ব্রহ্মপুত্র নদের চলমান ভাঙনে বাস্তুহারা সহস্রাধিক পরিবার

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ০৬ ২০২২, ১৭:৫০

রোকন সরকার, কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা :

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাট এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান (৫৫) ব্রহ্মপুত্র নদের চলমান ভাঙনে বাস্তুহারা হয়েছে তার পরিবার । করুণ স্বরে বললেন,ভাঙনে হামরা ফকির হয়া গেছি বাহে। জমি গেইছে, ভিটা গেইছে। বাড়ি সরাইতে সরাইতে হাফসি গেছি (ক্লান্ত হয়ে গেছি)। হামারগুলার এতি কাইয়ো চোখ দেয় না।ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে অসহায় হয়ে পড়া শুধু মজিবর নয় বাস্তুহারা করেছে ওই এলাকার অন্তত এক হাজার বাসিন্দাকে। চলমান ভাঙনের ঝুঁকিতে আরও কয়েকশ পরিবার।

সম্প্রতি উপজেলার বেগমগঞ্জের মোল্লারহাট ও কড্ডার মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, তীব্র ভাঙনে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা। ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে একের পর এক পরিবার, স্থাপনা। বিলীনের অপেক্ষায় মোল্লারহাট বাজার। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গেলো বর্ষায় বাজার রক্ষায় কিছু জিওব্যাগ ফেলেছে। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রের স্রোতে সেসব জিওব্যাগ নদের গর্ভে চলে যাচ্ছে। তীব্র ভাঙন চললেও সবকিছুকে উপেক্ষা করে বাজারের কাছেই চলছে অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন। এতে ভাঙনের ঝুঁকি আরও বাড়ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। কিন্তু দেখার কেউ নেই।

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ছয় বার ভিটা সরিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দা আরমান আলী। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে তিনি ভিটা সরিয়ে অন্যত্র নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ছয়বার বাড়ি সরাইলং, বুকের ভিতরাটা ভাঙি যায়। এতবার ভিটা ভাঙে তাও কাইয়ো শোনে না, দেখে না। আমরা খুব অসহায়।’
ভাঙনের শিকার মজিবর, সেকেন্দার, সোহাগসহ ভুক্তভোগীরা জানান, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড পুরোটাই এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশিরভাগ বিলীন হয়ে গেছে। গত ছয় মাসে অন্তত আট শতাধিক পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। আবাদি জমি বিলীন হয়েছে অন্তত হাজার একর।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া জানান, গত ছয় মাসে ব্রহ্মপুত্র আর ধরলার ভাঙনে অন্তত ১২০০ পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। একপাশে ব্রহ্মপুত্র আর একপাশে ধরলা ভাঙছে। ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড পুরোটাই বিলীন। চলমান ভাঙনে ৮ নম্বর আর ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছোট হয়ে আসছে।মানুষ দিশেহারা। আমরা বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে যাচ্ছি। কিন্তু কোনও সমাধান পাচ্ছি না। বাস্তুহারা মানুষ কোনও সহযোগিতা পাচ্ছেন না। আমরা বাধ্য হয়ে মানববন্ধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মানুষ দিশেহারা হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে তারা যাবে কোথায়, খাবে কী?

ভাঙনে হাজারো মানুষের বাস্তুহারা হওয়ার খবরে সম্প্রতি ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, আমি মোল্লারহাটে গেছি। বাজার রক্ষার জন্য যা করার তা করতে হবে। বড় ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে এটা (মোল্লারহাট বাজার) এবছরই ভেঙে যাবে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলেছি। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়েও যোগাযোগ করবো।

পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনের জন্য আমি ওই এলাকায় যাচ্ছি। বর্তমানে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার কোনও সুযোগ নেই। ওই এলাকা পরিদর্শন করে আমরা প্রকল্প পাঠাবো। প্রকল্প অনুমোদন হলে আমরা ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেবো।