সোনারগাঁওয়ে ৭০০ বছর পর যিনি হাদিসের দরস চালু করেছেন

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ২৩ ২০২১, ১৩:৩৩

শায়খুল হাদিস মাওলানা হাতেম আলী ঢাকুবী দা. বা. একজন প্রবীণ আলেম। বাংলাদেশে শায়খুল ইসলাম হজরত মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর সর্ব শেষ শাগরেদ।

হাটহাজারি হজরত আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. দেওবন্দের সাথী। হযরত হাফেজ্জী হুযুর রহ.-এর বিশিষ্ট খলীফা। দীর্ঘদিন যাবত তিনি বুখারী শরীফ দরস দানে নিয়োজিত আছেন।

প্রচারবিমুখ এই মহান ব্যক্তির বয়স এখন প্রায় ৯২ বছর। নারায়নগঞ্জ, সোনারগাঁ, পরমেস্বরদী এলাকায় তাঁর জন্ম।

তিনি নিজ গ্রামে জামিয়া আরাবিয়া পরমেস্বরদীতে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিলে তিলে গড়ে উঠা মাদরাসাটি এখন দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত উন্নিত হয়েছে।

১২৭৮ খ্রিস্ট সনে সোনারগাঁয়ে উপমহাদেশে সর্বপ্রথম হাদীসের দরস প্রদান করেছেন শায়খ শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামাহ রহ.। ১৩০০ খ্রিস্ট সনে তাঁর মৃত্যুর পর সোনারগাঁয়ে হাদীসের দরসের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে যায়। আল্লামা হাতেম আলী দা. বা. ৭০০ বছর পর পুনরায় সোনারগাঁয়ে হাদীসের দরসদান শুরু করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সুস্থতার সাথে দীর্ঘ হায়াত দান করুন,আমীন।

৭০০ বছর আগে

হজরত শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা রহ. আনুমানিক ৬৬৮ হিজরি (১২৭৭ খ্রিষ্টাব্দ) সনে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে দিল্লিতে আগমন করেন। তখন সুলতান গিয়াসুদ্দীন বলবনের শাসনকাল। সুলতানের অনুরোধে ১২৭৮ সালে দ্বীন প্রচারের জন্য তিনি আগমন করেন সবুজ শ্যামল এই বাংলায়। তৎকালীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁওয়ে এসে দ্বীন প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। এখানে গড়ে তোলেন একটি বৃহৎ মাদরাসা ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরি।

ঐতিহাসিকদের মতে, এটিই উপমহাদেশে ইলমে হাদীসের সর্বপ্রথম বিদ্যাপীঠ। অল্প দিনে মাদরাসার খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সূদূর দিল্লি ও সেরহিন্দ থেকেও ছাত্ররা তার কাছে ইলমে দ্বীন ও ইলমে হাদীস অর্জনের উদ্দেশ্যে ছুটে আসতে থাকে। জানা যায়, তখন এ মাদরাসার ছাত্রসংখ্যা ছিল ১০ হাজার। বহুসংখ্যক মুহাদ্দিসও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

শায়েখ আবু তাওয়ামা আমাদের এই বাংলায় দীর্ঘ ২৩ বছর ইলমে দ্বীনের খেদমত করার পর ৭০০ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকালের পরও বহুদিন মাদরাসাটি টিকে ছিল। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কালের পরিক্রমায় মাদরাসাটি বন্ধ হয়ে যায়।

একসময় তা পরিণত হয় মানুষের আবাসস্থলে। মুছে যেতে থাকে একজন মনীষীর নাম। কালের ধুলোয় বিলীন হয়ে যায় একটি ঐতিহাসিক মাদরাসা। কালের সাক্ষী হিসেবে থেকে যায় ঐতিহাসিক বিদ্যাপীঠটির চুন-সুরকির কিছু ধ্বংসাবশেষ।

যেতে যেতে প্রায় ৭০০ বছর কেটে যায় এভাবে। এখন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া গ্রামে গেলে অবহেলা আর অযত্নে ভগ্নপ্রায় একটি ঐতিহাসিক দালান দেখা যাবে।

বর্তমানে ঐতিহাসিক বিদ্যাপীঠটির ভবনের কিছু ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। ভবনের দেয়ালগুলোতে বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্রাকার চতুষ্কোণবিশিষ্ট খোপ রয়েছে। যেখানে ছাত্রদের কিতাবাদি থাক। ভবনের পূর্ব পাশ দিয়ে একটি অপ্রশস্ত সিঁড়ি ভূগর্ভস্থ কুঠুরিতে চলে গেছে।

স্থানীয়রা তাকে ‘আন্ধার কোঠা’ বলে। শায়েখ এই কুঠুরিতে বসে নির্জনে জিকির ও ইবাদত করতেন। টিকে থাকা এ জীর্ণ ভবনটির লাগোয়া অনেক ভবন ছিল, যা ইতিমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে।