শরিয়তের গন্ডির মধ্যেও রাজকীয় বিয়ে অনুষ্ঠান সম্ভব

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

নভেম্বর ১৪ ২০২২, ০০:৫২

গায়ে হলুদের নামে গান বাজনা, ব্যান্ড পার্টি বাজিয়ে বর যাত্রা এসব অনৈসলামিক কার্যক্রম না করেও সম্পূর্ণ শরিয়তের গণ্ডির ভেতরে থেকেও যে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান রজকীয়ভাবে, ধুমধামআয়োজন করা যায় সেটা দেখিয়ে দিলেন পোল্যান্ড প্রবাসী শ্রীমঙ্গলের মোঃ রাজু আহমদ দোলন।

ছোটবেলা থেকেই রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠান, হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। অবশেষে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। নতুন বউকে হেলিকপ্টারে উড়িয়ে বাড়িতে এনেছেন।

প্রবাসী রাজু আহমদ দোলন শ্রীমঙ্গল শহরতলীর মুসলিমবাগ আবাসিক এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন এর বড়পুত্র। তার মায়ের নাম রুবিনা বেগম।

 

গত বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) শহরতলীর কালিঘাট রোডস্থ চলন্তিকা মাঠ থেকে মা,বাবা, ভাই, বোন-কে সাথে নিয়ে হেলিকপ্টার চড়ে কনে আনতে যান পাঁচ তারকা রিসোর্ট শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে। এর আগে গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট অ্যান্ড গল্ফ এর কনভেনশন হলে তাদের বিবাহোত্তর ওয়ালিমা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

বিয়ের আগের দিন রাতে গায়ে হলুদের নামে গান-বাজনা, নাচের অনুষ্ঠান না করে ইসলামি গজল সন্ধ্যার আয়োজন করেন তিনি। দাওয়াত দিয়ে এনেছেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান নাশিদ আর্টিস্ট কলরব শিল্পী গোষ্ঠীর গীতিকার ও সুরকার আহমদ আব্দুল্লাহ, দেশব্যাপী সুপপরিচিত তরুণ নাশিদ শিল্পী শেখ এনাম, কৌতুক অভিনেতা ‘বিনোদন বন্ধু খান সাহেব’ খ্যাত মুহিউদ্দীন হাসান খান, আবাবিল সাংস্কৃতিক ফোরাম পরিচালক শাহ মিসবাহসহ স্থানীয় শিল্পীরা রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ইসলামী সংগিত পরিবেশ করে দর্শক শ্রুতাদের মাতিয়ে রাখেন।

বরকে নিতে স্থানীয় চলন্তিকা মাঠে হেলিকপ্টারটি অবতরণ করলে শত শত উৎসুক নারী-পুরুষ এবং শিশু-কিশোরেরাও ভিড় জমান।

কনে মোছাঃ আছমা আক্তার ইতি একই এলাকা মুসলিমবাগ এলাকার বাসিন্দা মৃত নুরুল ইসলাম ও মরহুমা রাহেলা ইসলামের কনিষ্ট কন্যা। কনের বড় বোন শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী স্কুল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাসুদা বেগম। জন্মসুত্রে রাজু আহমেদ দোলন বাংলাদেশী হলেও তিনি এখন পোলিশ নাগরিকও (পোল্যান্ডের নাগরিক)। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের সাবেক শ্রীমঙ্গল উপজেলা সভাপতি ছিলেন।

রাজু আহমেদ মিডিয়াকে জানান- “প্রায় এক যুগ আগে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসায় প্রথমে ইংল্যান্ড পাড়ি জমান। সেখানে ব্যবসার উপর ডিপ্লোমা শেষ করে দেশে ফিরে আসেন। দেশে কিছুদিন বাবার ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা করে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে পোল্যান্ড চলে যান। সেখানে প্রথমে একটি রেস্টুরেন্টে জব নেন। এরপর তিনি নিজে একটি হালাল রেস্টুরেন্ট এর ব্যবসা শুরু করে। ধীরে ধীরে ব্যবসা বড় হতে চললো। পর্যায়ক্রমে তিনি রাজু কেবাব, বার্গার এবং ইন্ডিয়ান নামে আরও ৩টি হোটেল অ্যন্ড রেস্টুরেন্ট এর শাখা চালু করেন।
এসবের সত্ত্বাধিকারীও তিনি। প্রবাসে তিনি একজন তরুণ সফল উদ্যোক্তা এবং ববসায়ী।

 

হেলিকপ্টার নিয়ে বিয়ে করার উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান- “ছোটবেলা থেকেই একটা ইচ্ছে ছিল যে হেলিকপ্টার চড়ে বউ আনতে যাবো। আলহামদুলিল্লাহ হেলিকপ্টার চড়ে বউ এনে ছোটবেলার স্বপ্নটা পুরণ হলো। আল্লাহতায়ালে আমার মনের আশাটা পূরণ করলেন। দুআ করবেন সবাই আল্লাহ যেন আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন এবং আমাদের জুটিটাকে জান্নাতুল ফেরদাউস পর্যন্ত কবুল করেন।”

তিনি আরো জানান-“আমার বিবাহকে জাঁকজমকভাবে শুধুমাত্র অনুষ্ঠান করা উদ্দেশ্য ছিল না। উদ্দেশ্য ছিলে সমাজে একটি বার্তা দিতে যে, ইসলামি শরিয়াহ এর মধ্যে থেকেও জাঁকজমকভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করা যায়, যেমনটি আমি করেছি।

সমাজে প্রত্যেকটি বিয়েতে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের নামে যে পরিমাণ বেহায়াপনী করা হয়, গান-বাজনা, ড্যান্স, মেয়েদের অবাধ মেলামেশা সেটা না করে জমকালোভাবে আমি ইসলামী গজল সন্ধা করেছি। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের বিপরীতে ইসলামী গজল সন্ধার আয়োজন করি।

রাজু আহমেদ দোলন আরো বলেন, “আমার বিবাহত্তোর ওয়ালিমা পাঁচ তারকা মানের হোটেল করেেলা আমার স্ত্রীকে পরিপূর্ণ পর্দার মধ্যে রেখেছি। শ্রীমঙ্গল এর মধ্যে প্রথম আমি হেলিকাপ্টার নিয়ে স্ত্রীকে আনতে গিয়েছি, কিন্তু কোনো ধরণের ব্যান্ড পার্টি দাওয়াত করিনি। আমার অনুষ্ঠানকে আমি চেষ্টা করেছি ইসলামী শরিয়তের ভেতরে থেকে প্রাণবন্ত করতে। বিয়েতে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মো. মহসিন মিয়া মধু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব প্রফেসর ড. আহমদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিলাল আহমদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশার ৪শ অতিথিকে ইনভাইট করেছিলাম পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতানে। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা আদায় করছি।”