বয়োবৃদ্ধদের সোনালি অধ্যায়: হাফেজ্জী হুজুর থেকে আহমদ শফি 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ২২ ২০২০, ১৭:৩৩

সৈয়দ মবনু: আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের বাসায় প্রচুর গরু ছিলো। পাঁচ-সাতটা গাভী দুধ দিতো। প্রতিদিন খাওয়ার পর যা থাকতো আম্মা সেগুলো দিয়ে দই, মাটা, ঘি, মাখন ইত্যাদি তৈরি করতেন। তখন দেখতাম নতুন ঘি থেকে আম্মা পুরাতন ঘি-কে বেশি গুরুত্ব দিতেন এবং তা যত্ন করে রাখতেন। বুঝতাম না পুরাতন ঘি-এর এত মূল্য কেন? বয়স বৃদ্ধির পর বুঝতে পারি তা মানুষ বিভিন্ন রোগে ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করেন।

আমাদের সমাজে যারা মনে করেন, বৃদ্ধ হলে মানুষ নেতৃত্বের যোগ্যতা হারায় আমি তাদেরকে আমার শৈশব-কৈশোরের হালকা রক্ত, হালকা চিন্তা এবং জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার স্বল্পতার সাথে মিলিয়ে বিবেচনা করে দেখলাম, তারা অনেক ব্যাপার-স্যাপার সম্পর্কে অনবিজ্ঞ। তারা অনেকেই জানেন না কিংবা জানলেও স্বার্থিক কারণে না-জানার অভিনয় করছেন, মানব সভ্যতার ইতিহাসে নেতৃত্ব-কর্তৃত্বে বুজুর্গদের একটি বিশাল সোনালি অধ্যায় রয়েছে। আমরা হয়তো জানি, কিংবা জেনেও না জানার ভাব ধরছি যে, বুজুর্গ শব্দের অর্থই বয়স্ক। ইসলামের ইতিহাসে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে এই বুজুর্গ অর্থাৎ বৃদ্ধদের অনেক সোনালি অধ্যায় পাওয়া যায়। ছোট্ট পরিসরে বিশাল মানব ক্যাম্পাসকে ধারণ করা এই মূহুর্তে সম্ভব হবে না।

আমরা আজ বিষয়টাকে উপস্থাপনের জন্য শুধু ইসলামের ইতিহাস থেকে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বয়স্কদের কিছু উপমা নেবো। আমরা একজন বৃদ্ধা মহিলার সোনালি ইতিহাস বলতে পারি যিনি নবুওয়াতের আগে জবলে নুরের গারে হেরায় নিয়মিত হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে খাদ্য ও পানি পৌঁছাতেন। জবল অর্থ পাহাড়। অবশ্যই টিলা নয়। আমরা যারা জবলে নুরের গারে হেরা দেখেছি শুধু তারাই অনুভব করতে পারবো এত উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় এই বৃদ্ধা কীভাবে যেতেন? এই বৃদ্ধা মহিলা তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে নবুওয়াতের নুরে আতংকিত কমলিওয়ালা নবী মুহাম্মদুর রাসুল (সা.) কে মক্কার বিজ্ঞজনের কাছে নিয়েগেছেন, পাশে দাঁড়িয়ে সাহস দিয়েছেন, মানুষের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন, ইসলামের জন্য নিজের সকল সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছেন এবং হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে অনেক যুবতিও ছিলেন, কিন্তু আল্লাহপাকের হুকুমে একমাত্র তিনিই হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে সন্তান উপহার দিতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি হলেন আম্মাজান হযরত খাদিজা (রা.)।

ইসলামের প্রথম নেতৃত্বের যে চারজনের সময়কে সোনালি যুগ বলা হয় তাদের দুজন অর্থাৎ প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা.) এবং তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রা.) সাহাবীদের মধ্যে অনেক বয়স্ক ছিলেন।

বর্তমানে আমাদের কথাবার্তা, কর্মকান্ডসমূহ দেখলে মনে হয়না যে আমাদের আল্লাহ সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান রয়েছে। অনেকের কথাবার্তায় মনে হয় না আল্লাহর উপর কিংবা আল্লাহর শক্তির উপর পূর্ণঙ্গ ঈমান আছে। আমরা অনেকেই জানি না আমাদের অতীত সম্পর্কেও। হায় আফসুস, আমরা দ্বীনের মর্ম সম্পর্কে এতই মূর্খ যে নিজকে মুসলমান দাবি করলে সোনালি যুগের মুসলমানদের অপমান হয়। আমি উলামাদের ঐক্য বিষয়ক এক লেখায় বলেছিলাম, প্রত্যেকে নিজ অবস্থান থেকে কোরআন-হাদিস এবং আনুসাঙ্গিক বিষয়সমূহে গভীর জ্ঞান অর্জন করা। আল্লাহর জাতি এবং সিফাতি নামগুলোর তাজাল্লি এবং দ্বিপ্তির কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা অর্জনের পাশাপাশি ইসলাম ও বিশ্বের ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান, প্রচলিত সমাজের মানুষের ভাবনার শ্রেণীবিভাজন ইত্যাদি সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এতটুকু জ্ঞান অর্জিত না হলে কেউ চাইলেও ঐক্যের পথে যেতে পারবে না। আমি এখানেও সেই কথাই বলবো এতটুকু জ্ঞান না থাকলে কিংবা এতটুকু জ্ঞানের ধারণা না থাকলে একজন মুসলামন নেতৃত্ব বিষয়ক অনেক কিছুই ভাবতে পারবে না।

