।
আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদেরকে এমন বিষয়ে সংবাদ দিব না, যে বিষয়টি আমার কাছে মাসীহ দাজ্জালের চাইতেও ভয়ংকর? সাহাবাগণ বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তা হচ্ছে গোপন শিরক। (এর উদাপহরণ হলো) একজন মানুষ দাঁড়িয়ে শুধু এ জন্যই তার নামাজকে খুব সুন্দরভাবে আদায় করে যে, কোনো মানুষ তার নামাজ দেখছে।
(ইবনু মাজাহ)
শিরক সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা:
তাওহীদ হচ্ছে ঈমান ও ইসলামের মূল ভিত্তি। তাওহীদ সকল নাবী-রাসুলের দাওয়াতের কেন্দ্রীয় বিষয়। আল্লাহর নিকট ইবাদত কবুলের শর্ত-ই হলো তাওহীদ। বিপরীত দিকে শিরক হচ্ছে জঘন্যতম পাপ। শিরকের অপরাধীকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না। শিরক যাবতীয় আমলকে নষ্ট করে দেয়, জাহান্নামের দিকে টেনে নেয়। তাই আমাদের তাওহীদের পাশাপাশি শিরক সম্পর্কেও ইলম অর্জন করতে হবে। শিরক সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে আমরা আমাদের অজ্ঞাতেই আল্লাহ না করুন শিরকপূর্ণ কাজে জড়িয়ে যেতে পারি।
আল্লাহ তায়ালা বলেন; “বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান।” (যূমার: ৯)
আমাদেরকে জানতে হবে শিরক কি? শিরক কিভাবে হয়, শিরকের কারণ কি? শিরকের পরিণাম ও ভয়াবহতা কি? তাহলেই আমরা শিরক থেকে সতর্ক ও সাবধান থাকতে পারব। ভালো কিছু জানলে যেমন তা অর্জন করার আগ্রহ থাকে, তেমনি খারাপ কিছু জানলে তা থেকে সতর্ক থাকারও ইচ্ছা সৃষ্টি হয়। যার পরিণাম মন্দ ও ভয়াবহ, তা জানলেই তা থেকে সতর্ক ও সাবধান থাকা যায়। তাই বিবেক-বুদ্ধির ফায়সালা হচ্ছে ভালো-মন্দ দু’টিরই জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
হোযাইফা রা. বলেন; লোকেরা রাসুল সা. কে ভালো ও কল্যাণের বিষয়ে জিজ্ঞেস করত, আর আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম মন্দ ও অনিষ্টের বিষয়ে, এতে জড়িত হয়ে যাওয়ার ভয়ে। (বুখারী)
মন্দ থেকে বাঁচার জন্যে মন্দ সম্পর্কে জানতে হবে। অনিষ্ট থেকে সতর্ক থাকতে হলে তা জানতে হবে। হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হলে বাতিলকে জানতে হবে। ইসলামের উপর বলিষ্ঠভাবে টিকে থাকতে হলে শিরক, কুফর ও জাহিলিয়্যাতকে পরিপূর্ণভাবে চিনতে হবে। তা না হলে দৃঢ়ভাবে ইসলামের উপর টিকে থাকা যাবে না।
উমার রা. বলেন; ‘যে জাহিলিয়্যাত সম্পর্কে কিছু না জেনে ইসলামে (ইসলামী পরিবেশে) বেড়ে উঠেছে; তার এই ইসলামের গিটগুলো একটি একটি করে ছিড়ে যাবে।
(তাইসীরুল আজিজিল হামিদ পৃঃ১১৪)
শুধু তাওহীদের জ্ঞান-ই যথেষ্ট নয়, শিরকের ইলম অর্জন করতে হবে। তাহলেই শিরক থেকে বাঁচা সহজ হবে। শিরক সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে আমাদেরকে অনেক শিরক আচ্ছন্ন করে ফেলবে অথচ আমরা বুঝতেও পারব না যে, এগুলো শিরক। আর এসব শিরক আমাদের ঈমানকে ও যাবতীয় আমলকে বিনাশ করে দিবে।
শিরকেরক্ষতিকর দিক ও তার বিপদসমূহ:
