বন্যা ও টিলা ধসে নাকাল মৌলভীবাজারের জুড়ী 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ১৯ ২০২২, ১৫:৩৩

জহিরুল ইসলাম সরকার জুড়ী: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। এতে করে বন্যা কবলিত হয়েছেন দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।

টানা তিনদিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে পাহাড়ী ঢল নামার কারণে হাকালুকি হাওর পানিতে ভরে উঠেছে। তীরবর্তী জনপদের বসতিবাড়িগুলো এখন আকস্মিক বন্যা কবলিত। ইতিমধ্যে কয়েটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে পাঠদান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাওরের পানি বেড়ে গিয়ে দুই ইউনিয়নের শাহাপুর, সোনাপুর, বেলাগাঁও, জাঙ্গিরাই, নয়াগ্রাম, ইউসুফনগর, বাছিরপুর, কৃষ্ণনগর, খাগটেকা, কালনিগড়সহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে পাহড় ও টিলা বসতি এলাকায় কয়েকটি পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড় ধসে গৃহপালিত পশুর মৃত্যু হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে জুড়ী লাঠিটিলা সড়কে যান চলাচল।

জুড়ী উপজেলা প্রশাসন জানায়, জুড়ী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। টানা বৃষ্টির সাথে উজানের পানির ঢলের জন্য উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। অতিরিক্ত বর্ষণের জন্য গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম গোয়ালবাড়ি পাহাড়ধস হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ইতোমধ্যে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যার্ত অসহায় মানুষদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ, পাহাড়ধস, পানিবন্দি লোকদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা এবং জরুরি সেবা প্রদানের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোনিয়া সুলতানারে নেতৃত্বে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

স্কুল শিক্ষক মোঃ জালাল উদ্দিন জানান, আজ আমার নিজ কর্মস্থল হরিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে ডুবে যায়। বিদ্যালয়ের অফিসে পানি ঢুকে গেছে এবং আঙিনায় ও থৈ থৈ পানি।

মক্তদীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসহাক আলী জানান, বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

ভোগতেরা গ্রামের সিদ্দিক জানান, আমাদের গ্রামে অনেক মানুষ গৃহবন্দী হয়ে আছেন। অনেক মানুষ নিজ বসত বাড়ি রেখে চলেও যাচ্ছেন।

বাছিরপুর গ্রামের মাহবুব আলম জলিল জানান, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদী খালবিল ভরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বাছিরপুর এলকায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ীর রাস্তার উপর পানি উঠে পড়েছে। বেশকিছু ঘরের দরজার সামনে পানি ছুঁই ছুঁই করছে। অনেকেই আবার মাটির ঘরের ভেতর বাঁশের মাচা দিয়ে পরিবারের শিশুদের নিয়ে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে।

জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী এলাকার খোর্শেদ আলম জানান, টানা ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টি হওয়ায় পশ্চিম গোয়ালবাড়ী এলাকাতে পাহাড় ধসে পরে। এতে মোঃ মনতুজ মিয়ার ঘর ভেঙে দুটি গরু এবং ৫ টি ছাগলসহ ২০ টি হাঁস মুরগী মাটি চাপায় মারা যায়। ঘর ভেঙে ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ৪ থেকে ৫ টি পরিবার। এখন পাহাড় ধসার কারণে প্রায় ২০ টি পরিবার আতংকে আছে।

জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন, জুড়ী উপজেলায় হাওরপাড়ের পাঁচটি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। হাকালুকি হাওরের পানি বেড়ে যাওয়ায় মানুষ এই ভোগান্তিতে পড়েছেন। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নেয়ার জন্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত আছে।