রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ও আইনের শাসন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ফেব্রুয়ারি ১৯ ২০২১, ১৪:৩৯

আবুল কাসেম আদিল

ইসলামী রাষ্ট্রে কোনো রাষ্ট্রপতি থাকে না। ‘পতি’ মানে স্বামী, প্রভু, পালক ও রাজা থাকে না। ইসলামী রাষ্ট্রে থাকে খলীফা, অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিনিধি। ইসলামী রাষ্ট্রে বিধান চলে বিধাতার। মানুষ শুধু বিধাতার বিধানের প্রতিনিধিত্ব করে। খলীফার জন্য বিধাতা কর্তৃক আরোপিত মৌলিক বিধানের ক্ষেত্রে নিজের পক্ষ থেকে ব্যতিক্রম কিছু করার সুযোগ নেই।

মানুষকে আল্লাহ তায়ালা খলীফা তথা প্রতিনিধি বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ বলেছেন, ইন্নী জায়ি’লুন ফিল-আরদি খলীফাহ— আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব। আল্লাহ তা-ই করেছেন। মানুষকে প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ প্রতিনিধি হতে রাজি নয়, মানুষ পতি হতে চায়, প্রভু হতে চায়। আল্লাহর বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

প্রতিনিধিত্ব ও পতিত্বের পার্থক্য বোঝার জন্য মাত্র একটা উদাহরণই যথেষ্ট। কোনো অপরাধীকে আদালত দণ্ড দিলে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিনিধি দণ্ড মওকুফ করতে পারেন না, যতক্ষণ না বিচারপ্রার্থী ক্ষমা করে। বিধাতার বিধানে প্রতিনিধির জন্য দণ্ড মওকুফের সুযোগ নেই। কিন্তু ‘আধুনিক’ রাষ্ট্রের ‘পতি’ প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনীকেও ক্ষমা করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে বিচারপ্রার্থীর ইচ্ছা ও অনুভূতির কোনো মূল্য নেই। খুনী খুন করল আপনার বাবাকে, কিন্তু তাকে ক্ষমা করবে রাষ্ট্রপতি। এরচেয়ে বড় অবিচার হতে পারে না। তবু কিছু বলা যায় না, কারণ তিনি যে মহামান্য।

এমন বর্বর রাষ্ট্রের কিছু জ্ঞানপাপী নিজ দেশের এই বর্বরতা সম্পর্কে চুপ থেকে সৌদি আরবের বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যে দেশে কোনো হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করেন না, হত্যাকারী রাজপরিবারের কেউ হলেও না; যদি না নিহতের পরিবার ক্ষমা করে। দণ্ডিতকে রাজতান্ত্রিক দেশের রাজা ক্ষমা করতে পারেন না, যদি না বিচারপ্রার্থী ক্ষমা করে। অন্যদিকে তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশের ‘পতি’ অহরহ সন্ত্রাসীদের ক্ষমা করে চলেছেন।

এখন বলা হচ্ছে, ক্ষমা করার জন্য রাষ্ট্রপতিরও দরকার নেই। সরকার চাইলেই যে কাউকে যখন তখন ক্ষমা করতে পারে। আইনমন্ত্রী দাবি করেছেন, বহুল আলোচিত হারিস ও আনিসকে আইন অনুসারে ক্ষমা করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা মোতাবেক ‘কোনো ব্যক্তি কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে সরকার যে কোনো সময় বিনা শর্তে বা দণ্ডিত ব্যক্তি যা মেনে নেয় সেই শর্তে তার দণ্ড কার্যকরিকরণ স্থগিত রাখতে বা সম্পূর্ণ দণ্ড বা দণ্ডের অংশবিশেষ মওকুফ করতে পারবেন।’

আইন অনুসারেও যদি অপরাধীকে ক্ষমা করা হয়ে থাকে, সেই আইন নিয়েই কথা বলা দরকার। যে আইন ইনসাফ পরিপন্থী, তা চলতে পারে না। এই আইন বহাল থাকলে আইন-আদালত বলবৎ রাখা অর্থহীন। কে সাজা পাবে আর কে পাবে না এমপি, মন্ত্রী ও আমলারা বসে ঠিক করবে। সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ তো আছেই।