ব্যক্তি জীবনে ও সমাজ জীবনে শিরক’র অনেক অনিষ্টকর দিক আছে; শিরক মানবতার জন্য অবমাননাকর; মানুষের সম্মানকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয় ও তার সামর্থ্যকে নিচু করে দেয়। তার মর্যাদাকেও নিচু করে দেয়, কারণ আল্লাহ পাক মানুষকে খলীফা হিসেবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এবং তাকে সম্মানিত করেছেন, সমস্ত নাম শিখিয়েছেন। তাঁর অনুগত করে দিয়েছেন; যা কিছু আছে আসমান ও যমীনে, তাকে এই জগতের সকলের উপর নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু সে তার অবস্থাকে ভুলে গেছে। ফলে সে এই জগতের কোন কোন জিনিসকেও মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে। তার কাছে নিজেকে ছোট করে এবং অপমানিত হয়। এর থেকে অসম্মানের বিষয় আর কি হতে পারে? যা আজকে দেখা যাচ্ছে কোটি কোটি লোক হিন্দুস্তানে গাভীর পূজা করছে, যাকে আল্লাহ পাক মানুষের খেদমতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। কিছু লোক আল্লাহর অপর সৃষ্টির কাছেই নিজেদের প্রয়োজনের কথা নিবেদন করছে। অথচ তারাও তাদের মতোই আল্লাহর দাস। না নিজেদের জন্য তারা কোন উপকার করতে পারে; না কোন ক্ষতি করতে পারে।
মৃতরাই যেখানে জীবিত মানুষের দোয়ার মুখাপেক্ষী, সেখানে অনেক মুসলমান মৃত ওলী আউলিয়ার কবরে গিয়ে তাদের কাছে নিজের কল্যাণের জন্য অনুরোধ করে। এসব ঠিক না। এগুলো শিরক এর আওতাধীন। তাই আমরা তাদের জন্য দোয়া করি। আমরা যেন আল্লাহকে ছেড়ে তাদের কাছে দোয়া না চাই।
আল্লাহ পাক এই সম্বন্ধে বলেন;
“যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যকে ডাকে তারা এতটুকুও জিনিস সৃষ্টি করে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। মৃতরা কখনোই জীবিতদের সমান নয় এবং তারা জানে না কখন তাদেরকে কবর থেকে উঠানো হবে।”
(নাহল: ২০)
শিরকের কারণে সমস্ত আজেবাজে কুসংস্কার ও বাতিল চিন্তা মানুষের মনের মধ্যে প্রবেশ করে। কারণ; যে মনে করে যে, এই জগতে আল্লাহ ছাড়া অন্যের প্রভাব আছে, যেমন নক্ষত্র, জ্বিন, নশ্বর, আত্মা ইত্যাদি, তার বুদ্ধি এমন হয়ে যায় যে, সে সমস্ত কুসংস্কারকে গ্রহণ করতে মানসিকভাবে তৈরি হয়ে যায় এবং সমস্ত মিথ্যাবাদী দাজ্জালদের বিশ্বাস করতে শুরু করে। এভাবে সমাজের মধ্যে শিরক প্রবেশ করতে থাকে।গণক, যাদুকর, জ্যোতীষ এবং এই জাতীয় লোকেরা মিথ্যা দাবি করে যে, তারা ঐ ভবিষ্যৎ জানে, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। ফলে সমাজের মধ্যে আস্তে আস্তে আসবাব সংগ্রহের প্রচেষ্টা দূর্বল হয় এবং জগতের নিয়ম উল্টে যেতে থাকে।
শিরক সবচেয়ে বড় যুলুম:
সত্যিই শিরক এটা সবচেয়ে বড় যুলুম। কারণ সবচেয়ে বড় সত্য হলো যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং তিনি ছাড়া অন্য কোন প্রতিপালকও নেই। কিন্তু মুশরিক আল্লাহকে ছেড়ে অন্যকে মাবুদ বানিয়ে নেয় এবং এর দ্বারা মুশরিক নিজের উপর যুলুম করে। কারণ, মুশরিক তারই মতো আরেকজন দাসের গোলাম হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহ পাক তাকে স্বাধীনভাবে সৃষ্টি করেছেন। শিরক অপরের উপর যুলুমের নামান্তর। কারণ, যে আল্লাহর সাথে অন্যকে শিরক করে সে তো অবশ্যই অত্যাচার করলো; কারণ এমন কাউকে সে হক দিতেছে, যার ঐ বিষয়ের অধিকার নেই।