গণতান্ত্রিক ভোটের রাজনীতিতে একজন মূর্খ, অসৎ মানুষের রায় আর একজন জ্ঞানী আলেম এবং চরিত্রবান ওলির রায় সমার্থক হয়ে যাওয়ায় নেতৃত্বে এখন আর জ্ঞান, বুদ্ধি, কর্ম এবং প্রেমের সমন্বয়ের তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। একেবারে চরিত্রহীন মানুষগুলোও সংঘবদ্ধ হয়ে, টাকা দিয়ে ভোট খরিদ করে বড় বড় চেয়ারে বসে যাচ্ছে। ইসলামী প্রতিষ্ঠান এবং ইসলামী সংগঠনগুলোও এখন সঙ্গগুণে লোহা জলে ভাসে। ইসলামিকদের মধ্যে ডুকে যাওয়া কর্পোরেট বা পূঁজিবাদিরা সংঘবদ্ধ হয়ে দালালি, সুদ, চাঁদাবাজি ইত্যাদি বিভিন্ন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এবং ধর্মপ্রাণদের মধ্যে মূর্খ যারা তাদেরকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে নিজেদের পক্ষে নিয়ে গণরায় সৃষ্টি করে নিচ্ছে। আমি আমাদের সময়ের অনেকেরই নাম বলতে পারবো, প্রমাণ দিতে পারবো তারা ইসলামের নামে বড় বড় আদর্শিক কথা বলেছেন, কিন্তু ব্যাংকের সুদে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে নিয়েছেন। অনেকে বিভিন্ন সমিতি গঠন করে সাধারণ কর্মিদের টাকা আত্মসাৎ করে নিয়েছেন। অনেক জেলেও গিয়েছেন। অনেকে ক্যাডার তৈরি করে মানুষের জায়গাও দখল করে নিয়েছেন। সরকারী কিংবা এনেমি জায়গা নিজেদের দখলে আনতে মিথ্যা দলিল তৈরি করেছেন এবং ভূমি অফিসে বড় অংকের টাকা ঘুষ দিয়েছেন। আমাদের বিগত ছয় পুরুষের মধ্যে কেউ গরীব হননি, আমাদের সম্পদ বিগত ছয় পুরুষের মধ্যে হ্রাস পায়নি, বাবা-চাচা যৌবন থেকে দেশে যেমন ব্যবসা করেছেন, তেমনি করেছেন ইংল্যান্ডেও, তবু একটু বিলাসিতা করে ভালো একটি গাড়ি আজও চালাতে পারিনি। অথচ যাকে দেখলাম ছাত্র জীবনে নুন আনতে পান্তা নেই সে আজ ইসলামী আন্দোলন করে কিংবা রাজনীতি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।

সমাজের মানুষের সাথে কথা বললে স্পষ্ট, সবাই তাদের চরিত্র সম্পর্কে জানে। কিন্তু তবু মধুপোঁকার মতো দৌঁড়ে ওদের পিছু। অসৎ এবং চোর জানার পরও আমরা ওদের অনেকের পিছনে নামাজ পড়ি। ব্যক্তিগতভাবে অনেকে বলেনও, ‘ভাই জানি লোকটা খুব অসৎ, কিন্তু কি করবো, নেতা তো। কথা বললে দল ছাড়তে হবে। আমাদের তো আর তাদের মতো শক্তি ও টাকা নেই।’ অনেক ইসলামী দলের নেতা-কর্মির কাছেও আমি এই বক্তব্য শোনেছি। আশ্চর্য, নিজেরা এমন বক্তব্য দিয়ে আবার অন্য দলের নেতাকে সৎ এবং পরহেজগার দেখতে চাই। ওরা কোন সামান্য অন্যায় করলে আমরা সমালোচনায় থাকি পঞ্চমুখ। পৃথিবীটা এই নীতির মধ্যে খুব দ্রুতগতিতে খারাপির দিকে দৌঁড়তে ছিলো। মহান আল্লাহ করোনা ভাইরাস দিয়ে লাগামের মধ্যে ঝাপটে ধরলেন, পৃথিবীটাকে বিশাল ঝাকুনি দিলেন। এভাবে ঝাকুনি দেওয়া আল্লাহর সুন্নাতের অংশ। তিনি বিভিন্নভাবে মানুষকে বিভিন্ন সময় ঝাকুনি দিয়ে হুশিয়ার করেন। এই বিভিন্নভাবে ঝাকুনির মধ্যে যেমন রোগ-ভায়রাস, গজব রয়েছে, তেমনি রয়েছে নবী-রাসুল-কিতাব, রহমত, বরকত, ওলি-বুজুর্গ ইত্যাদি দিয়ে মানুষকে হুশিয়ার করা।

