যুক্তরাজ্য কি একঘরে হয়ে যাচ্ছে

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ১২ ২০১৯, ১১:৩৫

জুবের আহমদ

এক সময়ের পরাক্রমশালী যুক্তরাজ্য দিন দিন আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে যাচ্ছে। সাম্রাজ্যের পতন হয়তো সময়ের ব্যাপার মাত্র। যুক্তরাজ্যের এখনকার অবস্থা কাগজে কলমে বাঘ, কিন্তু আসলে নখ দন্তহীন। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রত্যাহার করলে আন্তর্জাতিকভাবে কেউ তাদের গণ্যই করবে না।

যুক্তরাজ্যের আজকের এহেন নাজুক পরিস্থিতির জন্য নি:সন্দেহে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যমেরুন অনেকাংশেই দায়ী বলে মনে করি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার জন্য গণভোট আয়োজন ছিলো যুক্তরাজ্যের জন্য বিরাট ভুল। আর সেই ভুলের মাসুল দেশটিকে হয়তো দিতে হতে পারে যুগের পর যুগ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার সময় যুক্তরাজ্যের অবস্থান ছিলো উপরের দিকে। এখন যে অবস্থানে জার্মানী এবং ফ্রান্স আছে, তারচেয়েও ভাল অবস্থানে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করতো যুক্তরাজ্য। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে কারেন্সির কথা। সবাই অভিন্ন মুদ্রা ইউরো ব্যবহার করলেও যুক্তরাজ্য তাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করতো এবং এখনও করছে।

যা হোক, যুক্তরাজ্যের জন্য আগামী ৩১শে অক্টোবর হচ্ছে ডেডলাইন। এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হতে হবে। কোন চুক্তি হোক বা না হোক। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হবে কোন চুক্তি সম্পাদন ছাড়াই। যদি তাই হয়, তাহলে নি:সন্দেহে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের রোষানলে পড়বে। বানিজ্যিক এবং অর্থনৈতিকভাবে কোনঠাসা হবে যুক্তরাজ্য।

এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যুক্তরাজ্য হয়তো চীন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকবে। কিন্তু সেখানেও তাদের অবস্থান নড়বড়ে।

হংকংয়ের সাম্প্রতিক আন্দোলনে যুক্তরাজ্যের ইন্ধন আছে বলে চীন অভিযোগ করেছে এবং তাদের অভ্যন্তরীন বিষয়ে নাক না গলানোর জন্য চীন যুক্তরাজ্যকে হুঁশিয়ার করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইংল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ডারোক -এর একটি মেমো ফাঁস হয়েছে দুইদিন আগে। সেখানে তিনি বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনকে অদক্ষ এবং অযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্প এটা জানার পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং উক্ত রাষ্ট্রদূতকে নির্বোধ বলে সম্বোধন করেছেন এবং সেই সাথে তার সাথে কোনো ধরনের কাজ করবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। শুধু তাই নয় কাতারের আমিরের সাথে ডিনার পার্টিতে সেই রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণ শেষ মূহুর্তে প্রত্যাহারও করে নেয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এই রকম অপমান কেউ তাদের করেনি কোনোদিন। এই নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে কুটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে এবং শেষমেষ উক্ত রাষ্ট্রদূতকে জোড়পুর্বক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যদিও মিডিয়ায় বলা হয়েছে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।

রাজনৈতিক এবং কুটনৈতিকভাবে যুক্তরাজ্য যে কতোটুকু দুর্বল তা এই ঘটনায় প্রতীয়মান হয়। অথচ প্রতিটি রাষ্ট্রদূতের অধিকার রয়েছে সেই দেশের সরকার সম্পর্কে তার নিজস্ব এসেসমেন্ট করার। তাছাড়া স্যার কিম ডারোক হচ্ছেন প্রচণ্ড মেধাবী এবং ঝানু কুটনৈতিক। তার আছে অনেক সাফল্যগাঁথা ইতিহাস। কুটনৈতিক কাজের জন্য তিনি পেয়েছেন ‘স্যার’ উপাধী। তারপরও তাকে বিদায় নিতে হলো।

উল্লেখ্য, এই মেমো ফাঁস হওয়ার পেছনে যুক্তরাজ্য গতানুগতিকভাবে রাশিয়াকে দোষারোপ করছে, যেমনিভাবে দোষারোপ করেছিলো নার্ভ এজেন্ট দিয়ে স্ক্রিপাল হত্যাকাণ্ডের চেষ্টাকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার স্বপক্ষে যুক্তরাজ্য কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। রাশিয়ার সাথে তাদের সম্পর্ক দিনকে দিন খারাপই হচ্ছে। সম্প্রতি ইসরাইলকে খুশি করার জন্য ইরানের তেলবাহী ট্যাংক আটকানোর ঘটনা না হয় নাই বা বললাম।

এই হলো বর্তমান যুক্তরাজ্যের প্রকৃত অবস্থা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাজ্য দিনের পর দিন এতোই দুর্বল হচ্ছে যে, যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এতো দুর্বলতা কখনও তাদের চোখে পড়েনি।