শিরক হচ্ছে সমস্ত কল্পনা ও ভয়ের মূল:
কারণ, যার মাথায় কুসংস্কার বাসা বাঁধতে শুরু করে এবং সমস্ত আজেবাজে কথা ও কাজকে গ্রহণ করতে থাকে, ফলে সমস্ত দিক হতেই সে ভয় পেতে শুরু করে। কারণ, সে বিভিন্ন মাবুদের উপর ভরসা করতে শিখেছে। তাদের প্রত্যেকেই ভাল করতে অপারগ, এমনকি নিজেদের থেকেও তারা কষ্ট, মুসিবত দুর করতে পারে না। ফলে যেখানে শিরক চলতে থাকে সেখানে নানা ধরনের কুসংস্কার ও ভয় প্রকাশ পেতে থাকে কোন প্রকাশ্য কারণ ছাড়াই। আল্লাহ এই বিষয়ে বলেন;
“যারা কুফরী করে আমি তাদের অন্তরে ভয়কে নিক্ষেপ করব। ঐ কারণে যে, তারা আল্লাহর সাথে শিরক করছে, আর যে সম্বন্ধে আল্লাহ পাক কোন প্রমান পাঠাননি। তাদের ঠিকানা আগুন এবং জালেমদের জন্য সেটা কতই না নিকৃষ্ট জায়গা।” (আল ইমরান: ১৫১)
মূলকথা হলো যে, শিরক হলো খুব খারাপ কাজ, তাই এ থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মানুষের জন্য ফরজ। এ থেকে দূরে সরে থাকা দরকার এবং এর মধ্যে ঢুকে পড়ার ব্যাপারে ভয় করা উচিত। কারণ, এটা সবচেয়ে বড় গুনাহ। তা বান্দার সমস্ত আমলকেই নষ্ট করে দেয়, এমনকি তার ঐ সমস্ত নেক কাজও বিনষ্ট হয়ে যায়; যাতে উম্মতের উপকার হতো, মানবতার সেবা হতো।
এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন; “তাদের ঐ সমস্ত আমলকে আমার কাছে পৌছানো হবে কিন্তু সেগুলো আমি ধূলির মতো উড়িয়ে দেব।”  (ফুরকান: ২৩)
শিরক কেন এত ভয়াবহ?
শিরক মূলত এ পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যকেই অস্বীকার করে। কারণ আল্লাহ তা‘য়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য, এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন; “আমি মানব এবং জ্বিন জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।” (যারিয়াত-৫৬)
শিরকের মাধ্যমে আল্লাহর মর্যাদা এবং নিরংকুশ সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করা হয়। আল্লাহ হচ্ছেন আমাদের রব এবং ইলাহ, আর আমরা হচ্ছি তার বান্দাহ বা দাস। যা কিছু আছে সবই আল্লাহর সৃষ্টি। শিরক করলে এই নগণ্য দাসকে/সামান্য সৃষ্টিকে স্রষ্টার স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এ জন্যই শিরক হচ্ছে আল্লাহর মর্যাদা এবং সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী, চরম যুলম-অবিচার। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন; “আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয়ই শিরক্ চরম যুলুম।” (লুকমান:১৩)
শিরক না করার নির্দেশ এবং আহ্বান:
আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন; “আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না।” (নিসা: ৩৬)
“আর উহা এই যে, তুমি একনিষ্ঠভাবে দ্বীনের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হও এবং কখনও মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হইও না।” (ইউনুস: ১০৫)
মুয়ায বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সা. আমাকে বলেছেন; “আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় কিংবা পুড়িয়ে মারা হয়।”
