বাহুবল উপজেলা প্রশাসন হোক রোল মডেল

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ০৪ ২০১৯, ১৭:০২

হোসাইন আহমাদ বাহুবলী:
বিগত মাস থেকেই এবং চলতি মাসের আজ অবধি বাহুবলের গ্রামে-গঞ্জে, বাজার-হাটে, অফিস-আদালতে, পাড়ায়-মহল্লায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাহুবল উপজেলায় নবনিযুক্ত উপজেলা নির্বাহি অফিসার জনাব আয়েশা হক।
তিনি ঘুরে ঘুরে সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত প্রকল্প গুলি যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা? সরেজমিনে তদন্ত করে দেখছেন। কোন কালভার্টে কত টাকা বরাদ্দ ছিল? বরাদ্দ মোতাবেক কাজ হয়েছে কিনা?
কোন স্কুল কখন শুরু হয়? কখন শেষ হয়? কোন স্কুলে শিক্ষার্থীরা যথাযথ উপস্থিত আছেন? কোথায় নেই? কোন গ্রামের শিক্ষার্থীরা খাতা কলম ছেড়ে দিয়ে খেলনা নিয়ে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে?
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে ফার্মেসি ও হোটেলগুলোতে অভিযান পরিচালনা, ভিজিএফ কার্ড না পাওয়া দরিদ্র জনগণের অভিযোগ তদন্তে শুনানি সহ বহু জনহিতকর কাজের ফিরিস্তি তিনি সচিত্র তুলে ধরছেন ভার্চুয়াল প্লেসে।

স্কুল কলেজ থেকে নিয়ে গ্রাম পুলিশ পর্যন্ত সরকারি সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর সেলারি অনলাইনে দেয়ার যুগান্তকারী যে পদ্ধতি তিনি ওপেনিং করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

বিশেষ করে ঢাকাসহ গোটা দেশের সকল জেলা শহরগুলিতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবের কারণে, সরকারের উচ্চমহল থেকে ডেঙ্গু জ্বরে প্রতিরোধে, যথাযথ চিকিৎসা সেবা দান এবং পরিষ্কার পরিছন্নতা অবলম্বন করার জন্য, গোটা দেশবাসীর প্রতি, বিশেষ করে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান করার পর, বাহুবল উপজেলায় সরকারি হুকুম তামিলে, বর্তমান উপজেলা নির্বাহি অফিসার যেন কোমরে গামছা বেঁধে নেমেছেন।

মেধা ও প্রজ্ঞার বাস্তবায়ন ঘটিয়ে তিনি এই কাজে সম্পৃক্ত করেছেন বাহুবলের উলামায়ে কেরামকে। বিশেষ করে বাহুবলের সিংহ পুরুষ আলহাজ মলানা আজিজুর রহমান মানিক সাহেবের নেতৃত্বে বাহুবল উপজেলার সকল মাদ্রাসার পরিচালক বৃন্দ এবং ছাত্র বৃন্দকে এই কাজে অংশগ্রহণ করানো তার জন্য বিরাট সাফল্যের। তাইতো বাহুবল উপজেলা চত্বরে কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্রদের পরিষ্কার পরিছন্নতা কর্মসূচি দেখে যারপরনাই পুলকিত হচ্ছিলাম।
যতটুকু জানি বাহুবলের জনসাধারণ কে সাথে নিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বীজ বপন করেছিলেন বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব জসিম উদ্দিন স্যার। এই বীজ হয়তো আজ পত্র-পল্লবে সুশোভিত হয় সৃষ্টি করেছে এক দৃষ্টি নন্দন পরিবেশ। বর্তমান উপজেলা নির্বাহি অফিসারের কৌশলী পদক্ষেপে। তিনি যেন এক ক্ষুদে বার্তা দিলেন যে কাজ করতে হলে জেন্ডার কোন সমস্যা নয়।
অপরদিকে ওলামায়ে কেরাম প্রশাসনের কল্যাণকর কাজে, দেশ গঠনে, জনগণের উন্নয়নের কাজে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার মত আন্তরিকতা বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এ দেশকে উন্নতির স্বর্ণশিখরে উপনীত করতে এই সমন্বয়র বিকল্প নে।ই প্রশাসন যদি আলেম সমাজকে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে না পারে তাহলে যেমন এটা তাদের ব্যর্থতা।
ঠিক তেমনি ভাবে ওলামায়ে কেরাম যদি প্রশাসনের ভালো কাজ গুলি সহযোগিতা না করেন। এটা তাঁদের কার্পণ্য।
গণতান্ত্রিক অধিকারের বলে শুধু শতভাগ সমালোচনা করে যাওয়া। কল্যাণকর কাজে এক ভাগও সহযোগিতা না করা। কারো জন্য কল্যাণকর নয়। না দেশের জন্য, না জনগণের জন্য।

