বাহুবল উপজেলা চেয়ারম্যানের ১০ স্কুল পরিদর্শন; শিক্ষকদের ব্যাপক অনিয়ম

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ২৩ ২০২০, ১৯:১৬

 

বাহুবল (হবিগঞ্জ)প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে।শিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।

প্রতিনিয়ত শিক্ষকের গাফিলতি তথা দায়িত্ব পালনে রয়েছে চরম ব্যর্থতা ও ব্যাপক অনিয়ম।গত দুদিনে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমান ১০টি স্কুল সরেজমিনে পরিদর্শন করলে এমন বাস্তব চিত্রই ফুটে উঠে।

বড় অংকের সরকারি বেতন-ভাতা শিক্ষকগণ পেলেও মজুরী অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালনের আন্তরিকতার কোন লক্ষণ নেই। গত সোমবার ও বুধবার(২১,২২জানুয়ারি) দুপুর ২ঘটিকা থেকে বিকাল ৪ঘটিকা পর্যন্ত পরিদর্শন করলে যার ফলাফল নিম্নে তুলে ধরা হলো।

উজ্জতপুর স.প্রা. বিদ্যালয়: ২ঘটিকার সময় ১জন মাত্র শিক্ষিকা পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা শৃংখলাবিহীন অবস্থায় হই হুল্লুর করছিল। স্কুলের পরিদর্শন বুকটি হাজির করতে পারেননি শিক্ষিকা।
মীরজুমলা স.প্রা. বিদ্যালয়: ১জন মাত্র শিক্ষক অফিসে অবস্থান করছিলেন। স্ব স্ব ক্লাসে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক বিহীন অবস্থায় হই হুল্লুর করছিল। অন্য শিক্ষকগণ অনেক আগেই স্কুল থেকে চলে গিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও সর্ব নিম্ন পর্যায়ে। ক্লাস ফাইভে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা সংখ্যা ১৪জন। পরিদর্শন বুক দেখাতে পারেননি।
হরাইটেকা স.প্রা. বিদ্যালয়: স্কুলের সকল শিক্ষকই উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষকদের ক্লাসে পাঠদানরত অবস্থায় পাওয়া যায়।
জগতপুর স.প্রা. বিদ্যালয়:বিকাল ৩টারদিকে স্কুলে আকষ্মিক পরিদর্শনে গেলে কোন শিক্ষককে স্কুলে পাওয়া যায়নি।

প্রধান শিক্ষকের স্ত্রীও একই স্কুলের শিক্ষক। বাড়িও স্কুলের পিছনেই। ক্লাসে শিক্ষার্থীরা নানা গল্প,হই চিৎকার,কেউ কেউ মাঠে খেলাধুলা করছিল। পরিদর্শন টিম দেখেই একজন শিক্ষার্থীরা দৌড়িয়ে প্রধান শিক্ষকের বাড়ি থেকে তার স্ত্রী শিক্ষিকা তনশ্রী ভট্টাচার্য্যকে নিয়ে আসে। কোন পরিদর্শন খাতাও খুজে পাওয়া যায়নি।
গোহারুয়া স.প্রা. বিদ্যালয়: ৩টা ৩০মিনিটেই স্কুল ছুটি দিয়ে দেন শিক্ষকগণ। শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে আনন্দে বের হচ্ছেন। এমতাবস্থায়ই চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমান হাজির। উপস্থিত শিক্ষিকা মৃত্তিকা ঘোষ, রাফিয়া আক্তার ও নাজমা আক্তার রীতিমত অবাক। কোন উপায় নেই। ছুটিতো ছুটিই।

গতকাল বুধবার(২২জানুয়ারি) পরিদর্শন করা হয় নিম্নের স্কুলগুলো।
হিলালপুর স.প্রা. বিদ্যালয়: বেলা ৩টারদিকে স্কুলে স্কুল বন্ধ পাওয়া যায়। জানা যায়, বেলা ২.৪৫ মিনিটেই স্কুল ছুটি দিয়ে চলে যান শিক্ষকগণ। অথচ সাড়ে ৪টা পর্যন্ত পাঠদান হওয়ার কথা।
ফতেহপুর স.প্রা. বিদ্যালয়: বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটেই স্কুল ছুটি। অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি চলেও গেছে। এক শিক্ষিকা স্কুল থেকে বেরিয়ে গেছেন। শামীম নামে একজন শিক্ষক স্কুল থেকে বের হচ্ছিলেন। এমতাবস্থায়ই হাজির চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানকে দেখেই বেরিয়ে যাওয়া শিক্ষিকা আবার ফিরে আসেন। অসুস্থবোধের দোহাই দিলেন। পরিদর্শন খাতাও নেই।
হোসেনপুর স.প্রা. বিদ্যালয়: স্কুলে গিয়ে দেখা যায় স্কুলটি বন্ধ। স্কুল মাঠে স্থানীয় দু’ব্যক্তি সুশংকর দাস ও সমীরণ দাস জানান, স্কুলটি ৩টায়ই ছুটি দিয়ে চলে গেছেন শিক্ষকগণ। স্কুলের এ অবস্থা দেখে অসন্তোষ্টির মাত্রা বাড়তেই থাকে।

স্নানঘাট স.প্রা. বিদ্যালয়:৩টায়ই স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। জানালেন দপ্তরী নাঈম। স্কুলটি বন্ধ পাওয়া যায়। চেয়ারম্যানের স্কুল পরিদর্শন দেখে এলাকার অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন- এভাবে প্রায়ই স্কুল ছুটি হয়ে যায়।
গাংধার স.প্রা. বিদ্যালয়: বিকাল পোনে ৪টায়ও ক্লাস চলছিল। প্রধান শিক্ষকসহ ৪জন শিক্ষক উপস্থিত আছেন।

পরিদর্শন বুকও পাওয়া যায়। সর্বোপরি স্কুলগুলোর এ বেহাল দশা দেখে শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্নের অবতারণা হয়। যে পরিমাণ শিক্ষকগণ বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, সেই অনুপাতে তাদের শ্রম নেই। আছে স্কুলের দায়িত্ব পালনে ফাঁকিঝুকি। মানুষগড়ার কারিগর হিসেবে খ্যাত শিক্ষকগণ এমন আচরণ করতে পারেনকি? এ প্রশ্নের উত্তর দেবে কে? স্কুল পরিদর্শনে ফুটে উঠেছে উপজেলা শিক্ষা অফিসেরও গাফিলতি। শিক্ষার ন্যূনতম পরিবেশ নেই। অথচ সরকার জনগণরে টেক্সের টাকায় কোটি কোটি টাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খরচ করছে। তবে শিক্ষার কাঙ্খিত পরিবেশ ও মান ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।