শায়খুল হাদিসের রহ. জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভায় শীর্ষ আলেমরা: মাওলানা মামুনুল হকসহ আলেমদের মুক্তি দিন

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ৩০ ২০২২, ১৭:১৪

দেশের প্রয়াত শীর্ষ আলেম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের সন্তান মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তি দাবি করেছেন দেশের শীর্ষ আলেমরা। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, প্রয়াত শায়খুল হাদিসের সম্মান রক্ষার্থে মামুনুল হকসহ কারাগারে অন্তরীণ আলেমদের মুক্তি দেবে সরকার।

শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর গুলিস্তানের কাজি বশির উদ্দিন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দেশের শীর্ষ আলেমরা এসব দাবি করেন। সভার আয়োজন করে শাইখুল হাদীস পরিষদ। এতে সভাপতিত্ব করেন শায়খুল হাদিস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক।

সভায় হাজার হাজার আলেম-উলামা, ছাত্রজনতা মিলনায়তন ও তার আশপাশে অবস্থান নেন।

আলোচনায় অংশ নেন হেফাজেেতর আমীর আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী (প্রতিনিধির মাধ্যমে), মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর; সিলেট দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মহিব্বুল হক গাছবাড়ী; বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা ইসমাইল নুরপুরী; হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস আল্লামা আশরাফ আলী নিজামপুরী, পটিয়া মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা আবু তাহের নদভী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াতের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমেদ, বিশিষ্ট লেখক মাওলানা যাইনুল আবেদীন, জমিয়ত নেতা মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, জামিয়া মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়ার মুহতামিম আল্লামা আবুল কালাম; বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু, জমিয়ত নেতা মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান মুফতি মাওলানা এনামুল হক, উজানী মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মাহবুবে এলাহী, ইত্তেফাকুল উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহীর মাওলানা মুফতি মাহবুবুল্লাহ, হাইআতুল উলইয়ার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা ইসমাইল বরিশালী, মানিকগঞ্জের পীর মাওলানা সাঈদ নূর, চরমোনাই পীরের প্রতিনিধি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, বিশিষ্ট লেখক মাওলানা লিয়াকত আলী প্রমুখ।

সভায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর দেওয়া লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রামের জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি মুহাম্মাদ ইকবাল। লিখিত বক্তব্যে শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘ঈমানী আন্দোলনে শাইখুল হাদীস রহ. কোনো ভয়ভীতি, মামলা-হামলার তোয়াক্কা করেননি। পাহাড়সম দৃঢ়তা নিয়ে রাজপথে ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য অনেক কুরবানি তাকে পেশ করতে হয়েছে। তিনি বার বার কারাবরণ করেছেন কিন্তু ঈমানী আন্দোলন থেকে একচুল পিছপা হননি।

তিনি বলেন, আজকে শাইখুল হাদীস রহ. এর জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তার কলিজার টুকরা, আমার অত্যন্ত স্নেহের পাত্র মাওলানা মামুনুল হকের কথা। তিনি প্রায় দেড় বছর যাবত কারাবন্দী। আমি সরকারের কাছে আহবান জানাই যে, তাকেসহ সকল উলামায়ে কেরামকে অবিলম্বে মুক্তি দিন।

তিনি আরো বলেন, অনেকেই আমাকে বলে, এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় আছে, তারা আলেমদেরকে মুক্তি দিবে না। আমি একথা বিশ্বাস করতে চাই না। আমি আশা করি, সরকার আমাদের দাবি মানবে এবং সকল আলেমদের মুক্তি দেবে।

শায়খুল হাদিসের রাজনৈতিক অবদান উল্লেখ করে আলেমদের উদ্দেশ্যে হেফাজতের আমির বলেন, এই সময়ে আলেম সমাজকে নিজেদের ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে হবে। অনেকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য, কিছু পাওয়ার আশায় মূল কাজ থেকে সরে গিয়ে এদিকে-ওদিকে ছুটোছুটি করছি। যা আলেমদের ঐতিহ্যের বিরোধী। এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা ইসমাইল নুরপুরী বলেন, ‘আল্লামা মামুনুল হকসহ অনেক আল্লামাকে জেলের মধ্যে আবদ্ধ রেখেছে এই সরকার। সরকারকে বলতে চাই, আপনারা ওলামাদের অশ্রুর জলকে এ্যাটমবোম বানাবেন না। অনতিবিলম্বে আল্লামা মামুনুল হকসহ সকল আলেমদের মুক্তি দিন। তাহলে দেশে শান্তি নাযিল হবে।’

অনুষ্ঠানে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, ‘শাইখুল হাদিস বলতে বাংলাদেশে একমাত্র শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হককেই বোঝায়। তার জীবনের খেদমতের জন্য যেন আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তার মত মানুষের প্রয়োজন বড় আকারে অনুভব হচ্ছে। আমরা যদি এক হতে পারি তাহলে কোন বাঁধাই আমাদের বাধা হতে পারবে না। আসুন আমরা এক হই নেক হই।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন,‘শায়খুল হাদীসের রেখে যাওয়া সব কিছু আমাদের কাছে আমানত। তিনি তার পরিবারকে আমাদের কাছে যেভাবে রেখে গেছেন, এটাও আমাদের কাছে অনেক বড় আমানত। এই আমানতের কদর করা, তাদের পাশে থাকা, সকল কর্মকাণ্ডের তাদের সহযোগিতা করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। শায়খুল হাদীসের পরিবারের সদস্য আমার ছোট ভাই মামুনুল হক। এই দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শায়খুল হাদীসের অনেক অবদান রয়েছে। তার সেই ভূমিকার হক আদায় স্বরূপ, তার হাতেগড়া, তার হাদীসের মসনদে বসে, তার সন্তান আল্লামা মামুনুল হককে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে, সরকারের কাছে আহবান করবো, তাকে মুক্তি দিবেন। শায়খুল হাদিসের রহমাতুল্লাহর সম্মান রক্ষার্থে, তাকে মুক্তি দিন।’

সভায় বক্তাগণ বলেন, ‘শায়খুল হাদীস রহ. চলে যাওয়ার পর আল্লামা আহমদ শফী রহ, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ., আল্লামা নুর হুসাইন কাসেমী রহ. সহ আরও অনেক ওলামায়ে কেরাম কওম ও মিল্লাতের নেতৃত্বের কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। তারা যখন আখেরাতের পথিক হলেন, তখনই আল্লাহ তাআলা শাইখুল হাদীস রহ.-এর সুযোগ্য ছাহেবজাদা আল্লামা মামুনুল হকসহ একঝাক সাহসী উলামাকে ময়দানে নিয়ে আসলেন। কিন্তু দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের ফলে তিনিও আজ জেলবন্দী।’

আলেম সমাজকে সতর্ক হতে হবে উল্লেখ করে বক্তাগণ আরো বলেন, ‘আমরা ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছি। আমাদের সমস্যা আমাদেরকেই সমাধান করতে হবে। কেউ আমাদের সমাধান দেবে না। বুর্জুয়া শক্তির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গিয়ে সমাধান পাওয়া যাবে না। বড়জোর তারা নিজেদের মতলবকে প্রাধান্য দিয়ে সমাধান চাপিয়ে দেবে। আমরা ইসলামপন্থীরা যদি এক হই, তাহলে আমাদেরকে দেশের আপামর মানুষ স্বাগত জানাবে।’