প্রসঙ্গ বেফাক: গঠনমূলক সমঝোতার মাধ্যমে চলমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসা চাই

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

অক্টোবর ০২ ২০২০, ২০:১৬

ইমদাদুল হক নো’মানী: বেফাক একটি আস্থার প্লাটফর্ম। আশা, ভরসা ও প্রত্যাশার নিরংকুশ ঠিকানা। ঈমান, এখলাছ, ইলিম, আমল ও তাযকিয়ার অনন্য পাঠশালা। দল ও মতের উর্ধ্বে ঐক্যের একটি কেন্দ্রস্থল। সবাইকে নিয়ে চলার কুসুমাস্তীর্ণ সহপথ। রাজনীতির কালেমামুক্ত জাতীয় শিক্ষাবোর্ড।

এ বোর্ডের শীর্ষ দায়িত্বশীলদ্বয় হবেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়, বিতর্কের উর্ধ্বে থাকা উদার মানসিকতাসম্পন্ন জ্ঞানী-গুনী। দূরদর্শী চিন্তাসমৃদ্ধ সমাজ ও পরিবেশ সচেতন। ইলিম ও আমলের অধিকারী একজন দায়িত্ব সচেতন, বাহুশ মুরব্বি।

শিক্ষাবোর্ডের মহাসচিব হলেন প্রধান নির্বাহী। তাঁর উপর নির্ভর করে পুরা প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও অগ্রগতি। অভিজ্ঞতার সমৃদ্ধ ভান্ডার থাকতে হয় তাঁর মাঝে। আচার-আচরণ হবে মাধুর্য। মুআমালাত-মুয়াশারাত হবে প্রশ্নাতীত। বয়সের ভারসাম্য, ভাব গম্ভীর, ইলমে-আমলে হবেন সর্বত্র প্রশংসিত এবং ওজনদার। ভাষাজ্ঞানে হবেন পারদর্শী। দীর্ঘ পরিচালনা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় হবেন প্রাজ্ঞ-অভিজ্ঞ।

সব গুণের অধিকারী মানুষ মেলানো দূরহ। তদুপরি তুলনামূলক সর্বোচ্চ ব্যক্তিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। না চাইলেও টেনে নিয়ে আসতে হবে। আবার কেউ চাইলে তার থেকে পরহেজ করতে হবে। গঠনতন্ত্রের আলোকে, সর্বোচ্চ মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাহলেই আল্লাহর রহমত এবং কল্যাণ আসবে।

নানা জল্পনা, কল্পনা আর গুঞ্জনে অনলাইন-অফলাইন সরব। ছোট-বড় সবার চোখ আগামীকালের দিকে। উৎসাহের সাথে উৎকন্ঠায় অপেক্ষায় কওমিয়ান। দেখা যাক শেষতক কী হয়। অবশেষে আমিও আজ অনলাইনে নিজস্ব মতামত পেশ করছি।

সংগঠন পরিচালনা না করলে সংগঠক ও যোগ্য দায়িত্বশীল হওয়া যায় না। দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে সব জায়গাই যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখা যায়। তাই বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী দা.বা. যদি জমিয়ত ও হেফাজত থেকে সম্পূর্ণ ইস্তফা দিয়ে দেন, তাইলে একজন স্পষ্টবাদী, চাটুকারমুক্ত সাবেক রাজনীতিবিদ ও প্রতিষ্ঠান পরিচালক হিসেবে বেফাকের সভাপতি হিসেবে মনেহয় খারাপ হবে না। অন্যথায় মন্দের ভালো, বিকল্প মুরব্বি হিসেবে যাত্রাবাড়ীর শায়খ মাহমুদুল হাসান দা.বা.-কে সামনে আনা যেতে পারে। খুব পরিচিত না হলেও মাদরে ইলমির বর্তমান প্রধান মুহতামিম, বাহরুল উলূম আল্লামা মুফতি আব্দুস সালাম চট্টগ্রামীকেও আল্লামা আহমদ শফী রাহ.-এর স্থলাভিষিক্ত করা যেতে পারে।

শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী রাহ.-এর স্নেহধন্য, উম্মুল মাদারিসের সাবেক উস্তাদ, দেশ-বিদেশ সফর করে অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত বি-বাড়ীয়া দারুল আরকামের মহাপরিচালক, ভাষাজ্ঞানী, পরিচ্ছন্ন ইমেজী, সাহসী, ও সৃজনশীল পরিচিত মুখ শায়খুল হাদীস আল্লামা সাজিদুর রহমান সাহেবকে বেফাকের মহাসচিব করা হলে যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়নসহ বেফাকের কাঙ্খিত বিপ্লব আশা করা যায়।

শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতার সাথেই বলছি, ময়দানের চাহিদা পূরণে শায়খুল হাদীস আল্লামা আজীজুল হক রাহ.-এর জানেশীন মাওলানা মাহফুজুল হক সাহেব ইসলামি রাজনীতিতে আরো কিছুদিন থাকা দরকার। সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিবেচনায় মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু সাহেব বর্তমান সময়ে স্বপদে থাকাটাই সবচেয়ে নিরাপদ মনে করি। হঠকারীতা কোন কিছুতেই কাম্য নয়। গঠনতান্ত্রিকভাবেই সব সংকটের সমাধান করতে হবে। তবে, লোম বাছতে গিয়ে কম্বলের শেষ চিহ্নটুকুও যেন বিলীন না হয়, সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। কওম ও মিল্লাতের স্বার্থে সব পক্ষকেই ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা চাই। বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষার জন্য একটি গঠনমূলক সমঝোতার মাধ্যমে চলমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া কোন বিকল্প নাই।

আমি বেফাকের কেউ না। সরাসরি অভিমত দেয়ার অধিকারও আমার নাই। আমি নাদানের মতামতের সাথে অনেকের দ্বিমত থাকতেও পারে। তারপরও অনাধিকার চর্চা করে বলে ফেললাম ক্ষুদ্র জ্ঞানের বিক্ষিপ্ত কথা বা আগ্রহগুলো। এতেকরে লাভ না হলেও ক্ষতি যাতে না হয়, সেজন্য আল্লাহর দরবারে মিনতি জানাচ্ছি।

রাজধানীর বাইরে থাকা আমরা নামক সাধারণ কওমিয়ানরা বিতর্কমুক্ত, ছিদ্রমুক্ত, সার্বজনীন একটি সুন্দর ফয়সালার অপেক্ষায়। রাব্বুল আ’লামীন আমাদের ছেরেতাজ মুরব্বিদেরকে ভবিষ্যত ফিতনামুক্ত, গ্রহণযোগ্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক: মুহতামিম, জামিয়া তা’লীমুল কুরআন সিলেট।