মওলানা রুমির আধ্যাত্মিক পংক্তিমালা- ০১

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ১৫ ২০১৯, ০৯:১৬

ভূমিকা: মওলানা রুমি একাধারে আলেম, সুফি ও কবি। মওলানা রুমির মত করে তাওহিদকে রুহানি পন্থায় সাধনের এই অমোঘ উচ্চারণ আজ বড় প্রয়োজন। একত্বের সাধনায় আধ্যাত্মিকতা — রুমির মত করে মা’রেফা ও ইরফানের সহজ ও সরল কাব্যবাণী আজ বিরলতম।

অনেকের এপথ জানা থাকলেও ইবনে আরাবী, মওলানা রুমিদের মত প্রফাউন্ড ও সাবলাইম স্পিরিচুয়াল এক্সপ্রেশন আমাদের এই কথিত আধুনিক ও উত্তরাধুনিক সমাজ ও কমিউনিটিকে আর মধ্যযুগের মত আলোড়িত করে না। এটা প্রবলেম্যাটিক।

তাসাউফকে যারা সহজে গ্রহণ করতে পারে না, যেমন সালাফিরা, তাদের ধারণা যে মওলানা রুমিকে মুসলিম বলা যায় না। অথচ রুমি বস্তু, উদ্ভিদ, জীব ও মানবের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে তা ৭০০ বছর আগে তুলে ধরেছিলেন। অবশ্য ইদানীং পাশ্চাত্যে আরেকটি গোষ্ঠী রুমিকে ইসলাম থেকে বিযুক্ত করে তাঁকে কেবল আধ্যাত্মিক বা সুফি কবি হিশেবে অনুসরণ করতে চায়। কিন্তু রুমি শাস্ত্রীয় ইসলামকে মর্যাদা দিয়েই তাঁর উদার বাণী প্রচার করেছিলেন। যে কারণে তাঁর মসনভিকে ফারসি ভাষায় কুরআনের ভাষ্য বলে গণ্য করা হয়। মুসলিম ধ্রুপদী ভাষার মধ্যযুগীয় পান্ডুলিপির মধ্যে আরবি ভাষায় কুরআনের পরে যে পান্ডুলিপিটির সবচাইতে বেশি কপি পাওয়া গেছে সেটি হল ফারসি ভাষায় রুমির মসনভি।

আবার ইদানীং কিছু নব্য আঁতেল বলতে চাইছে যে, রুমি নাকি কোন বড় কবি ছিলেন না। ফারসি ভাষায় যার কাব্য শুধু ইরানে নয় বৃহত্তর পারসিক সভ্যতার অন্তর্গত সব ভূগোলে আধ্যাত্মিক সাহিত্যের অনুপ্রেরণা হয়ে আছে তিনি কোন বড় কবি নন — এটা কি কোন যৌক্তিক মূল্যায়ন?

কিতাবী ডিসকোর্স যে ফিরকাবাজীর বাক্স বানিয়েছে তার বাইরে রুহানি তাজকিয়ার তরিকায় আমাদের উপনীত হতে হবে; আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি ও বৈশ্বিক ভ্রাতৃত্বের ঐক্যসাধনা নৈতিকতা ও মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন ও নবায়ন ঘটিয়ে বিভেদ, বিদ্বেষ ও বিবাদ দূর করতে পারে।

এই লক্ষে মওলানা রুমির কিছু অমর পংক্তিমালা এখানে পেশ করলাম।

(১)
আমি খণিজ হয়ে ছিলাম
তারপরে উদ্ভিদ হয়ে জন্মালাম
এরপরে উদ্ভিদ হয়ে মরলাম
আর জীব হয়ে বেঁচে উঠলাম
আবার জীব হয়ে মরে
অতঃপর আমি মানুষ হয়ে বাঁচলাম
আমার আবার কিসের ভয়?
আমি বারবার শুধু মরলাম ও বাঁচলাম
কিন্তু কখনো কি আমি একটুও কমলাম?

(২)
প্রদীপ অনেকগুলো হতে পারে
কিন্তু আলো তো একটিই!

(৩)
চাঁদের আলো
আকাশের দিগন্ত থেকে দিগন্তে
জোছনার বন্যা বইয়ে দেয়।
এই চাঁদের আলো
ঘরের কতটুকু জোছনায় ভরে দেবে
সেটা ঘরের জানালাগুলো কত বড়
তার উপরই নির্ভর করে।

(৪)
যে কখনো ঘর ছেড়ে বের হয়নি
তার কাছ থেকে
ভ্রমণের উপদেশ নিয়ে কি করবে!

(৫)
আকাশ কেবল হৃদয় দিয়েই ছোঁয়া যায়।

(৬)
তুমি একটি কক্ষ থেকে আরেকটি কক্ষে ছুটে বেড়াচ্ছ
হিরের একটা নেকলেস উন্মাদের মত খুঁজে ফিরছো
অথচ তুমি জান না যে তোমার খোঁজা নেকলেসটি
সেই কবে থেকে তোমার নিজ গলাতেই ঝুলছে।

(৭)
সকালের স্নিগ্ধ বাতাসে
কি যেন এক রহস্যের আভাস ভেসে আসে

আবার ঘুমুতে যেও না!

তুমি সত্যিসত্যি যা পেতে চাও
তা তোমাকে মনেপ্রাণে চাইতে হবে

আবার ঘুমুতে যেও না!

ঐ দেখ দরজার প্রবেশপথে
যেখানে দুটি বিশ্ব এসে পরস্পরে মিশেছে
তার দুপাশ দিয়ে মানুষের বিপুল স্রোত
কেবল আসছে আর যাচ্ছে
রিভলভিং ডোরের মত
এই দরজা সবসময় ঘুরছে আর খুলছে।

আবার ঘুমুতে যেও না কিন্তু!

সংকলন, অনুবাদ ও সম্পাদনা: মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত