শবে মেরাজ : বর্জনীয় কতিপয় দিক

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ২৩ ২০২০, ০১:৫৩

।। আবদুল কাইয়ুম শেখ ।।

শব একটি ফার্সি শব্দ। এর অর্থ হলো রাত। আর মেরাজ আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো ঊর্ধ্বগমন। যেহেতু আল্লাহ তাআলার ডাকে সাড়া দিয়ে মহানবি সা. এক রাতে ঊর্ধ্বজগতে ভ্রমণ করেছিলেন তাই সেই রাতকে শবে মেরাজ বলা হয়। আরবি ভাষায় তাকে লাইলাতুল মেরাজ বলেও অভিহিত করা হয়।

শবে মেরাজকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে বেশকিছু বিদআত ও কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। সেগুলোর মূলোৎপাটন করা জরুরি। তাই বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে আমরা এমন কিছু বিষয়ে আলোচনা করতে চাই :

শবে মেরাজ উদযাপন

কোনো কোনো এলাকায় ঘটা করে শবে মেরাজ উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে সভা, সেমিনার ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এগুলোর কোনো ভিত্তি শরিয়তে নেই। কেননা মেরাজের ঘটনা সংঘটিত হবার পর মহানবি সা. এক যুগেরও বেশি সময় জীবিত ছিলেন। এই দীর্ঘ সময়ে কখনো তিনি শবে মেরাজ উদযাপন করেন নি। সাহাবায়ে কেরামকেও তা উদযাপন করার কোনো দিক নির্দেশনা প্রদান করেন নি। যদি শবে মেরাজ পালন করা শরয়ি কোনো বিষয় হতো, তা হলে অবশ্যই মহানবি সা. উম্মতকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করতেন। সাহাবায়ে কেরামও বিষয়টি আমাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। তাই দ্বীন ভেবে শবে বরাত ও কদরের মতো লাইলাতুল মেরাজকে মর্যাদাপূর্ণ মনে করে তা উদযাপন করতে যাওয়া বর্জনীয়। এ ব্যাপারে শাইখ ইবনে বায রহ. বলেন, ‘যদি শবে মেরাজ বিশেষ কোনো মর্যাদাপূর্ণ রাত হতো এবং এ রাতের আচার-অনুষ্ঠান শরয়ি কোনো বিষয় হতো, তা হলে মহানবি সা. এ ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকতেন না। যেহেতু তিনি নিশ্চুপ থেকেছেন, তাই বুঝা গেল এ রাতে সভা-সেমিনার বা আচার অনুষ্ঠান করা এবং একে মর্যাদাপূর্ণ মনে করা শরিয়তে অনুমোদিত নয়।’

নামায ও রোযা আদায়

অনেক পুরুষকে শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ নামায আদায়ের জন্য মসজিদে সমবেত হতে দেখা যায়। বহু নারীও সেই রাতে নামায আদায় করার পদ্ধতি কী তা জানতে চান। বহু লোক রজব মাসের প্রথম শুক্রবার এবং ১০, ১৫ ও ২৭ তারিখে রোযা রাখাকে আশুরা ও আরাফার রোযার মতো ফযিলতপূর্ণ মনে করেন। নামায আদায় করা ও রোযা রাখা অবশ্যই পুণ্যের কাজ। কিন্তু শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ কোনো নামায ও রোযা শরিয়তে নেই। এ ব্যাপারে আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি রহ. তৎপ্রণীত লাতায়েফ ও মাআরেফ গ্রন্থে বলেন, ‘রজব মাসের সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষ কোনো নামায নেই। রজব মাসের প্রথম জুমায় সালাতুর রাগায়েব প্রসঙ্গে যেসব হাদিস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট। অধিকাংশ আলেমের মতে এই নামায বিদআত। পরবর্তী যুগের আলেমগণের মধ্যে যারা এই মত ব্যক্ত করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আবু ইসমাঈল আনসারি, আবু বকর সামআনি, আবুল ফযল ইবনে নাসির ও আবুল ফারায ইবনে জাওযি রহ.সহ আরো কতিপয় আলেম। পূর্ববর্তী যুগের আলেমগণ এ ব্যাপারে আলোকপাত করেন নি। কেননা এই বিদআত হিজরি চতুর্থ শতাব্দির পর প্রকাশ পেয়েছে। নবি করিম সা. এবং সাহাবায়ে কেরাম হতে রজব মাসের রোযা সম্পর্কেও বিশুদ্ধ কোনো হাদিস বর্ণিত নেই।’

আলোকসজ্জা ও তবারক বিতরণ

শবে মেরাজকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো মসজিদে ব্যাপকভাবে আলোকসজ্জা করা হয়। বিভিন্ন মাযার ও মসজিদে শিরনি এবং তবারক বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে নরনারীর নির্লজ্জ সম্মিলনও ঘটে থাকে। এসব নবউদ্ভাবিত বিদআতি কর্মকা- হবার কারণে নিষিদ্ধ ও বর্জনীয়। হাদিস শরিফে এসেছে, মহানবি সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে নতুন কোনো বিষয় উদ্ভাবন করে তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৬৯৭)

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এতে কোনো অপূর্ণতা নেই। তাই তাতে নতুন কিছু প্রবিষ্ট করারও কোনো প্রয়োজন নেই। ইসলামের পূর্ণাঙ্গতার ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩) তাই, নবসৃষ্ট বিষয়কে শরিয়ত বলে চালিয়ে দেওয়া ও তা পালন করা হতে বিরত থাকা সকলের জন্য একান্ত অপরিহার্য।