ভাষা নিয়ে দুটি ভাবনা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ১৬ ২০১৯, ১৮:৫১

মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত

১.
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এ ভাষায় আমরা কথা বলি। এ ভাষায় আমরা ভাবি ও কল্পনা করি। এ ভাষায় আমরা শিখি এবং জ্ঞান অর্জন করি। আরবী বা ইংরেজী যে ভাষাতেই আমরা শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জন করিনা কেন তা আমরা শেষমেশ বাংলা ভাষায় আত্মস্থ ও অন্তঃস্থ করে নেই। এসব তো আমাদের জন্ম অধিকার। কেউ এসব কেড়ে নিতে পারেনি। এবং পারবেও না।

তবে মাতৃভাষাকে পুরোপুরি রাষ্ট্রভাষা করে তুলতে পারিনি আমরা। এ আমাদের রাষ্ট্রের দুর্বলতা। এ আমাদের শিক্ষার দুর্বলতা। সর্বোপরি এ আমাদের জ্ঞানের দুর্বলতা। সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ জ্ঞানকে যতক্ষণ আমরা বাংলা ভাষায় আত্তীকৃত ও স্বাধীকৃত না করতে পারবো ততক্ষণ আমাদের এই লক্ষ্য অধরাই থেকে যাবে। এই লক্ষ্য অর্জনে আমাদেরকে যেমন রাষ্ট্রকে গঠন করতে হবে তেমনি শিক্ষাকান্ড ও জ্ঞানকাণ্ডকে পুনর্গঠিত করে নিতে হবে। সেই সাথে নিজস্ব সৃজন ও মননকে সর্বক্ষণ জারণের জন্য বিভিন্ন উন্নত ভাষা, জ্ঞান, শিল্প ও সংস্কৃতির দিকে খোলা জানালা তাক করে রাখতে হবে। কোনরকম অতিআবেগ, সংকীর্ণতা এবং গোঁড়ামি যেন বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়।

একুশে ফেব্রুয়ারির দেশে এই হোক আমাদের ভাষা বিষয়ক উত্তরাধিকার ও অঙ্গীকার।

২.
বাংলাভাষী মুসলমান লেখকেরা মূলত বাংলা ভাষাতেই লিখবেন এটাই স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। কিন্তু তারা কোন কোন ভাষায় তাদের পড়াশুনা ও জ্ঞানার্জন করবেন? সেটা কি শুধু বাংলা ভাষায় যতটুকু করা যায় ততটুকুই?

আমি যখন কোন লেখকের লেখা পড়ে বুঝতে পারি যে তিনি জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে মূলত একভাষিক, তখন সেই লেখকের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ বজায় রাখতে পারি না।

যে বাংলাভাষী মুসলমান লেখকের লেখা বাংলা ভাষা ছাড়াও আরবি, ফারসি বা উর্দু এবং ইংরেজি ইত্যাদি ভাষাবাহিত জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটায় সেই লেখকের প্রতি আমার আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। কারণ বাংলা ভাষায় ইলমের চর্চা যেমন অপর্যাপ্ত তেমনি সর্বশেষ পাশ্চাত্য জ্ঞান বাংলা ভাষায় স্থানান্তরিত হতেও বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়। ফলে সবসময়েই বাংলা ভাষার জ্ঞানমন্ডলে একটি জ্ঞানঘাটতি বা পিছিয়ে পড়া থাকেই।

সমৃদ্ধ লেখক তারাই যারা এই বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং সে কারণে নিজ উদ্যোগে মেধাশ্রম দিয়ে তা থেকে উত্তরণে সদাসচেষ্ট থাকেন।