ভবিষ্যতে বাংলাদেশে দেওবন্দীদের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ জটিল হবে 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ৩১ ২০২১, ২১:৩০

মোঃ মোস্তফা জামাল ভূইয়া: ইদানিং কালের কতিপয় ঘটনা বিশ্লেষণ করে আমার যতটুকু মনে হয়, ভবিষ্যতে দেওবন্দী ঘরানার রাজনীতি খুবই জটিল আকার ধারণ করবে এবং ইসলামী সভ্যতা হুমকির সম্মুখীন হবে। কারণ-

প্রথমত, ইদানিং কওমীদের মধ্যে কোন একক নেতৃত্ব বলতে গেলে নেই। সব্বোর্চ্চ নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা দিন দিন বৃদ্বি পাচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিকভাবে কওমী ঘরানার ইসলামপন্থীরা ইতিমধ্যে একটি দল একাধিক দলে বিভক্ত হওয়ার ফলে কওমী ছাত্র জনতার অধিকাংশ কওমী নেতৃত্বের প্রতি আস্থা পাবে না ।

তৃতীয়ত, করোনাকালীন সময়ে মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের আর্থিক সংকটময় মুহুর্তে মাদ্রাসা খোলার ব্যাপারে নেতাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ফলে তৃণমুল পর্যায়ে নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা বাড়বে।

চতুর্থত, ইদানিং মাদ্রাসা দখল ও বেদখল এর বিষয়টি জনগণের সামনে আসার ফলে কওমীরা মনস্তাত্বিকভাবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে এবং এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের প্রতি বিদ্বেষ ভাব পোষণ করবে এবং জনগনের শ্রদ্বা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

পঞ্চমত, সরকারের সাথে আতাত করে জেল হতে বের হওয়ার কারণে তারা কওমী ছাত্র জনতা এবং জনগণের আস্থা ও শ্রদ্বা হারাবে।

ইতিমধ্যে আল্লামা বাবুনগরী সাহেব বয়স্কজনিত কারণে তৎপর থাকা সম্ভব হবে না। যার ফলে কওমীদের মধ্যে কোন একক নেতৃত্ব থাকবে না। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কওমীরা একজনের প্রতি আরেকজন সন্দিহান হয়ে উঠবে এবং এর প্রভাব ছাত্রদের উপর পড়বে। এ কারণে ছাত্রদেরকে শিক্ষকদের বিরুদ্বে একটি পক্ষ উস্কে দিবে। এর মধ্যে চরমোনাই পীর সাহেবের দল কওমীতে সীমিত আকারে ঢুকবে। জামায়াত ঢুকবার চেষ্টা করলেও লাভ হবে না, তাদের সেই চেষ্টা বিফলে যাবে। আফগানিস্তানে তালেবানদের বিজয় দেখে এক শ্রেনীর কওমী ছাত্র শুধু বিপ্লব বিপ্লব করবে। কওমীদের মধ্যে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি ছাত্রদের আগ্রহের ভাটা পড়বে। কওমীদের বর্তমান নেতৃত্ব সরকার কিংবা বিরোধী দল দ্বারা ব্যবহত হবে। এর মধ্যে কিছুসংখ্যক কওমী আলেম রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিবে।

সবচেয়ে আশংকার কারণ হল এই যে, বর্তমানে নিয়মতান্ত্রিক পন্থা কওমীতে আর ততটা চর্চা থাকবে না। ফলে এক ধরনের উগ্রপন্থার জন্ম নিবে, যা কওমী উস্তাদসহ সবার জন্য হুমকি হবে। জনগণের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ধর্মীয় এবং রাজনৈতিকভাবে কওমীদের প্রতি আস্থা হারাবে। কিছু কওমী রাজনীতিবিদকে সরকারের দালাল কিংবা ভারতের দালাল হিসেবে তকমা লাগাবে। এই সুযোগটা জামায়াত কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে, কিন্তু কাজ হবে না ।

এই সুযোগে কাদিয়ানীরা মাঠ ফাঁকা পেয়ে আরো শক্তিশালী হবে। আহলে হাদীসদের লাফালাফি বেড়ে যাবে এবং তারা এই সুযোগে কিছুটা শক্তি অর্জন করবে। সুন্নীরা কওমীদের এই অবস্থা দেখে হাসবে। ফুরফুরা এবং ফুলতলী মাসলাক মনে মনে ব্যথিত হবে এবং হা হুতাশ করবে। ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলো তাদের কাজ বিনা প্রতিবাদে করে যাবে। এই সুযোগে ইসলাম বিরোধী শক্তি ইসলামী সভ্যতাকে উচ্ছেদ করা জন্য পরিকল্পনা করে কিছুটা বাস্তবায়ন করা শুরু করবে। জামায়াতের প্রতি ফতোয়া হ্রাস পাবে, তবে কওমী অঙ্গনে তাদের জন্য কোন সুখবর নেই।

এমতাবস্থায় কওমী ছাত্র জনতা কিছুদিন অপেক্ষা করবে, অতঃপর তারা ভিন্ন পথ খুঁজবে । ইসলামী সভ্যতা হুমকির সম্মুখীন হবে। কারণ এদেশের ইসলামী সভ্যতার জন্য কওমীরাই এ যাবৎকাল বেশী ভূমিকা রাখছে। কওমী রাজনীতিবিদদের প্রতি সরকার ও বিরোধী দল আস্থা রাখতে পারবে না। কারণ রাজনৈতিক নেতারা সরকার কিংবা বিরোধী দলের দিকে আসক্ত থাকলেও ছাত্র জনতা তাদের কমান্ড মানবে না। ফলে অধিকাংশ কওমী রাজনীতিবিদ বিভিন্ন ভাবে অপমান অপদস্থ হবে। এক কথায়, ভবিষ্যতে কওমী ঘরানার রাজনীতি জটিল হবে এবং ইসলামী সভ্যতা হুমকির সম্মুখীন হওয়ার সমুহ সম্ভবনা রয়েছে। তবে এই কথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, ভবিষ্যতে কওমী এবং ইসলামী সভ্যতার জন্য ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষমান।

এটি আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ। আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণের সাথে একমত হওয়া আবশ্যক নয়। সবার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ থাকতে পারে।

লেখক: 

মোঃ মোস্তফা জামাল ভূইয়া

এ্যাডভোকেট 

সুপ্রীম কোর্ট অভ বাংলাদেশ