লিঙ্ক শেয়ার। মাহমুদুল্লাহ মুহিব

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ২৭ ২০১৯, ১২:৪২

রাত তখন প্রায় তিনটা।হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াই কেমন হাঁসফাঁস লাগছিলো।বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা নিয়ে বারান্দার রেলিঙয়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালাম।

ডি আইটি রোডে মানুষের হুড়োহুড়ি নেই এখন। ফুটপাত খালি।কিছুক্ষণ পরপর কাভার্টভ্যানের শাঁ শাঁ আওয়াজে চারপাশ  জেগে উঠে মুহূর্তেই নীরব হয়ে যাচ্ছে।বড় অদ্ভুত মধ্যরাতের এ শহর!

ফেসবুকে নিউজ ফিড ঘাঁটছি।নতুন কোন খবর নেই।হয়তো আপডেট কোন ইস্যু তৈরী হয়নি এখনো।তবে কয়েক দিনের পুরোনো ব্যাপরটা নিয়েই মাতামাতি চলছে পুরোদমে।ডিসি সাহেবের নারী কেলেঙ্কারির খবরে দেশ গরম আপাতত। পরিচিত কয়েকজনের পোস্ট চোখে পড়লো। ডিসিকে ইচ্ছেমতো খিস্তি খেউড় করেছে সেখানে।মহিলাটা যে চব্বিশ মিনেটের মধ্যে একবারও মুখের স্কার্ফ খুলেনি সেটা নিয়ে কেউ কেউ লিখছে। অন্য কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে হয়তো।বাঙ্গালী বলে কথা! সব কিছুর মধ্যেই ভিন্ন কিছু একটা না বের করতে পারলে চুলকানি কমে না।

বিলু সরদার।এলাকার সবাই পাড়ার দালাল হিসেবেই চিনে তাকে।ফেসবুক আইডির নাম ‘সত্যিকারের মানুষ’।মধ্যরাতে ডিসির অপকর্ম নিয়ে বেশ লম্বা একটা স্ট্যাটাস দিয়েছে সে।’ ছি ছি! এমন কাজ ডিসি কীভাবে করতে পারলো!তার কঠিন শাস্তি হতে হবে।এমন নষ্ট পুরুষ বেঁচে থাকারই তো অধিকার নেই পৃথিবীতে।আর মেয়েটাওতো কম না! চাকরির জন্য নিজের শরীর বিলিয়ে দিতে হবে!বেশ্যাগিরী!আস্তাগফিরুল্লাহ!

আমার ইচ্ছে করছে কমেন্ট বক্সে তাকে বলি,এগুলো বাদ দিয়ে আপনি যে পাড়ার দালালী করেন সেটা নিয়ে কিছু বলেন;কিন্তু বলতে পারছি না।কারন,আইডির নাম সত্যিকারের মানুষ ।লোকে আবার কী মনে করে!

প্রীতি ম্যডামকে এত রাতে অনলাইনে দেখে একটু চমকে গেলাম আমি। তিনি তো এতক্ষণে ঘুমিয়ে পরার কথা! রাতজাগা তার পছন্দ না।আমাকে তিনি প্রায়ই জ্ঞান দেন এ বিষয়ে।রাতে দেরী করে ঘুমালে স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়। তার নাকি ছোট থেকেই আগে আগে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস।দেখা হলেই আমাকে বলে,’ফেসবুকে, ইমুতে সময় কম দিবা।ভদ্র ছেলে মেয়েরা এসব চালায় না।আমাকে দেখো না?সপ্তাহে একবার লগইন করি দুই তিন মিনিটের জন্য।দেশের হালচালটা দেকি শুধু।বুচ্ছ!’

জি,ম্যডাম।

প্রীতি ম্যডামের সঙ্গে  কথা বললেই এই উপদেশগুলো শুনতে হয় আমাকে।আচ্ছা,প্রীতি ম্যডামের পরিচয়টাইতো দেয়া হয়নি এখনো।

তিনি একটা নারী সংঘটনের বড় নেত্রী।পল্টনের এক পত্রিকা অফিসে তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়।কী এক সমাবেশের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য এসে ছিলেন সেখানে।আমি গিয়ে ছিলাম লেখার বিল আনতে।তখন টুকটাক কথা হয়েছে।যাবার সময় তার একটা ভিজিটিং কার্ড আমার  হাতে ধরিয়ে গেছে ।পরে কীভাবে যেনো ফেসবুকে খুঁজে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পঠিয়েছে। এভাবেই পরিচয় তার সাঙ্গে আমার।

ইনবক্সে লাল বাত্বি জ্বলছে।ক্লিক করতেই দেখি ‘সত্যিকারের মানুষ’ আইডি থেকে দুইটা লিঙ্ক শেয়ার করেছে।তার পর লিখেছে, ‘প্লিজ! লিঙ্ক দুটো সবার কাছে ছড়িয়ে দিন।এসব লুচ্চাদের মুখোশ জাতির সামনে প্রকাশ করতে সহায়তা করুন। ‘

লিঙ্কে ক্লিক করলাম।চার মিনেটের একটা ভিডিও।নারী ঘটিত ব্যাপার স্যাপার।১৮+যাকে বলে! মহিলাটাকে চেনা চেনা লাগছে।আরে এতো আমাদের প্রীতি ম্যডামরে!

আজকের ভাইরাল টপিক এটা।নেতার সঙ্গে নেত্রীর গোপন ভিডিও ফাঁস।প্রীতি ম্যডাম ইনবক্সে সালাম পাঠিয়েছে আমাকে।

কী করবো এখন? উত্তর দেবো নাকি লিঙ্কটা শেয়ার করে দেবো তার কাছে?

ভাবনায় পরে গেলাম।ইনবক্সে কিছু একটা লিখছেন তিনি।টাইপিংদেখাচ্ছে।আমাকে এই মধ্যরাতে অনলাইনে পেয়ে হয়তো আমার জন্য নসীহতনামা তৈরী করছেন।আমি হঠাৎ কী মনে করে যেনো  পাড়ার দালালের পাঠানো লিঙ্কটা প্রীতি ম্যডামের ইনবক্সে শেয়ার করে দিলাম।প্রীতি ম্যডাম লেখা শেষ হলে নসীহতনামা পাঠাবেন হয়তো; আমি অপেক্ষায় আছি।