শায়খুল হাদিস মুফতি ইউসুফ শ্যামপুরীর সংগ্রামী জীবন; টুকরো কিছু কথা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ০২ ২০২৩, ১৬:৪১

আবদুল্লাহ বিন ইসমাঈল: হরিপুর জামিআ সিলেটের শাইখুল হাদীস, প্রভাবশালী আলেম, বিদগ্ধ হাদীস বিশারদ, বিজ্ঞ ফকীহ, মুত্তাবিউস সুন্নাহ, সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুযুর্গ,বাতিলের বিরুদ্ধে আপোষহীন সিপাহসালার,শাইখ ইউসুফ শ্যামপুরী রাহিমাহুল্লাহ ৫ ই এপ্রিল ১৯৪৪ সালে সিলেট জেলার, জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এলাকার হেমু দক্ষিণ ভেলোপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার মুহাম্মদ আবদুল করীম।

হরিপুর মানেই মুফতি ইউসুফ সাহেব! মুফতি ইউসুফ সাহেব মানেই হরিপুর। শাইখ আবদুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহর পর যার অবদান হরিপুর মাদরাসার জন্য সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন শাইখ মুফতি ইউসুফ সাহেব শ্যামপুরী রাহিমাহুল্লাহ।

বাতিলবিরোধী সংগ্রামের অগ্রসৈনিক শাইখে হরিপুরী রাহিমাহুল্লাহর সুযোগ্য জানিশিন ও উত্তরসূরী, তাঁর ফিকরের হামিল, বাতিল ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইস্পাতকঠিন দৃড় ব্যাক্তিত্ব শাইখ মুফতি ইউসুফ সাহেব রাহিমাহুল্লাহ।

বৃহত্তর জৈন্তার আপোষহীন রাহবার, সকল বাতিলের চক্ষুশূল, ন্যায়ের মূর্তপ্রতীক, সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ আলেম ও মুরব্বি শাইখ মুফতি ইউসুফ সাহেব শ্যামপুরী রাহিমাহুল্লাহ।

তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন হেমু মাদরাসা মাদরাসায়, এরপর কিছুদিন চিকনাগুল মাদ্রাসায় পড়ে পূণরায় হেমুতে মিযান জামাতে ভর্তি হয়ে মিশকাত পর্যন্ত পড়েছেন।

এছাড়াও জামিআ কুরআনিয়া লালবাগ, দারুল উলুম কানাইঘাট, ও দরগাহপুর মাদরাসা সুনামগঞ্জে পড়েছেন।

আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রাহিমাহুল্লার ইলমের সাগরের ঝর্ণাধারা থেকে জ্ঞানার্জন করে নিজেকে সিক্ত করেন শাইখ মুফতি ইউসুফ সাহেব শ্যামপুরী রাহিমাহুল্লাহ।

এ ধারায় তিনি কাশ্মীরী রাহিমাহুল্লাহর নাতি ছাত্র।তার শাইখ হলেন বিখ্যাত হাদীস বিশারদ মাওলানা রিয়াসত আলী শাইখে চকরিয়া। অপরদিকে তিনি শাইখুল ইসলাম মাদানি রাহিমাহুল্লাহরও নাতি ছাত্র।

১৯৭২ সালে আযাদ দ্বীনী এদারার অধীনে দাওরায়ে হাদিসের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় হাজারো ছাত্রের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন শাইখ মুফতি ইউসুফ রাহিমাহুল্লাহ।

এরপর দুই বছর উম্মুল মাদারিস হাটহাজারী মাদ্রাসায় দুই তাফসির, হাদীস, ফিকহ ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন করেন।

তাঁর উস্তাদদের অন্যতম হলেন মাওলানা মুফাজ্জল হুসাইন সিকন্দরপুরী, মাওলানা মুখলিসুর রহমান হবিগঞ্জী, মাওলানা তাহিরপুর আলি তৈপুরী, মাওলানা জামশেদ আলী মির্জারগড়ী, মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী রাহিমাহুমুল্লাহ।

দারুল উলুম হেমু মাদ্রাসায় ৭ বছর ও মাদরাসাতুল উলুম হরিপুর মাদ্রাসায় ৪৩ হাদীস তাফসির ও ফিকাহ ইত্যাদির দারস প্রদান করেন শাইখ মুফতি ইউসুফ সাহেব শ্যামপুরী রাহিমাহুল্লাহ।

হরিপুর মাদ্রাসা মাদরাসার প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে হেমু ত্যাগকারী ১৩ জন উস্তাদদের শীর্ষতম ব্যক্তি হলেন শাইখ মুফতি ইউসুফ সাহেব শ্যামপুরী রাহিমাহুল্লাহ।

