ভাষাসৈনিক মুহাম্মাদ নুরুল হকের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ০২ ২০১৯, ১৪:৫৭

গ্রন্থাগার আন্দোলনের পথিকৃত, ভাষা সৈনিক, সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সম্পাদক এবং মাসিক আল ইসলাহ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক মরহুম মুহম্মদ নুরুল হকের ৩২তম মৃত্যু বার্ষিকী  আজ। নূরুল হক ১৯০৭ সালের ১৯ মার্চ সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হাজী মুহম্মদ আয়াজ ফার্সী সাহিত্যে পারদর্শী ছিলেন।

সাহিত্য সাধনার নিরলস কর্মী মুহম্মদ নুরুল হক সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে প্রথমে ‘অভিযান’ নামে একটি হাতে লেখা পত্রিকা বের করেন। ১৯৩১ সালে এই পত্রিকাই ‘মাসিক আল ইসলাহ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে মুদ্রিত আকারে বের হয়। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি বাংলা ও আসাম অঞ্চলের সাহিত্য চর্চায় যুগান্তকারী অবদান রাখেন। তিনি প্রায় অর্ধশতাব্দীরও অধিককাল আল ইসলাহ প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন।

১৯৩৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর নূরুল হকের আগ্রহ ও ব্যাপক প্রচেষ্টায় এবং স্থানীয় কবি, সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক সরেকওম এ,জেড আব্দুল্লাহর বাস ভবনে এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ‘সিলহেট মুসলিম সাহিত্য সংসদ’এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। সভায় খান বাহাদুর দেওয়ান একলিমুর রেজা চৌধুরীকে সভাপতি, সরেকওম এ জেড আব্দুল্লাহকে সম্পাদক এবং আল ইসলাহ সম্পাদক মুহম্মদ নূরুল হকসহ দশজনকে সদস্য করে সর্বমোট ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বার্ষিক অধিবেশনে নূরুল হক সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পান। ওই বছরের ২৮ জুন সংসদের কার্যকরী কমিটির বৈঠকে প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট’এ রূপান্তরিত হয়। বৈঠকে গৃহিত অপর এক সিদ্ধান্তে মুহম্মদ নূরুল হকের মাসিক আল ইসলাহ’কে সংসদের মুখপত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তিনি আজীবন এ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। সংসদের মুখপত্র হিসেবে এখনো এ পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রয়েছে। নূরুল হক অর্ধশতাব্দীকাল নিজ মেধা, শ্রম ও একাগ্রতা নিয়ে ঐতিহ্যবাহী সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদকে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগারে রূপ দিয়ে যান। বহু প্রতিকুল পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে নিরন্তর লড়াই করে সাহিত্য সংসদকে তিনি দেশের একটি উল্লেখযোগ্য মানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেন। তিনি ১৯৪৬-৪৭ সালে আসাম সেন্ট্রাল বুক কমিটির সদস্য ছিলেন।

মরহুম মুহম্মদ নূরুল হককে সাহিত্য ও সমাজসেবার স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন পদক ও সম্মানে ভূষিত করে। ১৯৭৭ সালের ১৪ এপ্রিল নূরুল হক জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৮৬ সালের ৪ জানুয়ারী বাংলা একাডেমী তাঁকে ফেলোশীপ প্রদান করে। তিনি ১৯৮৭ সালে মরহুম আমীনূর রশীদ চৌধুরী স্মৃতি স্বর্ণপদকও লাভ করেন। এ ছাড়া, সাহিত্য ও সমাজ সেবার স্বীকৃতি স্বরূপ নূরুল হক ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান সরকার থেকে ‘তমঘা-ই-খেদমত’ উপাধি লাভ করেন। কিন্তু ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে তিনি উক্ত উপাধি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি সিলেট বেতারের জন্মলগ্ন থেকে নিয়মিত কথক ছিলেন।

ভাষা আন্দোলনে মুহম্মদ নুরুল হক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৭ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তিনি ছিলেন সোচ্চার। মুসলিম সাহিত্য সংসদ, মাসিক আল ইসলাহ ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নূরুল হক সভা সমাবেশসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহন করেন। ১৯৬১ সালে সিলেটে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক নজরুল সাহিত্য সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। একই বছর রবীন্দ্র শত বার্ষিকী অনুষ্ঠানের সাহিত্য বিভাগেরও দায়িত্ব পালন করেন নূরুল হক।

নীরব সমাজকর্মী মরহুম মুহম্মদ নূরুল হক একজন দক্ষ সাহিত্য সংগঠক, আল ইসলাহ সম্পাদক, ভাষা সৈনিক কিংবা গ্রন্থাগার আন্দোলনের পথিকৃতই ছিলেননা, একজন সৃজনশীল লেখক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে । তাঁর ৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মুহম্মদ নূরুল হক ৬ পুত্র ও ৪ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর সন্তানদের প্রায় সকলেই উচ্চ শিক্ষিত এবং সাহিত্য ও সাংবাদিকতার সাথে জড়িত। সাহিত্য সাধনার নিরলস কর্মী, প্রচার বিমুখ এই বিরল ব্যক্তিত্ব ১৯৮৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর সিলেট শহরের দরগা মহল্লা, ঝরনার পারস্থ (পায়রা-৫৪) তাঁর নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।