বিয়ের আগে রক্তের গ্রুপ জানার প্রয়োজনীয়তা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ২৫ ২০২০, ১৫:৩৪

তাহসিন আহমাদ

বিয়ের আগে বর ও কনের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার আগে প্রথমে আমাদের রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে কিছু কথা জানা দরকার।

প্রধানত রক্তের গ্রুপ কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটা হল ABO system (A, B, AB & O)। আরেকটা হল Rh factor। Rh factor আবার দুই রকমঃ Rh positive(+ve) & Rh negative(-ve)। অর্থাৎ Rh factor ঠিক করবে রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হবে না নেগেটিভ হবে। রক্তের গ্রুপগুলো হলঃ A+ve, A-ve, B+ve, B-ve, AB+ve, AB-ve O+ve, O-ve.

বিয়ের আগে রক্তের গ্রুপ জানার প্রয়োজনীয়তা

যদি অন্য গ্রুপের রক্ত কারো শরীরে দেওয়া হয় তাহলে কী হবে? কেন টেস্ট করাবেন?
যখন কোনো Rh নেগেটিভ গ্রুপের ব্যক্তিকে Rh পজিটিভ গ্রুপের রক্ত দেয়া হয় তখন প্রথমবারে সাধারণত কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু এর বিরুদ্ধে রোগীর শরীরে এন্টিবডি তৈরী হবে। ফলে রোগী যদি আবার কখনও পজিটিভ রক্ত শরীরের নেয় তাহলে তার রক্তের cell গুলো ভেঙ্গে যাবে, এবং মারাত্মক সমস্যা দেখা দেবে। যেমন জ্বর, কিডনি ফেইলিউর, হঠাৎ মৃত্যু ইত্যাদি। এই সমস্যাকে মেডিকেল টার্ম এ বলা হয় ABO incompatibility।

স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ কী রকম হওয়া দরকার?

যদি স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হয় তাহলে স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ বা নেগেটিভ যে কোনো একটি হলেই হবে। কিন্তু স্বামীর রক্তের গ্রুপ যদি পজিটিভ হয়, তাহলে স্ত্রীকেও পজিটিভ রক্তের গ্রুপের একজন হতে হবে। কোনোভাবেই স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হওয়া চলবে না। অর্থাৎ একজন নেগেটিভ রক্তের গ্রুপের নারী কেবলই একজন নেগেটিভ রক্তের গ্রুপের পুরুষকে বিয়ে করাই নিরাপদ।

যদি স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হয় আর স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হয় তাহলে কী সমস্যা হবে?
হবু স্বামী/স্ত্রীর রক্ত পরীক্ষা | Biyeta Blogরক্তের গ্রুপ মিলে গেলে কোন সমস্যা হয় না। তবে ভিন্ন রক্তের গ্রুপে স্ত্রী যদি নেগেটিভ হয় আর স্বামী যদি পজিটিভ হয়, তাহলে সন্তান জন্মের সময়ে ‘লিথাল জিন’ বা ‘মারন জিন’ নামে একটি জিন তৈরি হয় যা পরবর্তীতে জাইগোট তৈরিতে বাধা দেয় বা জাইগোট মেরে ফেলে। সে ক্ষেত্রে মৃত বাচ্চার জন্ম হয়। যদি স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হয় তাহলে সাধারণতঃ বাচ্চার রক্তের গ্রুপও পজিটিভ হবে। মায়ের রক্তের গ্রুপ যখন নেগেটিভ হবে এবং সে যখন পজিটিভ ভ্রূণ ধারণ করবে তখন, সাধারণত প্রথম বাচ্চার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। তবে ডেলিভারির সময় পজিটিভ ভ্রূণ এর রক্ত, প্লাসেন্টা barrier ভেদ করে এবং প্লাসেন্টা স্থানান্তরের সময় মায়ের শরীরে প্রবেশ করবে।

জেনে নিন রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হলে কেমন হবে-

মায়ের শরীরে ডেলিভারির সময় যে রক্ত প্রবেশ করবে, তা ডেলিভারি হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মায়ের শরীরে Rh এন্টিবডি তৈরী করবে। এবং সমস্যা হবে দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে। যখন মা দ্বিতীয় সন্তান বহন করবে, তখন যদি তার ভ্রূণের রক্তের গ্রুপ পুনরায় পজিটিভ হয় তাহলে মায়ের শরীরে আগে যেই Rh এন্টিবডি তৈরী হয়েছিলো সেটা প্লাসেন্টা barrier ভেদ করে বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করবে। আর যখন ভ্রূণের শরীরে Rh এন্টিবডি ঢুকবে তখন, ভ্রূণ এর RBC এর সাথে জমাট বেঁধে যাবে, যার ফলে লোহিত রক্ত কনিকা ভেঙে যাবে। একে মেডিকেল টার্ম এ “Rh incompatibility” বলে। অর্থাৎ শিশুটি মারা যাবে। অর্থাৎ পজিটিভ রক্তের গ্রুপের পুরুষ নেগেটিভ গ্রুপের মহিলাকে বিয়ে করলে তাঁদের একটিই সন্তান থাকার সম্ভাবনা বেশি। কোন কারণে প্রথম সন্তানটি জন্ম না নিলে পরবর্তীতে তারা নিঃসন্তান থেকে যাবার সম্ভাবনাও অত্যন্ত বেশি।

তাই বিবাহের পূর্বে বর কনের রক্তের গ্রুপ জানা ও রক্ত পরীক্ষা করা জরুরী।