(মুসনাদে আহমাদ)
শিরক না করার ফযীলত:
আল্লাহ তায়ালা বলেন; “যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলম (শিরক) দ্বারা কলুষিত করে নাই, নিরাপত্তা তাদেরই জন্য এবং তারাই হেদায়েত প্রাপ্ত।” (আন‘আম: ৮২)
মুয়ায রা. থেকে বর্নিত তিনি বলেন- আমি ‘উফাইর’ নামক একটি গাধার পিঠে নবী সা. এর পেছনে বসেছিলাম। নবী সা. আমাকে জিজ্ঞেস করলেন; “তুমি কি জান বান্দার নিকট আল্লাহর হক্ কি? আমি বললাম; আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। তিনি বললেন; “বান্দাহর নিকট আল্লাহর হক হলো যে, বান্দাহ তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর বান্দাহর নিকট আল্লাহর অধিকার হলো যে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করলে আল্লাহ তাকে শাস্তি প্রদান করবেন না। (বুখারী: ২৬৪৬)
আবু যর গিফারী রা. নাবী সা. থেকে বর্ণনা করেন, নাবী সা. বলেন- “জিবরাঈল এসে আমাকে সুসংবাদ দিলেন, আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন না করে যে ব্যক্তি মারা যায়, সে জান্নাত লাভ করবে। আবু যর গিফারী রা. বললেন, যদি সে চুরি করে এবং ব্যভিচার করে তবুও কি? নাবী সা. বললেন, হ্যাঁ; যদি সে চুরি করে এবং ব্যভিচার করে তবুও। (বুখারী: ৯৬৯৬, মুসলিম: ১৮০)
জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- এক ব্যক্তি নাবী সা. এর নিকটে এসে জিজ্ঞেস করল, জান্নাত এবং জাহান্নাম ওয়াজিবকারী বস্তু দু‘টি কি কি? তিনি বলেন; “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার না বানিয়ে মৃত্যুবরণ করল সে জান্নাতী। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক বানিয়ে মারা গেল; সে জাহান্নামী। (মুসলিম: ১৭৭)
আনাছ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন যে- ‘‘আল্লাহ তায়ালা বলেছেন; হে আদম সন্তান! তোমরা যদি আমার সাথে অংশীস্থাপন না করে দুনিয়াভরা অপরাধ (গুনাহ) নিয়েও আমার সাথে স্বাক্ষাত কর, তবে আমি দুনিয়াভরা ক্ষমা নিয়ে তোমাদের নিকট উপস্থিত হব। (তিরমিজী, মেশকাত- ইস্তেগফার অধ্যায়)
তাওহীদ ও শিরকের চিরকালীন দ্বন্দ্ব:
তাওহীদ ও শিরকের মধ্যে যুদ্ধ বহু পুরাতন। নূহ আ. মূর্তি পূজা ছাড়াতে যখন তাঁর জাতিকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডাকছিলেন তখন থেকেই তা শুরু হয়। তিনি সাড়ে নয় শত বছর পর্যন্ত দাওয়াত দেন নিজ জাতিকে। কিন্তু তারা তার বিরুদ্ধাচরণ করে। সে সম্পর্কে কুরআন বলে; “তার কাওমের নেতারা বলল; তোমরা কখনও তোমাদের দেব-দেবীদের ছাড়বে না, না “ওদ্দা”, “সূয়া’য়”, “ইয়াগুছা”, ইয়া’য়ুকা”, নাসরা, যদিও এরা অনেককেই পথভ্রষ্ট করেছে।” (নূহ: ২৩-২৪)
বুখারীতে ইবনে আব্বাস রা. থেকে এই আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে যে, এরা ছিলেন নূহ আ. -এর জাতির মধ্যে ভালো ও নেককার লোক। যখন তারা মারা গেলেন তখন শয়তান তাদের জাতির লোকদের কাছে গোপনে মন্দ পরামর্শ দিল যে, জীবিতাবস্থায় তারা যেখানে বসত সেখানে তাদের প্রতিমূর্তি তৈরী করতে এবং তাদেরকে তাদের নামে বিভূষিত করতে। শয়তানের কথায় প্ররোচিত হয়ে তারা তা-ই করল। কিন্তু তখন পর্যন্ত তাঁদের ইবাদত করা হতো না। যখন এই লোকেরা মারা গেল তখন কেন যে মূতিগুলো বানানো হয়েছিল তা লোকেরা ভুলে গেল; ফলে পরবর্তী প্রজন্ম থেকেই মূর্তি পূজা শুরু হয়ে গেল।
