ফেক আইডিতে সাম্প্রদায়িক উস্কানি : নিরাপত্তা চেয়ে কুবি শিক্ষার্থীর জিডি

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ২১ ২০১৯, ১৯:২৬

সম্প্রতি ইসলাম ও মহানবীকে কটূক্তি করার দায়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের জয় দেব নামের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সন্দেহভাজন ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাতের অভিযোগ এনে তাকে নাস্তানাবুদ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমন উস্কানিমূলক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করছেন। এ দিকে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করছেন ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থী।

জানা যায়, গত রবিবার (১৯ মে) জয় দেবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরের রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের বায়েজিদ ইসলাম গল্প নামে এক শিক্ষার্থী কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি নামক গ্রুপে নিজের আইডি থেকে ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের কয়েকটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

এতে দেখা যায় মঈনুল ইসলাম আবির নামে একটি আইডি থেকে হিন্দু ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করে কোনো একটি পোস্টে মন্তব্য করা হয়েছে। কিন্তু সে মন্তব্যটি কোথায় করা হয়েছে তার লিংক বা সে ব্যক্তি প্রকৃত মঈনুল কি না সেটা সত্যতা যাচাই না করেই গল্প সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপে প্রচার করে দেয়। পরে এটি ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে রাতভর পক্ষ বিপক্ষ কাদা ছোড়াছুড়ি করতে দেখা যায়।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মইনুল ইসলাম আবির এমনটি করেননি বলে জানিয়ে ওই গ্রুপে একটি স্ট্যাটাস দেন। পরবর্তীতে গল্প তার নিজের স্ট্যাটাসটি মুছে ফেলেন এবং মঈনুলসহ সকলের কাছে এমন কাজের জন্য ক্ষমা চান।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, শ্যামল চন্দ্র দাস নামের একটি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মঈনুল ইসলাম আবির নামের অন্য একটি অ্যাকাউন্ট থেকে করা ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যটি নিজের ওয়ালে স্ট্যাটাস দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মঈনুলের নামে চালিয়ে দেন। কিন্তু শ্যামলের অ্যাকাউন্ট ঘুরে দেখা যায় তার মেইল অ্যাকাউন্টটি moynulislam.abir.35 নামে। যা দেখে সকলের সন্দেহের তীর যায় শ্যামল নামক অ্যাকাউন্টটির দিকে। যা এখনও ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে।

এ দিকে সোমবার সকালে শ্যামল চন্দ্রের ওই আইডি থেকে ফের মঈনুলের নামে আঞ্চলিক সংগঠনের অজুহাতে রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রশ্ন তুলে পুনরায় বিতর্কের সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। তবে আবির জানান সে তার এলাকায় ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত আছেন এবং তার পরিবারও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং তিনি সব সময় অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মঈনুল বলেন, ‘এটা পুরোটাই একটা সাজানো নাটক ছিল। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে মারতে পর্যন্ত গিয়েছে তবে আমি সেখানে ছিলাম না বলে বেঁচে যাই। আর যারা আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যাচার করেছে এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য নষ্ট করার চেষ্টা করেছে আমি তাদের সর্বোচ্চ বিচার চাই।’

এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য একটি চক্র এমন কাজ করছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অমিত মেহদি নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘তারা কালপ্রিট নয়। তারা আমাদের হৃদয়টাকে ভাগ করে দিয়েছে। এটা সারাতে অনেক সময় লাগবে।’

রাজিব চক্রবর্তী রূপক নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট হোক এটা আমি কখনোই চাই না। গল্পের পোস্টটা দেখে আমি পোস্টটা করেছিলাম। অপরাধী শনাক্ত হোক, তার শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ জানান, ‘আমরা সকলে সারা রাত জেগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের হুঁশ এখনও আসেনি। তারা এখনও এটার সত্যতা যাচাইয়েরও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যদি এটা নিয়ে বড় কোনো ঘটনা ঘটে যেত তাহলে এটা প্রশাসনের গাফিলতির ফলেই হতো। আর আমরা সার্বিক বিষয়ের সত্যতা বের করে বিচারে দাবি করছি।’

জিডির বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি আব্দুস সালাম জানান, ‘ঐ শিক্ষার্থী জিডি করেছেন। আর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত টিম কাজ করছে। ‘সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কি আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত ছিল না’ এমন প্রশ্নে প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কাল রাত থেকে বিষয়টির সার্বিক পরিস্থিতি তত্ত্বাবধান করছি। আর পুলিশ প্রশাসনের সাহায্যে ওই আইডিগুলো শনাক্ত করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’