যুগে যুগে নারীর ফাঁদ-২

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ২৬ ২০২১, ১৮:১৮

হাসান মুরাদ:

জুরাইজ রহ.।বনি-ইসরাঈল গোত্রের সদস্য।এক নিভৃতচারী দুনিয়া বিমুখ সাধক।ইবাদতে সে সময়ে তার জুড়ি ছিলোনা। তিনি নিজের জন্য একটি ইবাদতগৃহ তৈরী করলেছিলেন।রাতদিন সে গৃহে নির্জনে ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন। পরিবার পরিজন থেকে ছিলেন বিচ্ছিন্ন।জুরাইজের সে ইবাদতগৃহে একদিন তার মা আসলেন। জুরাইজ তখন ছালাতে রত ছিলেন। মা ডাকলেন জুরাইজ! তখন তিনি মনে মনে বলেন হে আমার রব! একদিকে আমার ছালাত ,অন্যদিকে আমার মা(আমি এখন কি করব!)।অবশেষে জুরাইজ ছালাতকেই প্রাধান্য দিলেন এবং সালাতে মশগুল থাকলেন।সাড়া না পেয়ে তার মা চলে গেলেন। পরদিন তার মা আবার আসলেন । এবারও তিনি ছালাতে নিমগ্ন ছিলেন। তার মা তাকে ডাকলেন বাবা জুরাইজ! আজো জুরাইজ মনে মনে বললেন হে আমার রব! একদিকে আমার ছালাত, আর অন্যদিকে আমার মা।এবারো সে ছালাতেই ব্যাস্ত থাকলেন। মায়ের ডাকে সাড়া দিলেন না।এভাবে তৃতীয় দিনেও জুরাইজ একই কাজ করল। এমন কান্ডে জুরাইজের মা কষ্ট পেলেন। মনোকষ্টে ছেলের জন্য বদদোয়া করলেন। বললেন; হে আল্লাহ! একে তুমি যেনাকারী নারীর মুখ না দেখানো পযন্ত মৃত্যু দিও না। বনী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইজ ও তার ইবাদতের কথা বেশ আলোচিত ছিল সকলের মুখে । এদিকে ঐ জনপদে এক ব্যভিচারী নারী ছিল। সে উল্লেখযোগ্য রূপ-সৌন্দর্যের অধিকারিণী ছিল। তার রূপের জৌলুস ছিলো চোখে ধরার মত।শয়তান সে নারীকে জুরাইজের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করল। সে নারী বলল, তোমরা চাইলে আমি জুরাইজকে বিভ্রান্ত করতে পারি।বাস্তবেও সে নারী জুরাইজকে ফাঁদে ফেলতে আটসাট বেঁধে ফুসলাতে লাগল। কিন্তু জুরাইজ সেদিকে ভ্রক্ষেপ করলেন না। অতঃপর সে অসতী নারী জুরাইজের ইবাদতগৃহের কাছাকাছি আসল। সেখানে এক রাখাল দেখতে পেল এবং রাখালের কাছে আসল। সে নিজের উপর রাখালকে অধিকার দিল ।রাখালও তার ডাকে সাড়া দিলো। উভয়ে ব্যভিচারে লিপ্ত হল। এতে সে নরী গর্ভবতী হল। তারপর নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চা প্রসব করল।এমন কর্মে লোকেরা জানতে চাইল এ সন্তান কার? উত্তরে সে নারী বলল; এটা তোমাদের আবিদ, জুরাইজের সন্তান। কি অবাক! জুরাইজের ব্যাপারে এমন ঘটনা বিশ্বাস করা যায় ? বনি ইসরাঈল যারপর নাই ক্ষিপ্ত হলো। বিক্ষুব্ধ জনতা জুরাইজের কাছে আসল। জুরাইজকে ইবাদতগৃহ থেকে বের করে আনল। তার ইবাদতখানা ধূলিসাৎ করে দিল এবং তাকে মারধর করতে লাগল। জুরাইজ বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? আমার সাথে এমন নির্দয় আচরন কেন? ক্ষিপ্ত জনতা বলল, তুমি এই নষ্টা মহিলার সাথে যেনা করেছ। ফলে একটি শিশু ভূমিষ্ট হয়েছে। তাদের কথা শুনে জুরাইজ খুবই অবাক হলো। জুরাইজ শান্ত মনে তাদের বললেন, শিশুটি কোথায়? জনগণ শিশুটিকে জুরাইজের কাছে নিয়ে আসল। জুরাইজ বললেন, আমাকে একটু সুযোগ দাও। আমি ছালাত আদায় করে নেই। তিনি ছালাত আদায় করলেন। ছালাত শেষ করে শিশুটির কাছে এসে তার পেটে খোঁচা মারলেন;তারপর জিজ্ঞেস করলেন ওহে শিশু! তোমার পিতা কে? উত্তরে শিশুটি বলল; আমার পিতা অমুক রাখাল।উপস্থিত লোকেরা শিশুর মুখে কথা শুনে আরো অবাক হলো।তারা ঘটনার সত্যতা বুঝতে পারল।তখন তারা জুরাইজের নিকটে এসে তাকে চুম্বন করতে লাগল এবং তার শরীরে হাত বুলাতে লাগল। আর তারা বলল, এখন আমরা তোমার ইবাদতগৃহটি সোনা দিয়ে তেরী করে দিচ্ছি। জুরাইজ বললেন, দরকার নেই, বরং পূর্বের মত মাটি দিয়েই সাধারণ করে তৈরী করে দাও। অতঃপর তারা তাই করল।

শিক্ষা: ১. নফল ইবাদতের চেয়ে পিতা-মাতার ডাকে সাড়া দেয়া বেশি জরুরি।

২.পিতা-মাতা বদ-দোয়া করলে অনেক সময় দুনিয়াতেই তা প্রকাশ পেয়ে যায়।তাই পিতা-মাতার বদ দোয়া থেকে বাচতে হবে।

৩. এখানে জুরাইজের কোন অপরাধ নেই। জুরাইজ নিজেকে সে নারীর ফাঁদে পা দেয়নি। কিন্তু অসতী নারীর ফাঁদ,চক্রান্ত ভয়ানক।সে নারী নিজেই চক্রান্তের জাল বুনেছিল।জুরাইজ রহ. যদি আল্লাহর বিশেষ বান্দা না হতেন এবং সকলকে এমন অলৌকিক ঘটনা না দেখাতেন তবে জনতা একজন ওলি সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা প্রশন করত।সমাজে এমন বাস্তবতা অনেক আছে,নির্দোষ,নিরাপরাধ কিন্তু অপরাধী হয়ে লাঞ্ছনার বোঝা বহন করছে। তাই নারীর ফাঁদ থেকে নিজেকে বাচাতে হবে এবং নারী ফিতনা-ফাঁদ থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে পূর্ণ হেফাজত করুন। আমিন! (চলবে ইনশাআল্লাহ)

তথ্যসূত্র: বুখারী,মুসলিম

লেখক: শিক্ষক,প্রাবন্ধিক।