নূহ আ. এর পর যত নবী-রাসুল  এসেছেন প্রত্যেকেই এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডাকলেন, এবং ঐ সমস্ত মাবুদদের ত্যাগ করতে বললেন, যাদের ইবাদত করা হত তখনকার যুগে আল্লাহকে ছেড়ে।
কুরআনে এই বিষয়ে আল্লাহ্ বলেন;
“কওমে আ’দের কাছে আসলেন তাদের ভাই হুদ আ.। তিনি তাদের দাওয়াত দিয়ে বললেন; হে আমার জাতি! এক আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন উপাস্য নেই। তোমরা কি পরহেজগার হবে না?” (আ’রাফঃ ৬৫)
অন্যত্র বলেন;
“কওমে সামুদের কাছে এসেছিলেন তাদের ভাই ছালেহ আ.। তিনি এই দাওয়াত দিতেন যে, হে আমার জাতি! আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন উপাস্য নাই।” (হুদ: ৬১)
অন্যত্র আল্লাহ বলেন;
“মাদায়েনে আসলেন তাদের ভাই শুয়াইব আ.। তিনি তাদের বললেন; হে আমার জাতি! আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন উপাস্য নেই।” (হুদ: ৮৪)
আল্লাহ অন্যত্র বলেন;
“যখন ইব্রাহীম আ. তাঁর পিতা এবং জাতির লোকদের বললেন, অবশ্যই আমি ওদের থেকে সম্পর্কমুক্ত, যাদের ইবাদত তোমরা কর। আমি শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করি, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি আমাকে সঠিক রাস্তা দেখাবেন।” (যুখরুফঃ ২৬-২৭)
মুশরিকরা সমস্ত নবীদের বিরোধিতা করত এবং অহঙ্কারের সাথে মুখ ঘুরিয়ে নিত। সাথে সাথে তাঁরা যে সমস্ত দা’ওয়াত নিয়ে আসতেন তার বিরুদ্ধেও যত ধরনের শক্তি তাদের ছিল তা দিয়ে তাঁদের বিরোধিতা করত।
আমাদের রাসুল সা. যিনি আরবদের কাছে নবুওয়াত পাওয়ার আগে বিশ্বাসী “আল-আমীন” বলে সুপরিচিত ছিলেন। কিন্তু যখনই তাদের এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডাকলেন এবং ঐ সমস্ত মূর্তির ইবাদত না করতে বললেন যা তাদের বাপ-দাদারা করতো, সাথে সাথে তারা তাঁর সত্যবাদীতা ও আমানতদারী ভুলে গেল। আর বলতে শুরু করল যে, তিনি মিথ্যাবাদী, তিনি যাদুকর।
 (নাউযুবিল্লাহ)
কুরআন তাদের বিরোধিতা করে বর্ণনা করেছে; “যখনই তাদের মধ্য হতে একজন ভয় প্রদর্শক আসলেন, তখনই তারা অবাক হয়ে গেল, ফলে কাফেররা বলতে লাগল; এ যাদুকর এবং চরম মিথ্যাবাদী। সে কি আমাদের সমস্ত মা’বুদদের এক মা’বুদ বানিয়ে ফেলতে চায়, এ তো বড়ই অবাক হওয়ার কথা।” (ছোয়াদ: ৪-৫)
আল্লাহ অন্যত্র বলেন; “এভাবে যত রাসুল তাদের পূর্বে এসেছেন, তাদেরকে তারা অবশ্যই বলেছে যাদুকর এবং পাগল। তারা কি একে-অপরকে এই ব্যাপারে উপদেশ দিত? বরঞ্চ তারা হচ্ছে সীমালঙ্ঘনকারী।”
(যারিয়াত: ৫২-৫৩)
