ভারতে ওয়াকফ বিল পাসের ঘটনায় হেফাজতে ইসলাম ইউকে’র তীব্র প্রতিবাদ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ০৬ ২০২৫, ১৯:১৪


সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধে নেমেছে ভারত

হেফাজতে ইসলাম ইউকের নেতৃবৃন্দ ভারতের লোকসভায় পাস হওয়া বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিলের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার সংখ্যালঘু মুসলিমদের টার্গেট করে একের পর এক বিভেদমূলক ও বিদ্বেষমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাদের ইসলামবিদ্বেষী আচরণের ধারাবাহিকতায় এবার ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস করে মুসলমানদের ওয়াকফভূমির ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান -মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, এতিমখানা—এসবের ওপর দখলদারির নীলনকশা বাস্তবায়নের পথ তৈরি করেছে।

এই সংশোধনী বিলের মাধ্যমে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে, যা সরাসরি মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও সম্পত্তির অধিকার হরণের শামিল। এটি একটি নীতিগত ধর্মযুদ্ধের রূপ নিয়েছে মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।

গত ৫ এপ্রিল, লন্ডনে হেফাজতে ইসলাম ইউকের খাছ কমিটির এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলাম ইউকের সভাপতি শায়খুল হাদীস মাওলানা মুফতি আবদুর রহমান মনোহরপুরী, এবং সভা পরিচালনা করেন হেফাজতে ইসলাম ইউকের জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা গোলাম কিবরিয়া।

উক্ত সভায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন—
হেফাজতে ইসলাম ইউকের উপদেষ্টা অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল কাদির সালেহ,
হেফাজতে ইসলাম ইউকের সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. মাওলানা শুআইব আহমদ,
সহ-সভাপতি মাওলানা ইমদাদুর রহমান আল-মাদানী,
সহ-সভাপতি মুফতি আব্দুল মুনতাকিম,
সহ-সভাপতি মুফতি মাওসুফ আহমদ,
জয়েন্ট সেক্রেটারি মাওলানা সৈয়দ তামিম আহমদ,
সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ,
এবং প্রচার সম্পাদক মাওলানা আব্দুল বাসিত।

খাছ কমিটির সভায় নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ভারত সংখ্যালঘু মুসলিমদের জান-মাল রক্ষায় চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বরং রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নানা অজুহাতে তাদের দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। মুসলমানদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি, মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার, এবং তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতেও হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে—এসব মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের এক ভয়াবহ উদাহরণ।

নেতৃবৃন্দ বলেন,ভারতের সংসদে পাস হওয়া ওয়াকফ সংশোধনী বিলটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মুসলিম স্বার্থের পরিপন্থী। সংশোধিত বিলে ওয়াকফ বোর্ড ও কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে অমুসলিম দুই সদস্য রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে, যা বোর্ডের স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপের শঙ্কা বাড়িয়েছে। এই পদক্ষেপ মুসলমানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সম্পদে সরকারি হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে, যা আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।

বক্তারা মনে করেন, এই বিলটি পাশ করা হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার খর্ব করার লক্ষ্যে। বিজেপি সরকারের ধারাবাহিক মুসলিমবিরোধী কার্যক্রম এবং গত ৩ এপ্রিল লোকসভায় পাস হওয়া বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল—উভয়ই প্রমাণ করে যে মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক অধিকার আজ হুমকির মুখে।

এই আইনের মাধ্যমে মুসলমানদের দানকৃত মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্পদে সরকারি হস্তক্ষেপের পথ প্রশস্ত হয়েছে। বর্তমানে ভারতে ২৫ কোটিরও বেশি মুসলমান বসবাস করে। অথচ অতীতে দেখা গেছে, বহু পুরনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, তিন তালাকের বিধান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ধর্মান্তর রোধে আইন পাস করা হয়েছে, এমনকি গরুর গোশতের অজুহাতে মুসলমানদের উপর সহিংসতা চালানো হয়েছে। অনেক জায়গায় মুসলমানদের ‘জয় শ্রীরাম’ বলতেও বাধ্য করা হয়েছে—যা ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী এবং মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর স্পষ্ট চাপ।

এই পরিস্থিতিতে হেফাজতে ইসলাম ইউকে নেতৃবৃন্দ  ভারতের বিজেপি সরকারকে আহ্বান জানান, তারা যেন মুসলিম বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে এবং ভারতের মুসলমান জনগোষ্ঠীর জীবন, সম্পদ ও অধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

নেতৃবৃন্দ একইসঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এই বিষয়ে দৃঢ় কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানান।