প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ৭সদস্য গ্রেফতার

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ০১ ২০১৯, ২০:২০

কানে অতিক্ষুদ্র ইয়ারপিস, শরীরে রাবার দিয়ে আটকানো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, চলছে পরীক্ষা। হলের বাইরে থেকে ডিভাইসে আসছে প্রশ্নের উত্তর। পরীক্ষার্থীর কানে লাগানো ইয়ারপিসে উত্তর শুনে তা হুবহু লিখে যাচ্ছেন উত্তরপত্রে। এমনই এক চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন, মোঃ মাহমুদুল হাসান আজাদ (৩৬), মোঃ নাহিদ(২৫), মোঃ রাসেল আলী (২৯), মোঃ রুহুল আমীন (২৫), মোঃ খালেকুর রহমান টিটু (২৯), মোঃ আহমেদ জুবায়ের সাইমন (২৬) ও মোঃ ইব্রাহিম (২৪)। বিসিএস ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় এমন অভিনব পদ্ধতিতে জালিয়াতি করে আসছিল এই চক্রটি।

২৯ ও ৩০ নভেম্বর ২০১৯ রাজধানীর কাফরুল ও লালবাগ থানা এলাকায় অভিযান করে তাদেরকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।

রবিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর ১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোঃ মাসুদুর রহমান পিপিএম।

ডিসি মিডিয়া বলেন, রাজধানীর লালবাগ ও কাফরুল থানা এলাকায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যরা অবস্থান করছেন এমন সংবাদের ভিত্তিতে ৩০ নভেম্বর অভিযান পরিচালনা করে ডিবি সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। অভিযানকালে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে ফাঁস এবং প্রশ্নের সমাধান চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের নিকট হতে ১২টি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, ১৬টি মাইক্রোহেডফোন, ১৫টি মোবাইল ফোন, ২৫টি সিম কার্ড, রাবারের আর্ম ব্যান্ড ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সামধানের জন্য ব্যবহৃত ০৪ টি বই উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে মাসুদুর রহমান বলেন, তারা পরীক্ষার্থীর মাধ্যমে পরীক্ষা কেন্দ্র হতে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্ন হলের বাইরে নিয়ে আসে, সেই প্রশ্ন এক্সপার্ট গ্রুপ দিয়ে সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর নিকট সরবরাহ করে। এমনকি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া জনতা ব্যাংকের এ্যাসিস্টেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার (এইও) পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার হল থেকে সংগ্রহ করে প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে পরীক্ষার্থীর নিকট সরবরাহ করতেন। এছাড়াও সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষাসহ স্কুল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় টাকার বিনিময়ে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীদের নিকট প্রশ্নের উত্তর সরবররাহ করতেন। চাকরির ধরণ বুঝে টাকার পরিমাণ ৫-১৫ লাখ হতো।

তিনি আরো বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে এই চক্র পরীক্ষার প্রার্থী নির্বাচন, ডিভাইস সরবরাহের প্রক্রিয়া, প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং সমাধানের প্রক্রিয়া ইত্যাদি আলোচনা করে। ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলো বিশেষ রাবারের ব্যান্ড দিয়ে শরীরে আটকে রাখতো পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার হলে নির্ধারিত প্রার্থীর উত্তর ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সরবরাহ করে তারা। জামানত হিসেবে পরীক্ষার্থীর মূল সার্টিফিকেট জমা রাখতো প্রতারক চক্রটি।

ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ ৩৬ তম বিসিএসের মাধ্যমে অডিটে (নন-ক্যাডার) চাকরি পায়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। ১ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখ গ্রেফতারকৃতদেরকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।