রাশিয়া বনাম বৃটিশ গোয়েন্দা যুদ্ধ শুরু!!

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ২১ ২০১৮, ০১:৪৯


: গোয়েন্দা জগতের বাস্তব ঘটনাগুলো গল্পের পাতার চাইতে কম ভয়ঙ্কর নয়। যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেয়া এক রুশ গোয়েন্দার হঠাৎ অচেতন হওয়া নিয়ে রীতিমত তুলকালাম চলছে। ওই গোয়েন্দাকে হত্যার উদ্দেশে রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছে বলে প্রাথমকিভাবে নিশ্চিত হয়েছে যুক্তরাজ্যের তদন্তকারীরা। কিন্তু কে কখন কিভাবে এই রাসায়নিক প্রয়োগ করলো, সে বিষয়ে কোনো হদিস এখনো পাওয়া যায়নি। তবে রাশিয়ার দিকেই সন্দেহের তীর।  
ঘটনার সূত্রপাত গত রোববার। সলসবারির একটি বিপণিকেন্দ্রে বাইরে বেঞ্চিতে ৬৬ বছরের সের্গেই স্ক্রিপালকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। সে সময় তাঁর ৩৩ বছরের মেয়ে ইউলিয়া স্ক্রিপালও তাঁর সঙ্গে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন বলে জানায় পুলিশ জানায়। এদের উদ্ধার করতে যাওয়া একজন ডাক্তার ও একজন পুলিশ তাদের স্পর্শ করায় মারাত“কভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
 এরপর ধীরে ধীরে খবর আসে সের্গেই স্ক্রিপাল একসময় রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউয়ের কর্নেল ছিলেন। তিনি ডাবল এজেন্ট হয়ে কাজ করছিলেন। যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই সিক্সের কাছে রাশিয়ার গোপন নথি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে ২০০৬ সালে রাশিয়ায় তাঁর ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা বিনিময় চুক্তির আওতায় সের্গেই স্ক্রিপাল ছাড়া পান। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দি ১০ জন রাশিয়ান গোয়েন্দার বিনিময়ে স্ক্রিপালকে ছেড়ে দেয় রাশিয়া। এরপর থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন।  রবিবার সের্গেই স্ক্রিপাল তাঁর মেয়ে ইউলিয়া স্ক্রিপালকে নিয়ে সলসবারি টাইন সেন্টারে যান। সেখানে তারা একটি মার্কেটে ঘোরাগুরি করেন। একটি পানশালায় গিয়ে মদ পান করেন। তারপর জিজি নামে একটি রেস্টুরেন্ট খাবার খান। এক পর্যায়ে রাস্তার বেঞ্চিতে বাবা ও মেয়েকে পাওয়া যায়। মেয়ে অচেতন আর বাবা সের্গেই স্ক্রিপাল উপরের দিকে হাত নেড়ে বোধশূণ্য আচরণ করছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও মেডিকেল টিম তাদের সাহায্য করতে যায়। 
সের্গেই স্ক্রিপালের পরিচয় জানার পর সাথে সাথেই সন্দেহ করা হয় যে, তাকে হত্যার উদ্দেশে মারাত“ক কোনো রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ল্যাব পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়, তাকে রাসায়নিক নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করা হয়েছে। 
বাবা ও মেয়ে দুজনই এখনো অচেতন আছেন। তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে চিকিতসা দেয়া হচ্ছে। তবে অভিজ্ঞতা বলে তাদের বাঁচার সম্ভবনা খুবই ক্ষীণ।
রাশিয়া এই কাজ করেছে বলে সন্দেহ। এর আগে কেজিবির সাবেক চর আলেকসান্দর লিতভিনেঙ্কো ২০০৬ সালে লন্ডনে খুন হওয়ার পর যুক্তরাজ্য ও রাশিয়ার মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। এই খুনে ক্রেমলিনের যোগসাজশ দেখছে যুক্তরাজ্য। অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোরিস জনসন বলেছেন, সাবেক রুশ গোয়েন্দা সের্গেই স্ক্রিপাল অসুস্থ হওয়ার পেছনে রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে এর কড়া জবাব দেবে যুক্তরাজ্য। এমনকি রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি।  বুধবার যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক সভায় জনসন বলেন, ‘আমি এখনই রাশিয়ার দিকে আঙুল তুলছি না। তবে অন্যান্য দেশের সরকারকে বলতে চাই, যুক্তরাজ্যের মাটিতে নিরপরাধ কারও জীবন নেওয়ার চেষ্টা করলে পরিণতি খারাপ হবে।’ রোববারের ঘটনার কোনো তথ্য রাশিয়ার কাছে নেই বলে দাবি করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। পুতিনের এই মুখপাত্র বলেন, ‘মস্কো সব সময় সহযোগিতার জন্য তৈরি।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৬ সালে আলেকসান্দর লিতভিনেঙ্কোর ঘটনার পর আবার সলসবারির ঘটনা যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন দাড় করিয়ে দিয়েছে। এর মানে হচ্ছে যুক্তরাজ্যের মাটিতে কেউ আর নিরাপদ নয়। বৈদেশিক শক্তি এখানে মানুষ হত্যা করে পালিয়ে যেতে পারে।
সুত্র:পত্রিকা