শিবির সভাপতির দাওরা পরীক্ষা : পরিস্কার করতে হবে দু’টি বিষয় 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ০৪ ২০১৯, ১৬:৫৮

ফুজায়েল আহমাদ নাজমুল 

আমরা পরিস্কারভাবে বলেছিলাম, কওমি মাদরাসা সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছাত্র সমাজের দীর্ঘদিনের দাবী। ছাত্র সমাজের ন্যায্য পাওনা। ন্যায্য অধিকার। আমরা আরও বলেছিলাম, ‘কওমি’ হচ্ছে নিছক একটি শিক্ষাব্যবস্থা মাত্র। এ শিক্ষাব্যবস্থার সনদের স্বীকৃতির সাথে নুন্যতম রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। এ স্বীকৃতির সাথে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন বা ২০১৩ সালের ৫মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সরকার কর্তৃক গণহত্যারও কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা তা মেনে নিতে নারাজ ছিলেন। কওমি সনদের স্বীকৃতিকে ইস্যু করে তারা সোস্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় তুলেন। নীচের স্তরগুলোর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না নিয়ে শুধুমাত্র সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদীসের সনদের স্বীকৃতির কোন মূল্য নেই বলে তিরস্কার করেন।

শুধু তাই নয়, তারা আওয়ামীলীগের সাথে কওমি আলেমদের আতাতের অভিযোগ তুলেন । আওয়ামীলীগ সরকারের হাত থেকে কওমির স্বীকৃতি গ্রহণ করে বেফাকের চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলামের আমীর, আল্লামা শাহ আহমদ শফী শাপলা চত্বরের শহীদদের সাথে বেঈমানী করেছেন, গাদ্দারী করেছেন বলে কঠিন ভাষায় মন্তব্য করেন। জামায়াতে ইসলামীর তরুণ বক্তা, ‘মাওলানা তারেক মনোয়ার’ শুধুমাত্র আওয়ামীলীগ সরকারের হাত থেকে কওমি সনদের স্বীকৃতি গ্রহণের কারণে সরাসরি আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে বেঈমান, গাদ্দার গালি দিয়ে ভিডিও আপলোড দেন জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে। আর আপত্তিকর এ ভিডিও জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা খুব জোরেশোরে ভাইরাল করে কওমি শিক্ষার্থীদের কলিজায় আঘাত করার চেষ্টা করেন।

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, স্বীকৃতির তিন বছরের মধ্যেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন কোন একটি মাদরাসার অধীনে ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে (১৪৪০ হিজরী/১৪২৬ বাংলা/২০১৯ ইংরেজি) অনুষ্ঠিত দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স সমমান) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জায়্যিদ জিদ্দান বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বিশ্বস্তসূত্রে জানাযায়, শুধু শিবির সভাপতি নয়, ২০১৯ সালে ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পরীক্ষায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্রশিবিরের আরো কিছু নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।

শিবির সভাপতি বা তাদের জনশক্তিদের দাওরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে আমার কোন হিংসা নেই। বিদ্বেষ নেই। আমি তাদের এই অংশগ্রহণকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তবে আমার প্রশ্ন হচ্ছে অন্য জায়গায়, যারা আওয়ামী সরকারের হাত থেকে স্বীকৃতি নেয়ায় এতোই সমালোচনা করলেন, কওমি আলেমদের অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করলেন, আলেমকুল শিরোমণি আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় ট্রল করলেন, তারাই আবার সেই আওয়ামিলীগ সরকারের শাসনামলেই এ স্বীকৃতির সার্টিফিকেট গ্রহণের জন্য দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেন। তাইলে তারা কি আওয়ামীলীগ সরকারের দেয়া কওমি সনদের স্বীকৃতিকে মেনে নিয়েছেন? স্বীকৃতির কারণে আল্লামা আহমদ শফীসহ কওমি আলেম ও শিক্ষার্থীদের যে, আওয়ামীলীগের দালাল ট্যাগ দিয়েছিলেন তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন? জামায়াত-শিবিরকে তা অবশ্যই পরিস্কার করতে হবে।

কওমির শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন, কওমি থেকে একজন শিক্ষার্থী আলীয়া মাদরাসায় কামিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। তাকে আগে অষ্টম, দাখিল, আলিম ও ফাজিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হতে হয়। অথচ শিবির সভাপতি মোবারক হোসাইন ইবতেদাইয়্যাহ (প্রাথমিক), মুতাওয়াসসিতাহ (নিম্নমাধ্যমিক), সানাবিয়্যাহ ‘আম্মাহ (মাধ্যমিক), সানাবিয়্যাহ খাসসাহ (উচ্চ মাধ্যমিক), মারহালাতুল ফজিলত (স্নাতক) এই স্তরগুলো না পড়ে হঠাৎ করে মারহালাতুত তাকমিল বা দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স সমমান) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেন। এটা কিভাবে সম্ভব হলো? কেন তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া হলো? আমি বলবো, এটি কওমি শিক্ষাব্যবস্থার আইনি দুর্বলতা। আর এ দুর্বলতাকে শিবিরের সভাপতিসহ অনেকেই কাজে লাগিয়েছেন। আগামীতে এসব বন্ধ করতে হলে কওমির শিক্ষা আইন সংস্কার করতে হবে। স্বকীয়তা বজায় রেখে অবশ্যই নীচের পাঁচটি স্তরকেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির আওতায় আনতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।