বেফাককে বাঁচাতে হবে বৃহত্তর স্বার্থেই

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ১৩ ২০১৯, ১৩:৫৮

সৈয়দ শামছুল হুদা: বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া বাংলাদেশ (বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড) এর শত্রুর সংখ্যা নেহাতই কম নয়। বেফাক একটি শক্তিশালী বোর্ড না হলেও বৃহত্তম বোর্ড। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো। এই বেফাককে নিয়ে এখন কেউ কেউ গেম খেলছেন। বেফাককে কেউ কেউ রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত করতে চায়। নিজেরা যখন বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়ে, তখনই বেফাককে ঢাল হিসেবে কেউ কেউ ব্যবহার করে। বেফাকের সর্বশেষ সাধারণ সভায় যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে যোগ্যতা, প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে নয়, বরং চেহারা দেখে দেখে, নাতি, পুতি, ধুতিদের কমিটিতে অর্ন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশাল কমিটি করা হয়েছে একটি বোর্ডের। আমাদের যে চরিত্র সেটা হলো, সবজায়গাতেই আমার নাম থাকতে হবে। আমার সাথে আমার পছন্দের লোকদের নাম অবশ্যই থাকতে হবে। আজ এসব কারণেই বেফাককে বিতর্কিত করার জন্য ভেতর থেকেই কেউ কেউ ষড়যন্ত্র করছে।

আমাদের শেষ ভরসার জায়গা বেফাক। সেটাকে যদি ধ্বংস করা যায়, বিতর্কিত করা যায়, তাহলে অনেকের সুবিধা হয়। ইচ্ছেমতো কওমী আলেমদের নিয়ে গেম খেলা যাবে। কেউ সরকারের লাটিয়াল বাহিনীতে পরিণত হবে। কেউ বিদেশি কোন অপশক্তির দালালে পরিণত হবে। কারণ সবার সাথেই হাজার হাজার টুপি পাঞ্জাবী পরা তালেবুল ইলম থাকবে। তারা প্রভুদের খুশি করার জন্য, নিজের আখের গোছানোর জন্য কওমী অঙ্গনের সহজ-সরল ছাত্রদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে পারবে। একক বেফাকের কারণে এখনো সেভাবে পারছে না, যেভাবে রাজনৈতিক দলের নামে পারছে। আখের গোছাচ্ছে। একেকটি বড় মাদ্রাসা একেকটি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রবিন্দু। কিছু হলেই ছাত্র নিয়ে রাজপথে নেমে পড়ে। এরা জনগণকে নিয়ে রাজনীতি করে না বলে জনগণের কাছে এদের কোন জবাবদিহিতাও নেই।
একটি স্বার্থান্বেষী মহল বেফাকে ঢুকে গেছে। এরা বেফাককে কুক্ষিগত করে আরো বেশি সুবিধা হাসিলের চেষ্টা করে যাচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হয়। এরাই বেফাককে শেষ করে দিতে কাজ করছে। এছাড়া বেফাককে দিয়ে জঙ্গীবাদ বিরোধী মিছিল করানো, সাদ সাহেবের অনুসারীদের নিয়ে অতিরঞ্জন করা, তাদেরকে তাদের মাদ্রাসার নামে পরীক্ষা দিতে না দেওয়া, এসব ছিল বাড়াবাড়ি। এগুলোর ক্ষোভ মিটানোর জন্যও কেউ কেউ বেফাককে হাস্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার চেষ্টা করতে পারে।

আমাদের অনেকেই বেফাককে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। আফসোস লাগে এদের কর্মকান্ড দেখে। বেফাকের ভিতরে অসংখ্য সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধানের জন্য অবশ্যই আমাদেরকে প্রশ্ন তুলতে হবে। কিন্তু কারো কারো কথায় মনে হয় বেফাকই আমাদের বড় সমস্যা। হায় হায় প্রতিষ্ঠানে অভিষিক্ত করে কি ক্ষোভ মেটাতে চায় তা পরিস্কার না হলেও কিছুটা আঁচ করা যায়।
বেফাক কোন সরকারী প্রতিষ্ঠান নয়। বেফাক কোন সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানও নয়। আর সরকারী স্বীকৃতি শুধুমাত্র একটি রাস্ট্রীয় অনুমোদনমাত্র। এই স্বীকৃতির দ্বারা রাষ্ট্রের কোন কাজেই প্রবেশ করা যাবে না। এরপরও এই স্বীকৃতি নিয়ে আমরা অতিরঞ্জন করছি। মনে হয় সবকিছুই পেয়ে গেছি। আমরা কিছুই পাই নাই। এতদিন একটি শিক্ষা ব্যবস্থার কোন রকম অনুমোদন ছিল না, এখন বলা যাবে যে, আমরাও সরকার অনুমোদিত। এর বাইরে কিছুই নয়। কিন্তু এটাকে আমরা খুব বড় করে তুলে ধরছি। ফলে প্রশ্নফাঁসের মতো অরুচিকর বিষয়ও এখন শুনতে হচ্ছে। দাওরায়ে হাদীস পাশ করার দ্বারা সরকারী কোন চাকুরীই মিলবে না এটা জানা থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন বাড়াবাড়ি করছি তা বুঝতে পারছি না।

দয়া করে আসুন, আমরা বেফাককে বিতর্কিত না করি। এটাকে বাঁচিয়ে রেখে কীভাবে ভুলগুলো সংশোধন করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করি, পরামর্শ দিই। বেফাকে যারা কাজ করছেন তারাও মানুষ সেটা মনে রাখতে হবে। আর বেফাকে যারা কাজ করছেন, তারা যে বিরাট কিছু হয়ে যান নাই সেটাও যেন তাদের মনে থাকে। এতটুকু স্মরণ করিয়ে দিতে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
আজ যা ঘটলো, তা বেফাককে আপন কাজ থেকে দূরে রাখার কুফল। বেফাক একটি শিক্ষাবোর্ড। তারা শিক্ষা সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত থাকবে। কিন্তু তা না করে বেফাকেরই কেউ কেউ অতি উৎসাহি হয়ে বেফাককে দিয়ে সবকিছু মোকাবেলা করার মানসিকতা লালন করে। বেফাকে বিভিন্নমুখি রাজনীতি করা লোকগুলো বড় বড় পদ বাগিয়ে নিয়েছে। তারা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে বেফাকে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। বেফাকের ওপর কেউ কেউ শক্তি প্রয়োগ করে, সরকারের সাথে লিয়াজো মেন্টেইন করে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে।
বেফাকের ইতিহাসে যা ঘটে নাই, আজ তাই ঘটলো। এটা আমাদের জন্য লজ্জাস্কর। সকলের প্রতি অনুরোধ রাখবো, বেফাকে যারা যেখান থেকেই আসেন না কেন, বেফাককে শুধুমাত্র কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত থাকতে দিন।

আর বেফাক ও হাইয়াতুল উলয়াতে যাদের পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাদেরকে দেখে শুনে নিয়োগ দিন। এসব মনিটরিং করার ব্যবস্থা করুন। কোন তোষামোদকারী, অযোগ্য, অথর্বদের দায়িত্ব দিয়ে আমাদেরকে আর কষ্ট দিবেন না।