ময়মনসিংহ বিভাগকে মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত করতে রেঞ্জ ডিআইজির ১ মাসের আল্টিমেটাম

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ২৯ ২০২০, ২৩:২০

মোঃ নাইমুর রহমান তালুকদার, শেরপুর প্রতিনিধি: ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ বিপিএম বলেছেন, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে প্রথমে পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইজিপির জিরো টলারেন্সের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা কোনোভাবেই কোন ধরনের দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত হতে পারবে না। পুলিশের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি ২৯ জুন সোমবার শহরের শেরপুর অষ্টমীতলাস্থ জেলা পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে আয়োজিত এক বিশেষ কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে মতবিনিময়কালে ওই কথা বলেন।

এটি সাম্প্রতিক সময়ে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রদত্ত ৫ দফা নির্দেশাবলী সম্পর্কে রেঞ্জাধীন পুলিশ কর্মকর্তাদের অবহিতকরণপূর্বক উদ্দীপনামূলক সভা।

মাদক বর্তমান যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে উল্লেখ করে ডিআইজি হারুন অর রশিদ বলেন, আমাদের যুব সমাজকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে। উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে যুব সমাজকে সুশিক্ষা ও কারিগরি দক্ষতা প্রদানের মাধ্যমে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মাদক নির্মূলে তিনি সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন।

মাদক নির্মূলের বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, মাদকের সাথে পুলিশের কোন সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপস্থিত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তিনি ১ মাসের মধ্যে যার যার থানা এলাকা মাদকমুক্ত করার আল্টিমেটাম প্রদান করেন।

তিনি চলমান কোভিড-১৯ সংকটময় মুহূর্তে শেরপুর জেলা পুলিশের মানবিক কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি জানান, কোভিড সংকটকালে বাংলাদেশ পুলিশের মৌলিক দায়িত্বের পাশাপাশি মানবিক কার্যক্রম সর্বমহলে বিশেষভাবে প্রশংসিত হচ্ছে এবং পুলিশের ভাবমূর্তিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, পুলিশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশকেও উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ হিসেবে তৈরি হতে হবে।
পুলিশকে জনসাধারনের সাথে মানবিক আচরণ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুলিশকে জনগণের পুলিশ হতে বলেছেন। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে এ দেশের জনসাধারনকে সেবা দিতে হবে।

এ বিষয়ে আইজিপির নির্দেশনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষকে কোন রকম নির্যাতন ও নিপীড়ন করা যাবে না। মানুষকে নির্মোহভাবে ভালবাসতে হবে, সকল অবস্থায় মানুষের পাশে থেকে মানুষকে সেবা দিতে হবে। এমন কি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে বিধিবহির্ভূত আচরণ করা যাবে না। পুলিশকে পেশাদারিত্বের সাথে অপরাধ দমন ও প্রতিরোধ করতে হবে।

পুলিশী সেবা জনগনের দোড় গোড়ায় পৌছে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে আইজিপির নির্দেশনা মোতাবেক বিট পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে পুলিশী সেবাকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌছে দিতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়নকে একটি বিটের আওতায় এনে আইন-শৃংখলা রক্ষা, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ করাসহ মানুষের পাশে থেকে সেবা প্রদান করতে হবে। এ বিষয়ে তিনি পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, পুলিশের দ্রুত উপস্থিতি পারে মানুষের জান-মাল রক্ষা করতে। তিনি চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা প্রদান করেন। পুলিশ সদস্যদের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া প্রত্যেক সদস্যের কল্যাণের প্রতি দৃষ্টি রাখতে সকল ইউনিট প্রধানদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএমের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ড. মোঃ আক্কাছ উদ্দিন ভূঁঞা। সভায় জেলা পুলিশের ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের নবাগত কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার) আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদসহ জেলা পুলিশের সকল উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ কল্যাণ সভা শেষে পুলিশ সদস্যদের মাঝে করোনা সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেন ডিআইজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ বিপিএম।