যদি কল্যাণকর কাজে সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে দেশ ও ধর্ম বিরোধী কোন সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় নির্দেশ হিসেবে চলে আসলে পূর্ব সম্পর্কের খাতিরে প্রশাসনকে বুঝি বারণ করা সম্ভব।
সমালোচনার জন্য সমালোচনা চালিয়ে গেলে বৈরীতা তৈরি হবে। কোন দাবি আদায় করা সম্ভব হবে না। যেমনটি আজ তাবলীগ ওয়ালারা উলামায়ে কেরামের পরামর্শ কে বাহির লোকের লোকমা বলে প্রত্যাখ্যান করছেন।

সরকারি নির্দেশনা সকল উপজেলার সকল ইউ এন ও দের জন্য সমহারে প্রযোজ্য। কিন্তু আমাদের বাহুবল উপজেলা নির্বাহি অফিসার এর মত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মরিয়া হওয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভার্চুয়াল জগতে খুব কমই দেখা যাচ্ছে।


অফলাইনের কথা যদি বলি তাহলে, বলতে পারি বর্তমানে আমি যে উপজেলায় অবস্থান করছি। সরকারের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নে ডেঙ্গুজ্বর মোকাবেলায় পরিষ্কার পরিছন্নতা অবলম্বনে কর্মসূচি এখানটায় তেমন দেখা যাচ্ছে না।
গোটা বাংলাদেশের কোন উপজেলা নির্বাহি অফিসার কি করছেন এখন তা দেখা সহজ ও সম্ভব।
কারণ গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে বিশ্ব যখন হাতের মুঠোয়, তখন দুনিয়ার এক প্রান্তে কিছু ঘটলে অপরপ্রান্ত থেকে জানা যায় মুহূর্তেই, অনলাইনের কল্যাণে।
কিন্তু আমি বাহুবল উপজেলা প্রশাসনের কার্যক্রমের মত কারো কার্যক্রম দেখতে পাচ্ছি না। এটা আমার সীমাবদ্ধতা নাকি আমাদের উপজেলাবাসীর সৌভাগ্য তা পাঠকই নির্ধারণ করবেন।

সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন, কর্মকর্তার জন্য যেমন কল্যাণকর, জনগণের জন্য উপকার এর চেয়েও বেশি।

তাই বাহুবল উপজেলায় অবস্থানকারী সংবাদকর্মীদের কাছে অনুরোধ করবো, উপজেলার সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড,জনকল্যাণে উপজেলা নির্বাহি অফিসারের গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত এবং বাস্তবায়নকৃত সকল কার্যক্রম সচিত্র প্রতিবেদন করুন।

সাথে সাথে সরকারি পদ-পদবি দখল করে যারা নিজেকে রাজার আসনে সমাসীন মনে করেন। জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পৌঁছে দিতে অসহযোগিতা করেন। শিক্ষা অফিস হোক, ভূমি অফিস হোক, হাসপাতাল হোক, থানা হোক, স্থানীয় প্রশাসন হোক যেখানেই জনসেবা ব্যাহত হচ্ছে দেখবেন, সচিত্র প্রতিবেদন তৈরি করবেন নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সাথে।

যাতে করে বাহুবলের অনুসরণে গোটা দেশে উন্নয়নের এক প্রতিযোগিতা শুরু হয় এবং বাহুবল হয়ে উঠে উন্নয়ন ও সৃজনশীল কাজের রোল মডেল।

হোসাইন আহমাদ বাহুবলী
শায়খুল হাদিস,কলাম লেখক