বৃটিশযুগে ভারতবর্ষে শিক্ষা-সংস্কৃতির দিকে মুসলমানদের জন্য চারটি বড় নিয়ামত; ১. দারুল উলূম দেওবন্দ। ২. আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়। ৩. কোলকাতা আলিয়া মাদরাসা। ৪. নদওয়াতুল উলামা। এই চার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভুলে-শুদ্ধে দাঁড়িয়ে থেকে এই অঞ্চলের মুসলমানদের শিক্ষা এবং সংস্কৃতিকে রক্ষার পথ প্রসস্ত করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো যারা তৈরি করেছেন, যারা রক্ষা করেছেন আমরা তাদের প্রচুর দোষ বের করে সমালোচনা করতে পারবো। কিন্তু তবু স্বীকার করতে হবে, তারা ছিলেন আমাদের জন্য আল্লাহর অনুদান। বলুন, আল্লাহর কোন নিয়ামত আমরা অস্বীকার করবো? আমরা যদি শুধু বাংলাদেশের কথা বলি, তবে কি অস্বীকার করা যাবে, এখানে শহরে গ্রামে আমাদের দ্বীন-আকিদা, ইলম কিংবা সংস্কৃতি রক্ষায় এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রদের কর্তৃক তৈরিকৃত প্রতিষ্ঠানসমূহের কিংবা প্রতিষ্ঠানসমূহের ছাত্রদের অবদান? ক’জনের নাম বলবো? জাতির প্রতিটি সংকটময় মূহুর্তে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আমরা যদি দৃষ্টিপাত করি তবে দেখবো মানব সমাজে ভুল করে সংকট তৈরি করে তরুণেরা, আর সমাধান করেন বৃদ্ধরা। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে অত্যাচারী শাসক ইয়াহিয়া-ভূট্টোর পক্ষ নিয়ে কিছু ইসলামিক দলের নেতারা যে ভুল করেছিলেন তার প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার পর এদেশে ইসলামী রাজনীতি প্রায় বন্ধ হয়েগিয়েছিলো। খতিবে আজম সিদ্দিক আহমদ (র.), মাওলানা আতাহার আলী (র.) প্রমূখরা নেজামে ইসলাম পাটি গঠন করে ধীর গতিতে ইসলামী রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরির উদ্যোগ নিলেন। তারা কিছুটা পথ খুলে দিয়েগেলে নব্বই বছর বয়সে এসে এক বৃদ্ধ সেই পথে গণজোয়ার সৃষ্টি করে বিশ্বকে আলোড়িত করে দিলেন। আজকে যারা রাজপথে ইসলামী হুকুমতের জন্য রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং করেন তারা একটু চিন্তা করুন ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ের ইসলামি রাজনীতির অবস্থা। অথচ একজন বৃদ্ধ হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী  হুজুর সবকিছু উলট-পালট করে দিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে ইসলামিক দলগুলোও পা রাখতে শুরু করলো। আজকে যারা বয়োবৃদ্ধ আহমদ শফির বিরুদ্ধে বলছেন তারা একটু ভাবুন বয়োবৃদ্ধ হযরত হাফেজ্জীহুজুরের কথা। আমরা তাঁর সম্পর্কে কতটুকু জানি? আজকে বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে যে নাদিয়া আর নুরানী পদ্ধতির মক্তব শিক্ষার ব্যাপক সফলতা, এগুলোরও স্বপ্নদ্রষ্টা হযরত হাফেজ্জীহুজুর (র.)। নুরানির প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা বেলায়েত (র.) এবং নাদিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব (র.) দুজনই হযরত হাফেজ্জী হুজুর (র.)-এর ছাত্র এবং আধ্যাত্মিক শিষ্য। এই বয়োবৃদ্ধ হাফেজ্জীহুজুর বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির জন্য যে অবদান রেখে গেছেন তা ইতিহাস পাঠ না করলে ইসলামী দলগুলোর নতুন প্রজন্ম কীভাবে জানবে যে, ইসলামে বয়োবৃদ্ধদেরও বিশাল গুরুত্ব রয়েছে?

