শিক্ষক ফোরামের মানববন্ধন: রিজেন্ট বোর্ডের সিন্ধান্তের অবমাননা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ২২ ২০২০, ২৩:১৯

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি: বেতন বন্ধ ও পদোন্নতি বাধাগ্রস্থ করাসহ বিভিন্ন হয়রানির অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছেন দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম।

বুধবার বেলা দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষক ফোরাম আয়োজিত এই মানবন্ধনে শিক্ষক ফোরামের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও অংশগ্রহণ করে প্রগতিশীল কর্মকর্তা ও সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ। শিক্ষকদের মানবন্ধনে শিক্ষার্থী কেন এ ব্যাপারে কয়েকজনের সাথে কথা বললেও তারা এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

মানববন্ধনে শিক্ষক ফোরামের নেতারা বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বেতন ভাতা বন্ধ, পদোন্নতিতে বাধাগ্রস্ত করাসহ বিভিন্নভাবে এই প্রশাসন আমাদের ফোরামের শিক্ষকদের হয়রানি করছে তারই প্রতিবাদে আমাদের আজকের এই মানববন্ধন।

মানববন্ধনে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা.এসএম হারুন-উর রশিদ বলেন, এর আগে আমরা বিভিন্ন দাবিতে তিন মাস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে রেখেছিলাম। পরে ছাত্রদের কথা বিবেচনা করে আমরা ক্লাস পরীক্ষায় ফিরে যাই। তখন আমরা বলেছিলাম আমাদের দাবি মানা না হলেও আমরা আবারও আন্দোলনে যাবো। আপনারা দেখেছেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় গত নিয়োগ নিয়ে কি রকম নিউজ হয়েছে। যা দেখে আমাদের মাথা হেড হয়ে যায়। কিন্তু এই প্রশাসন সেটাতে ভ্রুক্ষেপ না করে আবারও নিয়োগ সার্কুলার দিয়েছে এবং নিয়োগ বাছাই বোর্ডে নিজস্ব ব্যক্তিদের রেখেছেন। এটি সংশোধন করা না হলে আগামী রিজেন্ট বোর্ড হতে দেয়া হবে না।

তবে শিক্ষক ফোরামের করা নিয়োগের অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু.আবুল কাসেম বিভিন্ন সময়ে মিডিয়াকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেও এখন পর্যন্ত কেউই অভিযোগের কোন প্রমাণ দেখাতে পারেন নি। এছাড়া ঐ সময় নিয়োগ নিয়ে মিথ্যাচার ও ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারীদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

মানবন্ধনে শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. বলরাম রায় বলেন, অন্যায়ভাবে যে দুজন শিক্ষকের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তাদের বেতন চালু করতে হবে অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে শিক্ষক ফোরাম। সেই সাথে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ কমিটি সংশোধন না করে শিক্ষক নিয়োগের কোন প্রক্রিয়াতে না যাওয়ার দাবি জানান। এসময় পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ে আন্দোলনরত সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেন তিনি। তবে কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি।

শিক্ষক ফোরামের আন্দোলনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. শ্রীপতি সিকদার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের ৪৩তম সভায় প্রফেসর ড.মো.ফেরদৌস মেহবুব পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করার পূর্বেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্তভাবে ২ টি ইনক্রিমেন্ট গ্রহণ এবং প্রাপ্ত সুবিধাদি নেয়ায় তার বেতন হতে কর্তনের সিন্ধান্ত গৃহীত হয়৷ বিষয়টি ওই শিক্ষককে জানানো হলেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায় নি। এরপর নিয়মানুযায়ী হিসাব শাখা থেকে কিছু টাকা কর্তন করে বেতন বিলের কাগজ পাঠানো হলে তিনি সেটি না দিয়ে নিজের মত করে বেতন বিল তৈরী করেন যার কারণে অফিস থেকে বেতন দেওয়া সম্ভব নয় দেখে বেতন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

এসব বিষয়ের সঠিক কারণ খুজতে গিয়ে রিজেন্ট বোর্ডের ৪৩ তম সভার কার্যবিবরণীতে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফেরদৌস মেহবুব পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পূর্বেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে ২টি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট গ্রহণ করায়, রিজেন্ট বোর্ড তা বাতিল করার সিন্ধান্ত প্রদান করে। পিএইচডি ডিগ্রি না পেয়ে একজন শিক্ষকের এহেন মিথ্যাচারে রিজেন্ট বোর্ড বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং অভিমত প্রকাশ করেন যে,তার এ ধরনের কার্যকলাপ নৈতিক স্খলনের পর্যায়ে পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সংবিধির ৬ এর (১) ঘ) ও ৬ এর ২ চ) ও ছ) ধারা মোতাবেক অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক নিয়োগ বাছাই বোর্ডের জন্য ইতোপূর্বে মনোনীত সদস্যগণের মেয়াদ শেষ হওয়ায় রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক নতুন সদস্য মনোনয়নে প্রস্তাবিত নামসমূহের মধ্য হতে সার্বিক দিক বিবেচনা করে যেটি ভালো তা গ্রহণ করে বিষয় বিশেষজ্ঞ সদস্য মনোনয়নে ভাইস চ্যান্সেলরকে ক্ষমতা অর্পন করে মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি করা হয়।

অন্যদিকে, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো.আব্দুর রশিদ শরীর চর্চা বিভাগের দায়িত্বে থাকাকালীন আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় গেমস ২০১৭ এর জন্য গত ২ মার্চ ২০১৭ ইং তারিখে ২৫২৬৮৮৩ নং চেকের মাধ্যমে ৪ লক্ষ টাকা অগ্রিম গ্রহণ করেন। উক্ত অগ্রিম সমন্বয় প্রদানকালে একটি ভাউচারে ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা সমন্বয় করার জন্য উপস্থাপন করেন যা পিপিআর -২০০৮ মোতাবেক হয়নি এবং এ বিষয়ে অডিট আপত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। অসমর্থিত অর্থ বিধি মোতাবেক সমন্বয় করার জন্য হিসাব শাখা হতে পর্যায়ক্রমে দুইবার ইস্যু করলেও তিনি (এই শিক্ষক) কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না করায় সমুদয় অর্থ উক্ত শিক্ষকের মাসিক বেতন হতে ২৫ কিস্তিতে কর্তনের সিন্ধান্ত গৃহীত হয় বলে জানা গেছে।