বেফাকের কর্তা ব্যক্তিদের ফোনালাপ ফাঁসে ব্যাপক তোলপাড়: ধামাচাপার অপচেষ্টা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ১২ ২০২০, ২২:৪২

স্টাফ রিপোর্টার:

বেশ কয়েক দিন যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসার জাতীয় শিক্ষাবোর্ড- বেফাকের নেতৃবৃন্দের অডিও ফোনালাপ। ফাঁস হওয়া ভয়েসগুলোতে আছে প্রশ্নপত্র ফাঁস, বেফাকের খাস কমিটি বাতিল, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিয়োগের তদবির, বর্তমান বেফাকের মহাপরিচালক মাওলানা যুবায়ের আহমদ চৌধুরীকে মাইনাস ফর্মুলাসহ নানা ষড়যন্ত্রের কথা।

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। তবে এ বিষয়ে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বরং অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে কৃতকর্ম ধামাচাপা দেয়ার নানা ধরনের অপচেষ্টার।

কে বা কারা এই ফোনালাপ ফাঁস করেছে তাদের দমিয়ে দিতে যারপরনাই চেষ্টা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেন usama Muhammad নামের একজন ফেসবুক এক্টিভিস্ট।

তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে যেভাবে উল্লেখ করেছেন তা হুবহু পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো…

মহাসচিব! আর কত দূর্নীতি প্রকাশ পেলে আপনারা সরে দাড়াবেন? আপনি হাজার হাজার ছাত্রের বুখারীর উস্তায, এমনকি আমারও বুখারি-তিরমীযির উস্তায আপনি। আমরা কোন অবস্থাতেই চাইনা জাতির সামনে এসব দূর্নীতির চিত্র উঠে আসুক। গরীবের আমানতের হিসাব বুঝিয়ে দিয়ে অনিয়মের দোষ স্বীকার করে সম্মানের সাথে সরে দাড়াবেন বলে এখনো আশা করি।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবূ ইউসুফও স্বীকার করেছে বিপদে পড়লে সে সব বলে দিবে, কখন কোথায় কেন কি করেছেন আপনারা?

অতএব আর ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করবেন না। আপনার সাথে আমাদের তরুণ প্রজন্মের কোন দন্দ্ব নেই, আমরা অন্যায় ও দূর্নীতির ঘোরবিরোধী, যাদের নামই উঠে আসবে প্রমাণ সহ তাদের নাম প্রকাশ করতে বাধ্য হবো এ ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করতে অন্তত আমরা তরুণ প্রজন্ম প্রস্তত নই।

আপনি গতাকল আপনার কাছের লোকদের নিকট দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন যে, যে কোন মূল্যে আমাকে খুঁজে বের করবেন! হ্যাঁ, ক্ষমতা আপনার রয়েছে। আমার পরিণতি আমি বু্ঝে শুনেই শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবো ইনশাআল্লাহ্। আমি কারো সাথে বিন্দুমাত্র আপোষ করবো না। হয়ত আমার ১৪ বছর জেল হবে! কিংবা মাসের পর মাস রিমান্ডে থাকবো! অথবা জাতির রোষাণল থেকে বাঁচতে আপনারা আমাকে গুম করে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করবেননা। এক্ষেত্রে আমার অবস্থান… فلست أبالي حين أقتل مسلما

গত ৪ তারিখ শনিবার সর্বপ্রথম আমি আনাসের ফরিদাবাদ অবস্থানের জানান দিয়েছি ফেসবুকে। তারপর কী করলেন! দালালরা ফেসবুকে প্রচার শুরু করলো আপনারা বেফাক মিটিং শেষ করে মাগরিব পর্যন্ত নাকি মাদরাসায়ই আসেননি!
তারপর দিন পুলিশের সাইবার ক্রাইম টিমকে ডেকে আনলেন মাদরাসায়! কী হচ্ছে তাহলে এসব??

আপনাদের ক্ষমতা অনেক বেশী সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। আমি এক উসামা হারিয়ে গেলে আল্লাহ লক্ষ উসামা সময় মত দাড় করিয়ে দিবেন ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহ আমাকে আপোষ করে দ্বীন রক্ষার ঠিকাদারি দেননি। আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক এখনো সেই প্রত্যাশা ই করি।
মাআসসালাম: 𝑼𝒔𝒂𝒎𝒂 𝑴𝒖𝒉𝒂𝒎𝒎𝒂𝒅

অডিও ক্লিপে আলাপ করেছেন- বাংলাদশে কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মহাসচিব ও আল হাইয়াতুল উলয়ার ভারপ্রাপ্ত কো চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফ।

ভিন্ন আরেকটি কলে কথা বলেছেন- হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষা পরিচালক এবং বেফাকের সহসভাপতি- সাহেবজাদা মাওলানা আনাস মাদানী ও বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফ। আরও পাওয়া গেছে বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফ এবং ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল গনীর মধ্যকার নানা বিষয়ে কথোপকথন।

মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস ও বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফের একটি ফোনালাপ এমন- মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসকে বলতে শোনা যায়, নতুন নায়েবে নাজিম (সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক) একজন ঠিক করেন!

মুফতি আবু ইউসুফ: নতুন তো পাইতেছি না। আমিতো হুজুর খুব চেষ্টা করছি একজন নতুন নায়েবে নাজিমের জন্য। লোক তো পাইতেছি না।

মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস: আমি দিলে আপনি কি গ্রহণ করবেন?
মুফতি আবু ইউসুফ: আপনি দিলে গ্রহণ করমু না মানে? এটা প্রশ্ন কী করলেন? এটা তো আমার মাথার উপর থাকবে আপনি দিলে। যারে দিবেন কিন্তু।

মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস: আপনি এটা গ্রহণ করে কাজ করাবেন।
মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস: বেফাকে নম্বরে আওয়াল হইছে।
মুফতি আবু ইউসুফ: কাজকামু বুঝবনি? বয়স-টয়স কেমন হইছে?

মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস: বয়স-টয়স হিসাবে করে আপনারে কমুনে।

মুফতি আবু ইউসুফ: আচ্ছা। যদি হুজুরের হাতে থাকে ভাল হবে। অ্যাই আর লগে যদি মুআফাকাত অয়, তাহলে উঠাইয়া লাইমু হুজুর। ইনশাআল্লাহ। হুজুর দিলে ঝামেলা নাই।

মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস: আমি যে দিছি কাউরে বইলেন না।
মুফতি আবু ইউসুফ: এটা শুধু আমার আপনের মধ্যে থাকব।

আরেকটি কলে মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস পরিচালনাধীন একটি মাদরাসার মিশকাত জামাতে অংশ না নেয়া ছাত্রদের পদোন্নতির ব্যাপারে আলোচনা করতে শোনা যায়। সেখানে কাগজপত্র রেডি করে সব ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিতে শোনা যায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে।

বেফাকের খাস কমিটির বৈঠক চলাকালে আরেকটি ফোনালাপে মাওলানা আবু ইউসুফ আনাস মাদানীকে ‘বাজানকে’ (হাটহাজারী হুজুর) বলে খাস কমিটি বাতিলের সুপারিশ করেন। হাটহাজারীর বিরুদ্ধে মাওলানা আনোয়ার শাহ, মুফতি ওয়াক্কাস, মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করেন।

অনলাইন অফলাইনে অডিও রেকর্ড বিষয়ে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। ফাঁস হওয়া চারটি অডিওর মধ্যে চারটিতেই বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফের কণ্ঠ শোনা যায়।

অডিও কলের সত্যতা যাচাইয়ে বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।