আল্লামা আহমদ শফি একজন সাধক এবং হাদিসের শিক্ষক। রাজনীতিতে তিনি কোনদিন ছিলেন না এবং আজও নেই। শাহবাগীদের ইসলাম বিরোধী উত্তাল তরঙ্গে যখন ইসলামী ঘরগুলোর ভিত কম্পিত, চারদিকে ধর্মপ্রাণ মানুষগুলো আতংকিত, ইসলাম নামে যত প্রতিষ্ঠান সবগুলো ক্ষতিগ্রস্ত তখন গোটা বাংলাদেশের নেতা পর্যায়ের লোকেরা গিয়ে উপস্থিত হলেন চট্টগ্রামের হাটাজারিতে।

বয়োবৃদ্ধ আহমদ শফিকে অনুরোদ করলেন দ্বীন-ইসলাম এবং জাতিকে রক্ষার জন্য নেতৃত্ব গ্রহণ করতে। তিনি তো এই লাইনের লোক না। তবু বেরিয়ে এলেন দ্বীনের জন্য, ইসলামের জন্য, অসহায় মানুষের জন্য। ডাক দিলেন আন্দোলনের। অসহায় কিংকর্তব্য বিমূঢ় মানুষগুলো তাঁর ডাকে মাঠে এলো। দীর্ঘ এবং ঐতিহাসিক আন্দোলন হলো। শাহবাগিরা ভয়ে পালিয়ে কেউ বিদেশ আর কেউ আত্মগোপন করলো। বয়োবৃদ্ধ আহমদ শফি মনে করলেন তার দায়িত্ব শেষ, তিনিও বাড়ি ফিরতে চাইলেন। কিন্তু জড়ো হওয়া কওমির হুজুরা দেখলেন, হুজুর যখন মাঠে এসেছেন তা হলে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হুজুরকে দিয়ে আদায় করে নেওয়া উচিৎ। তা হলো সরকারের কাছ থেকে কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি আদায়। হুজুর যখন সবার অনুরোধে সরকারের কাছে এই দাবী করেন তখন সরকারও ভাবে এই সুযোগ গ্রহণ করে হেফাজতের আন্দোলনে বিগরে যাওয়া কওমির হুজুরদের একটু আস্তাভাজন হওয়া প্রয়োজন। উভয়ের স্বার্থে আল্লামা আহমদ শফিকে বর বানিয়ে কওমির হুজুররা বইরাতি হয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে। কিন্তু এই যাওয়াকে চারদল কিংবা বিএনপি-জামায়াত জোট সুনজরে দেখলো না। কওমির হুজুররা তখন এই কুনজরকে তেমন গুরুত্ব দিলেন না, বরং বললেন, তোমাদের জোট সরকারের সময় আমরা জোটে থেকেও এই দাবী আদায় করতে পারিনি, শায়খুল হাদিস জোটের নেতা হয়েও প্রান্থপথে তিনদিন অনশন করতে হয়েছে কওমির স্বীকৃতির দাবীতে।

আওয়ামীলীগ আমাদেরকে স্বীকৃতি দিতেছে, আমরা তাদের এই অবদানকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করবো। এখানেই শুরু হলো নতুন সংঘাত। স্বীকৃতি আদায় করে বিএনপি-জামায়াত জোটের কওমি দলগুলো যখন ঘরে ফিরে তখন বিভিন্ন প্রকারের নিন্দার মুখোমুখি হতে থাকেন। ধীরে ধীরে তারা সকল দোষ নন্দ ঘোষের মতো আহমদ শফি ও তাঁর ছেলের উপর ছাপিয়ে নিজেরা জমজমের পানি হতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তারা তাদের জোটের স্বার্থে আহমদ শফি, তাঁর ছেলে এবং তাঁর ভক্ত-শিষ্যদের বিরোধীতা শুরু করেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিজেদের চিন্তার লোক বসানোর চেষ্টা করেন। এখন আহমদ শফির যত দোষ আছে সবই তারা প্রচার করেন এমন কি তারা কেউ কেউ আহমদ শফির দ্রুত মৃত্যুও কামনা করেছেন।

আল্লাহপাক যুগে যুগে এই সকল বুজুর্গদের মাধ্যমে দ্বীনের বড় বড় খিদমাত উঠিয়েছেন, তাদেরকে পরিক্ষায় নিক্ষেপ করেছেন, উত্তির্ণ করেছেন এবং তাদের সম্মান তাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহই মানুষকে সম্মান দেন, সম্মান ছিনিয়ে নেন। আল্লাহই সর্বশক্তিমান।