মৃত্যুকে নিয়ে লেখা এরশাদের কবিতা “জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে”

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ১৬ ২০১৯, ১৪:৩১

টানা ৯ বছর রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বের পাশাপাশি কাব্যচর্চাও করেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

তার কবিতা, ভাবনা ও কাব্যজীবনের প্রতি তীব্র আগ্রহ ও ভালোবাসার বিষয়টি বিবেচনা করলে অনেকের মনে হতে পারে রাজনীতিবিদ কিংবা সেনাপ্রধান নয়, তার একান্ত তীব্র ইচ্ছে ছিল কবি হওয়ার।

আর সেই ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে পারেননি। আমৃত্যু কবিতাকে ভালোবেসে গেছেন, লিখেছেন অনেক কবিতাও। তাই জীবনের শেষ পর্যন্ত সেসব কাব্য সাধনার জন্য হয়েছেন আলোচিত ও প্রশংসনীয়।

দেশ পরিচালনার পাশাপাশি সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বেশ কিছু কবিতার বই উপহার দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যপ্রেমীদের। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- কনক প্রদীপ জ্বালো, এক পৃথিবী আগামী কালের জন্য, নির্বাচিত কবিতা, নবান্নে সুখের ঘ্রাণ, যুদ্ধ এবং অন্যান্য কবিতা, এরশাদের কবিতা সমগ্র, ইতিহাসে মাটির চেনা চিত্র, যেখানে বর্ণমালা জ্বলে, কারাগারে নিঃসঙ্গ দিনগুলো।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা-১৮ তেও নতুন চারটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন তিনি। বইগুলো হলো- হে আমার দেশ, ঈদের কবিতা, বৈশাখের কবিতা ও প্রেমের কবিতা।

২০১৭ সালে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলেন এরশাদ। কবিতায় লিখেছেন জীবনে মৃত্যুর সঙ্গে অনেকবার লড়লেও হার মানেননি তিনি।

মৃত্যু নিয়ে এরশাদের লিখিত কবিতাটি পাঠকদের জন্য তুলে দেয়া হল-

জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

মৃত্যুকে আর আমার কোনো ভয় নেই-

যাকে আমি দেখেছি- একবার নয়,

একাধিকবার খুব কাছে থেকে

একেবারে একান্তভাবে- আলিঙ্গনরত

প্রিয়তমার মতো। সৈনিক ছিলাম

মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে শিখেছি তখন।

বন্দিজীবনে পাণ্ডু–রোগকে আজরাইল

রূপে দেখেছি- আল্লাহতা’লার

ভর্ৎসনায় ফিরে গেছে আমাকে না নিয়েই-

তারপর ভেবেছিলাম- স্রষ্টার কিছু কাজ

হয়তো এখনো বাকি রয়ে গেছে- সেটুকু

করার দায়িত্ব নিতে হবে আমাকেই- আমার

দেশের জন্য- আমার অসহায় মানুষের জন্য।

শুরু করলাম নতুন যাত্রা- দুর্গম পথে

যে পথে চলতে গিয়ে কখনো বা হয়ে যাই

ক্লান্ত-শ্রান্ত-অবসন্ন। তখন ভাবনাগুলো

চারপাশে ভিড় জমায়। জীবন সায়াহ্নে

আর কত কি কাজ আছে বাকি?

সেই চিন্তার মাঝে মৃত্যু নামের

অবধারিত সত্যের নোটিশ আসে-

যেতে হয় অপারেশন থিয়েটারে।

সেখানে ভুলতে হয়- পৃথিবীর সব

মায়া-মমতা-প্রেম-ভালোবাসা,

আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জন,

জীবন প্রবাহ, ইতিহাস, অতীত-বর্তমান,

কর্মের তাগিদ সব হিসাব-নিকাশ-

জীবন আর মৃত্যুর এই সংযোগ স্থলে।

চিন্তার কোনো অবকাশ নেই সেখানে-

ঠিক যেনো মৃত্যুর মতো- এখানে এসে

আমিও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

সেখানেও বিধাতা আমাকে জাগিয়ে দিলেন-

আবার জেগে দেখি সেই আলো-

সেই বাতাস- সেই প্রিয় আপনজনেরা-

যারা আমার জন্য প্রার্থনায় বসে ছিলো-

মসজিদে-দেবালয়ে দু’হাত বাড়িয়ে।

তাদের প্রার্থনার হাত খালি হয়ে

ফিরে আসেনি করুণাময়ের দরবার থেকে।

মৃত্যু আমাকে আবার জানিয়ে দিয়ে গেলো-

‘আমি নিতে চাইলে কি হবে- তোমার

ভালোবাসার মানুষেরা তো যেতে দেয় না তোমাকে- তাদের দোয়া যে কবুল হয়ে গেছে।’

আজ আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা- দেশের সকল

মানুষের কাছে- চিরদিনের ঋণ তাদের কাছে-

যারা আমার জন্যে হাত পেতে নিয়ে এসেছে

আরো কিছু আয়ু, আরো এক নতুন জীবন।

 

(সিঙ্গাপুর-২৯ অক্টোবর, ২০১৭। হাসপাতাল থেকে ফিরে)