বড় উঠান জমিদার বাড়ির ইতিকথা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ১৯ ২০২০, ০০:০১

কর্ণফুলী প্রতিনিধি: বড় উঠান জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান নামক এলাকায় অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। যা চট্টগ্রামে মিয়া বাড়ি ও স্থানীয়দের কাছে দেয়াঙ পাহাড়ের জমিদার বাড়ি নামে বেশ পরিচিত।

সাধারণ তথ্য-

ধরন: বাসস্থান

অবস্থান: কর্ণফুলী উপজেলা

ঠিকানা: বড় উঠান

শহর: কর্ণফুলী উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলা।

খোলা হয়েছে: ১৬৯৪-৯৬

স্বত্বাধিকারী: মনোহর আলী খান

কারিগরি বিবরণ-

পদার্থ: ইট, সুরকি ও রড

তলার সংখ্যা: দ্বিতল

অন্যান্য তথ্য- কক্ষ সংখ্যা: ৬টি

অবকাঠামো সম্পাদনা-

বসবাসের জন্য এখানে দ্বিতল বিশিষ্ট ছয় কক্ষের একটি ভবন তৈরি করা হয়। যার উপর এবং নিচ তলায় তিনটি করে মোট ছয়টি কক্ষ ছিল। এছাড়াও জমিদার বাড়ির প্রবেশপথে একটি কাচারি ঘর ছিল। এর পাশে ছিল বিনোদনের জন্য জলসা ঘর। আর ধান রাখার জন্য বিশাল ধানের গোলা। জমিদার বাড়ির পাশেই পারিবারিক মসজিদ ও কবরস্থান রয়েছে।

ইতিহাস-

আনুমানিক ১৭০০ শতকের দিকে এই জমিদার বাড়ি গোড়াপত্তন হয়। তবে জমিদার বংশধররা ১৬০৯৪-৯৬ শতকের মধ্যে এই স্থানে বসবাস শুরু করেন। এই বংশের জমিদারী শুরু হয় জমিদার মনোহর আলী খানের মাধ্যমে। তিনি বাংলার নবাব শায়েস্তা খানের কাছ থেকে এই জমিদারী লাভ করেন। তবে এই জমিদার মনোহর আলী খানকে নিয়ে দ্বিমত প্রচলিত রয়েছে। কারো কারো মতে তিনি আগে থেকেই মুসলিম ছিলেন। আবার কারো কারো মতে তিনি জমিদারী লাভের পর হিন্দু ধর্মালম্বী থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরীত হন। তার পূর্ব নাম ছিল দেওয়ান রাজা শ্যাম রায়। তার মাধ্যমে এখানে জমিদারী প্রতিষ্ঠার পর একাধারে তার বংশধররা এখানে জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন।

তারা হলেন, রুস্তম আলী খান, দেওয়ান হোসাইন খান, আলী মর্দন খান, আলীয়ার খান, ফাজিলখান, ইলিয়াছ খান, আমীর খান, করিম খান, আছদ আলী খান, জিন্নত আলী খান, আকরাম আলী খান, আছত আলী খান, আনোয়ার আলী খান এবং ছালামত আলী খান। আনোয়ার আলী খানের বংশধররা হলেন মাহাবুব আলী খান (নিঃসন্তান), শের আলী খান এবং আনোয়ার হোসেন খান। আনোয়ার হোসেন খানের বংশধররা হলেন ছানোয়ার আলী খান, শের আফজল খান এবং সাজ্জদ খান। অপরদিকে ছালামত আলী খানের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর গর্বে তিন ছেলে। তারা হলেন আলী নেওয়াজ খান, আলী নবাব খান এবং আলী আহম্মদ খান। দ্বিতীয় স্ত্রীর দুই সন্তান হলেন, আলী আকবর খান ও আলী আশরাফ খান। আলী আকবর খানের পুত্ররা হলেন শওকত আলী খাঁ, ও কাইয়ুম খান। আলী আশরাফ খানের পুত্ররা হলেন আলী আমজাদ খান, রেজাউল করিম খান, মোশারফ হোসেন খান এবং আলী আজম খান। এনারা সকলেই বংশ পরামপণায় একের পর এক প্রায় ৩০০ বছর ধরে মোঘলদের শাসনামল থেকে ব্রিটিশদের শাসনামল পর্যন্ত এই জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। তাদের এই ৩০০ বছরের জমিদারী আস্তে আস্তে চট্টগ্রাম ছেড়ে হাতিয়া ও নোয়াখালির বিভিন্ন এলাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাদের অধীনে চট্টগ্রামের অনেক ছোটছোট জমিদাররা কাজ করতো।

অর্থাৎ ঐ জমিদাররা এই জমিদারদের আওতায় তালুকি জমিদার ছিল। এই জমিদার বংশধররা তাদের বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজের সুবিধার জন্য কাজি, মহুরি, সিকদার, নাপিত, ধোপা, কামার–কুমারসহ অনেক পেশাজীবী কর্মচারী রাখতেন। এইসকল কর্মচারী সকলেই জমিদার বাড়িতে বসবাস করতেন।

জমিদার মনোহর আলী খানের ১৬তম বংশধর সাজ্জাদ আলী খান (মিঠু) বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য।

বর্তমান অবস্থা সম্পাদনা

ষাটের দশক থেকে জমিদার বংশধররা এখানে বসবাস করা বন্ধ করে দেন। তারপর থেকে এই জমিদার বাড়ির বিভিন্ন স্থাপনাগুলি অযত্ন ও অবহেলার কারণে একের পর এক ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও লতাপাতা ও গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে।

স্থানীয়রা মনে করেন, এই পুরোনো জমিদার বাড়ি সংস্কার করা দরকার।তাহলেই নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা জমিদার বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।