এটাই হচ্ছে সমস্ত নবী-রাসুলদের তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেওয়ার পরের অবস্থা। এটাই হচ্ছে তাঁদের মিথ্যাবাদী কওম ও অপবাদ দানকারীদের ভূমিকা। আর আমাদের এই সময়ে যখন কোন মুসলমান তাদের ভাইদের দাওয়াত দেয় চরিত্র সংশোধন করতে, সত্য কথা বলতে এবং আমানতদারী ঠিক করতে, তখন তাতে কোন বিরোধিতার সম্মুখীন হয় না। আর যখনই ঐ তাওহীদের দিকে দাওয়াত দিতে শুরু করে যার দিকে সমস্ত রাসুলরা দাওয়াত দিয়েছেন, আর তা হলো; এক আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং তাঁকে ছেড়ে আউলিয়া (যারা আল্লাহর দাস) এদের কাছে দোয়া করতে নিষেধ করা, তখনই মানুষ তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায় এবং তাকে নানা ধরনের মিথ্যা অপবাদে জর্জরিত করতে থাকে। যারা তাওহীদের দিকে মানুষকে ডাকবে তাঁদের অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে। এবং ঐ রাসুল সা. এর অনুসরণ করতে হবে; যাঁকে তার রব বলেছেন;
“তারা যা বলে তা তুমি সহ্য কর এবং তাদেরকে সুন্দরভাবে পরিত্যাগ কর।” (মুজাম্মেল: ১০)
কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ বলেন; “তারা যা বলল তা সহ্য করতে থাক এবং তাদেরকে পাপের বা কুফরী কার্যে অনুসরণ কর না।” (ইনসান: ২৪)
শিরকের কারণ:
১- আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা ও খারাপ মনেবৃত্তি পোষণ করা-
মন্দ ধারণাই শিরকের নেপথ্য কারণ। যেকোন শিরকের পেছনে আল্লাহ সম্পর্কে কোন না কোন দোষ-ত্রুটি ও মন্দ ধারণা কাজ করে। ভালোবাসার বিপরীত এ মন্দ ধারণা পোষণ করার কারণেই মানুষ আল্লাহকে ছেড়ে অন্যের ইবাদত করে। গায়রুল্লাহকে তার জন্য আল্লাহর চেয়ে অধিক দয়ালু ও কল্যানকামী মনে করে।
মুশরিকদের এ মন্দ ধারণার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে ইব্রাহীম আ. তাঁর সূর্য্য, চন্দ্র, নক্ষত্র ও মূতি পুজারী জাতির সামনে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন; পবিত্র কুরআনে তা এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে যে, “তোমরা কিসের পুজা করছ? তোমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা  মা’বুদগুলোকে চাও? তাহলে বিশ্বের  রব সমন্ধে তোমাদের কি ধারণা?” (সাফফাত:৮৫-৮৭)
এ কথার মর্ম হলো যে, তোমরা আল্লাহর মধ্যে কি ধরণের দোষ-ত্রুটি ও মন্দের ধারনা পোষণ করছ? যার ফলে তাকে পরিত্যাগ করেছ এবং তাঁর পরিবর্তে এতসব মা’বুদ ও দেবতা বানিয়ে নিয়েছ? আল্লাহর সত্ত্বা, তাঁর গুনাবলী ও কার্যাবলী সম্পর্কে কি ধরণের খারাপ মনোবৃত্তি পোষণ করছ? কি ধরণের দোষ-ত্রুটি তাঁর মধ্যে আছে বলে ধারণা করছ? কি ধরণের অক্ষমতা, অপারগতা, করুণার অভাব তাঁর মধ্যে আছে বলে তোমরা মনে করছ? যার ফলে সরাসরি তাঁর ইবাদত না করে ভায়া ও মাধ্যমের পুজা করছ? এবং তাদের কাছেই কল্যাণের প্রত্যাশা করছ? এবং অকল্যাণ থেকে বাঁচার জন্য তাদের শরণাপন্ন হচ্ছ? উপরন্তু মুশরিকরা মনে করে যে, আল্লাহ তাদেরকে দয়া করবেন না। এজন্যই তারা মাধ্যম ও ভায়া মা’বুদের ইবাদত করে। আল্লাহর নিকট এসব ভায়া মা’বুদের প্রভাব-প্রতিপত্তি আছে বলে বিশ্বাস করে। আল্লাহ তাদেরকে ভালো না বাসলেও ভায়া মা’বুদরা সুপারিশ করলে সে সুপারিশ আল্লাহ বাতিল করতে পারেন না বলে বিশ্বাস করে।
২- সৃষ্টিকে স্রষ্টার সমতুল্য করা-
আল্লাহ তায়ালা বলেন; “তাঁর সমতুল্য কোন কিছুই নেই এবং তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (শুরা: ১১)
অন্যত্র বলেন যে, “তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।” (ইখলাস:৪)