মুজাহিদে মিল্লাত শাইখ আবদুল্লাহ হরিপুরী রাহিমাহুল্লাহর সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও আস্থাশীল ব্যাক্তিত্ব হলেন শাইখ মুফতি ইউসুফ সাহেব শ্যামপুরী রাহিমাহুল্লাহ।

শাইখে হরিপুরী রাহিমাহুল্লাহর প্রধান খলীফা যাকে ১৯৯২ সালে সিলেটস্থ শাহ আবু তুরাব মসজিদে শত শত মানুষের সামনে খেলাফত প্রদান করেন তিনি শাইখ মুফতি ইউসুফ সাহেব শ্যামপুরী রাহিমাহুল্লাহ।

শাইখে হরিপুরী রাহিমাহুল্লাহর জীবদ্দশায় যাকে সহীহ মুসলিমের দারসের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি হলেন শাইখ মুফতি ইউসুফ সাহেব শ্যামপুরী রাহিমাহুল্লাহ।

শাইখে হরিপুরী রাহিমাহুল্লাহর ইন্তেকালের পর যাকে সর্বসম্মতিক্রমে হরিপুর জামিআর শাইখুল হাদীসের মহান দায়িত্ব অর্পণ করা হয় তিনি শাইখ মুফতি ইউসুফ সাহেব শ্যামপুরী রাহিমাহুল্লাহ।

শাইখে হরিপুরী রাহিমাহুল্লাহর আমৃত্যু যিনি সর্বদা সঙ্গ দিয়ে, সর্বস্ব দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তিনি শাইখ মুফতি ইউসুফ সাহেব শ্যামপুরী রাহিমাহুল্লাহ।

জামিআর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত হাজার হাজার ছাত্রের প্রিয় শাইখ, আস্থা,আশা-ভরসাস্থল, হৃদয়ের স্পন্দন, প্রাণাধিক প্রিয় উস্তাদ হলেন শাইখ মুফতি ইউসুফ শ্যামপুরী রাহিমাহুল্লাহ।

জামিআর বর্তমান স্টাফের শাইখে সানী থেকে মক্তবের উস্তাদ পর্যন্ত প্রায় সকলের উস্তাদ ও শাইখ হলেন মুফতি ইউসুফ সাহেব শ্যামপুরীররাহিমাহুল্লাহ।

আজকের জামিআর সুবিশাল নতুন ভবন, বিশাল দ্বিতল মসজিদ নির্মাণে যার অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন শাইখ মুফতি ইউসুফ শ্যামপুরী রাহিমাহুল্লাহ।

জামিআর শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ছাত্র গঠনে যিনি অতুলনীয় তিনি শাইখ মুফতি ইউসুফ সাহেব শ্যামপুরী রাহিমাহুল্লাহ।

শাইখ ছিলেন বালিপাড়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম, সারিঘাট মহিলা মাদরাসা ও লংপুর মাদ্রাসার মুহতামিম। বারুতখানা মাদরাসা চিকনাগুল মাদরাসা, বাগেরখাল মাদরাসা, রাহমানিয়া মাদ্রাসার শাইখুল হাদীস।

সর্বোপরি শাইখে শ্যামপুরী এখন চার দেয়ালের ভেতরের কোন ব্যাক্তি নন। তিনি এখন উলামা, তুলাবা ও আমজনতার চোখের মণি। তিনি এখন সার্বজনীন ব্যাক্তিত্ব। হকের পথে অটল অবিচল এই মহিরুহ, যার ভয়ে কাঁপে সব বাতিল, অন্যায়কারী এমনকি প্রশাসন।

যিনি তাঁর জীবন-যৌবন যে প্রতিষ্ঠানের জন্য বিলিয়ে দিলেন অকাতরে। উজাড় করে দিলেন অর্থ ও সামর্থ্য সবকিছু।

আজ সেই প্রতিষ্ঠান থেকে নাকি অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। নেসাব বাদ দেয়া হয়েছে তাঁরই জীবদ্দশায়। দুঃখ নেই তাদের প্রতি যারা এর কলকাঠি নাড়ছে।তারা তো তার উচিৎ বদলা পাবে।

তবে দুঃখের কথা হলো, এক বুক ব্যাথা নিয়ে চলে গেলেন প্রিয় শাইখ রাহিমাহুল্লাহ আপন রবের কাছে। আরেকটু কি অপেক্ষা করা যেতো না!?

এ দুঃসংবাদটি শুনে হৃদয় দুমড়ে মুচড়ে গেলো। ভেঙে গেছে হাজারো ফাযিল ও হিতাকাঙ্ক্ষীর হৃদয়। শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো সিলেট জুড়ে।

আল্লাহ হযরতকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। আমাদেরকে সবরে জামীলের তাওফিক দান করুন। নি’মাল বদল দান করুন।

লেখক: ফাযিল, হরিপুর বাজার মাদরাসা