মাওলানা মামুনুল হক সাহেবের প্রতি খোলা চিঠি

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

নভেম্বর ২৮ ২০২০, ১৩:২৬

আপনার চেয়ে যোগ্য লোক বাংলাদেশে নেই, এমনটা না; তবে আল্লাহ তাআলা আপনাকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, আমাদের আশা—এ উচ্চতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। ইনশাল্লাহ

যার প্রতি মানুষের আস্থা ও আশা থাকে এবং যার মাঝে সম্ভাবনা থাকে, তার কাছেই মানুষ আবেদন জানায়, তাই আপনার সমীপে কিছু নিবেদন পেশ করছি৷ আপনার প্রতি ভালোবাসার একটি বড় কারণ হল, আপনি আমাদের মহান উস্তাদের যোগ্য সন্তান।

০১. মাহফিলের মাধ্যমে একটা পরিচিতি হয়, তা আপনার হয়ে গেছে। তাই আপনার জন্য আর বক্তা ও ওয়ায়েজ হিসাবে মাহফিল করা উচিত না৷ ওয়ায়েজ থেকে মামুনুল হককে জাতীয় নেতৃত্বে দেখতে চাই৷ সাংগঠনিক প্রোগ্রাম এবং জাতীয় প্রোগ্রাম হলে বছরে সর্বোচ্চ ৫০/৬০ টা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন; তাও বিভাগ ও জেলা পর্যায়েই রাখা উচিত।

০২. দরস, লেখালেখি ও রাজনীতির বাহিরে অন্য ব্যস্ততা কমাতে হবে। এ তিনটি কাজের সাথে আরেকটি কাজ করা আপনার জন্য আবশ্যক। তা হল, প্রথমত কওমি ঘরানা; দ্বিতীয়ত প্রায় কাছাকাছি মতাদর্শের লোকদের সাথে বৃহৎ স্বার্থে একতাবদ্ধ হওয়ার পরিবেশ তৈরি করা।
আপনি একজন মহান পিতার সন্তান এবং আপনার ইলমি যোগ্যতা ও আখলাক নিয়ে বিন্দু পরিমাণ প্রশ্ন কারও নেই; এবং আপনাকে প্রায় সবাই মহব্বত করেন, তাই আপনিই আমাদের ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠতে পারেন।
প্রসঙ্গত বলি, রাহমানিয়ার ভাঙন নিয়ে বাজারে অনেক অপপ্রচার চালু আছে। কিন্তু আপনি যে আখলাকের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে।

প্রথমে আপনি কওমি ঘরানার লোকদের কাছাকাছি আনার চেষ্টা করেন। ছোটোখাটো মতভেদ থাকবেই, এগুলো পাশে রেখেই জাতীয় ইস্যু এবং কওমির বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার জন্য একসাথে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানাবেন। দাওয়াত না দিলেও যাওয়া দরকার। আপনি চরমোনাই যান, মাওলানা ফরিদ সাহেবের কাছে যান, আরও যাদের কাছে গেলে ভালো মনে হবে তাদের কাছে যান।
দুই খেলাফত মজলিসকে এক করা যায় না?

তারপর উদারপন্থী সালাফি, জামায়াত, শর্ষিনা, ফুরফুরা, ফুলতলী, বাইতুশ শরফ ইত্যাদি ঘরানার কাছে যান। মহব্বতের কথা বলেন। তাদের মাহফিলে দাওয়াত দিলে শরিক হন।

০৩. ভারতের মাওলানা বদরুদ্দীন আজমল, ব্যারিস্টার আসাদুদ্দীন ওয়াইসি, পাকিস্তানের মাওলানা ফজলুর রহমান সাহেবদের সাথে মোলাকাত করেন। তুরস্কের ক্ষমতাসীন পার্টির নেতাদের সাথে মতবিনিময় করেন। মুসলিমবিশ্বের বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গেও মোলাকাত করেন, তাদের চিন্তার সাথে পরিচিত হন।

০৪. সরকারের সাথে সরাসরি সংঘর্ষ এড়িয়ে চলা উচিত। এর মানে এই না যে, সরকারের ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আন্দোলন বন্ধ করে দিবেন। আন্দোলন চলবেই; তবে সরাসরি সংঘর্ষ এড়িয়ে। মনে রাখতে হবে প্রবাদপ্রতিম জনপ্রিয় মানুষ এবং শক্তিশালী একটি সংগঠনকে তারা নাস্তানাবুদ করে ফেলছে, যা তারা কল্পনাও করেনি।

০৫. মানুষের সীমাবদ্ধতা হল নিজ চোখে নিজের চেহারা দেখা যায় না। আয়নার সামনে দাঁড়াতে হয়। তাই আপনার মুশির দরকার। বিশেষত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কয়েকজন উপদেষ্টা রাখতে পারেন। যাদের মধ্যে আলেম, রাজনীতিবিদ, সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা, সাবেক সচিব, সাবে গোয়েন্দা কর্মকর্তা থাকবে। বিশেষত মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন Razi সাহেবের মতো পোড়খাওয়া, অভিজ্ঞ ও দূরদর্শী লোকদের কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ গ্রহণ করা।

০৬. আপনার চলাফেরায় আরও সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বাসা, মাদরাসা ও সফরে। টাকা খরচ হলেও কাজটা করা উচিত।

০৭. জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় সরকার আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে আমাদের মুরুব্বিরা তেমন অবগত না। এ বিষয়ে সকল ঘরানার ইসলামী নেতাদের নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন আশা করি। মূর্তি ইস্যুর চেয়ে শিক্ষাব্যবস্থার ইস্যু আরও মারাত্মক, আরও বেশি ক্ষতিকর।

০৮. তরুণ আলেম ও সোস্যাল মিডিয়া এক্টিভিটদের সাথে বৈঠক করা দরকার। বছরে অন্তত ৩/৪ বার।

০৯. আপনার সহযোগী ও মুখপাত্র হিসেবে অন্তত ২/৩ জন লোক দরকার; তারা আপনার সংগঠন বা মাদরাসার হতে হবে। তারা কয়েকটি ভাষায় অভিজ্ঞ হবে, মিডিয়ায় বলতেও পারে, লিখতেও পারে এমন হতে হবে। তারাই আপনার পক্ষ হতে কথা বলবে, বিবৃতি দিবে, সব বিষয়ে আপনার সহযোগী হবে। উদাহরণত সিদ্দিকী সাহেবের বিষয়ে আপনি নিজে লাইভে না বলে আপনার মুখপাত্রকে দিয়ে বলালে ভালো হতো।

আপনাকে কেবল আল্লাহর জন্য ভালোবাসি এবং আপনাকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি বলেই আপনার কাছে এ বিষয়গুলো ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।

আপনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী
আপনার পিতার একজন অযোগ্য ছাত্র
Mohiuddin Kasemi