অথচ মানুষ দোয়া, ভয়, আশা-ভরসা, সিজদা, মানত, এসব ইবাদতগুলো এককভাবে আল্লাহর জন্য নিবেদন না করে সৃষ্টিকেও এসব ইবাদতে শরীক করছে। পীর, ফকির, মাজার, মৃত অলী-আউলিয়াদের জন্য তারা এসব নিবেদন করার মাধ্যমে সৃষ্টিকে স্রষ্টার সমতুল্য করছে। আল্লাহ আমাদের একমাত্র রব। অথচ মানুষ ওলী- আউলিয়া, পীরবাবা, খাজাবাবা, দয়াল বাবা, কবর-মাজারস্থ মৃত ব্যক্তির কাছে মানুষের লাভ-ক্ষতি, দান-বঞ্চনার ক্ষমতা আছে বলে মনে করে আল্লাহর সমতুল্য করছে।
 ৩- আল্লাহকে যথাযথ মর্যাদা না দেয়া-
আল্লাহর সমস্ত মর্যাদাকে অস্বীকার করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন; “তারা আল্লাহর যথোচিত সম্মান করে না। কেয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোয় এবং আকাশমন্ডলী ভাঁজ করা থাকবে তাঁর ডান হাতে। পবিত্র মহান তিনি। তারা যাকে শরীক করে তিনি তাঁর উর্দ্ধে।” (যূমার: ৬৭)
পরিপূর্ণ, অবিভাজ্য, অংশীদারমুক্ত মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এই আয়াতে। সে মর্যাদার অপর নাম তাওহীদ, একত্ব, পরিপূর্ণ আত্মসমর্পন। যে শিরক করলো, সে তাঁর মর্যাদা খন্ডিত করলো, ভাগ করলো, তাঁর মর্যাদার একাংশ অন্যকে দিল এবং আল্লাহকে দিল আংশিক মর্যাদা। আল্লাহকে যেরূপ মর্যাদা দেয়া উচিত সেরূপ মর্যাদা না দেয়ার কারণেই অনেকে আল্লাহর সাথে শিরক করে।
৪- আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞতা ও মুর্খতা-
“আল্লাহ এবং তাঁর একত্ব সম্পর্কে মূর্খতা সবচেয়ে বড় মূর্খতা। আর আল্লাহর একত্ব সম্পর্কে জ্ঞান হচ্ছে সবচেয়ে বড় জ্ঞান। আল্লাহ তায়ালা বলেন; জেনে রেখো! আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।” (মুহাম্মদ: ১৯)
কিভাবে আল্লাহর সাথে শিরক করা হতে বিরত থাকব?
আল্লাহ্’র সাথে শিরক করা হতে বিরত থাকা কখনোই পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা তিন ধরনের শিরক করা বাদ দিব।
১- রবুবিয়াতের ক্ষেত্রে শিরক-
২- ইবাদতের ক্ষেত্রে শিরক-
৩- তাঁর গুণের মধ্যে শিরক-
এগুলো থেকে বাঁচতে পারলেই শিরক করা থেকে বাঁচা সম্ভব।
উপসংহার:
শিরক মিশ্রিত ঈমান কখনোই ঈমান হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং, শিরক থেকে বেঁচে থাকার জন্য সবসময় আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রাণখুলে দোয়া করা ও সাহায্য প্রার্থনা করা আমাদের উপর কর্তব্য।
রাসূল সা. শিরক হতে বাঁচার জন্যে আমাদেরকে দোয়া শিখিয়েছেন, দোয়াটি হলো এই;
اَللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوْذُبِكَ أَنْ نُشْرِكَ شَيْئًا نَعْلَمُهُ وَنَسْتَغْفِرُكَ لَمَا لاَ نَعْلَمُ
‘আল্লাহুম্মা ইন্না না‘ঊযুবিকা আন নুশরিকা শাইআন না‘লামুহ, ওয়া নাসতাগফিরুকা লিমা লা না‘লামুহ।
“হে আল্লাহ্, জেনে, বুঝে শিরক করা থেকে আমরা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং আমাদের অজ্ঞাত শিরক থেকে আপনার নিকটে ক্ষমা চাচ্ছি।” (আদাবুল-মুফরাদ-৭১৬)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ছোট-বড় সকল প্রকার শিরক হতে রক্ষা করুন, আমীন!