পেটের দায়ে লকডাউন ভেঙে কাজ করছে টাঙ্গাইলের তাঁত শ্রমিকরা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ২১ ২০২০, ১৯:০৫

কাওসার আলী, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের সহস্রাধিক তাঁত শ্রমিক পেটের দায়ে লকডাউন ভেঙে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে সারাদিন তারা লকডাউনে থেকে ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত তাঁতে কাপড় বুনছেন।

জানাগেছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সরকারি নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনায় সকল শিল্প-কারখানা বন্ধ ঘোষণাও করা হয়। এতে সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার তাঁত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন।

তাদের ঘরে ১০-১৫ দিনের খাবার ও যৎসামান্য জমানো টাকা ছিল। তাই দিয়ে কিছুদিন চলার পর তারা তাঁত মালিকদের হাতে-পায়ে ধরে মজুরির আশায় কাপড় বুনছেন। তারা এ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোন অনুদান বা ত্রাণ বা খাদ্য সহায়তা পাননি।সরেজমিনে জানা যায়, কাকুয়া ইউনিয়নের মধ্যে শুধুমাত্র চরপৌলী গ্রামেই তাঁত শিল্প রয়েছে।

ইউনিয়নের একমাত্র প্রাথমিক তাঁতী সমিতিও চরপৌলী গ্রামে অবস্থিত। এছাড়া কিছু তাঁত মালিক রয়েছেন যারা সমিতির সদস্য নন। তাদের অধিকাংশই পাওয়ার লুমের মালিক। স্থানীয় ইউপি সদস্য, তাঁত শ্রমিক, মালিক ও প্রাথমিক তাঁতী সমিতির সভাপতির সাথে কথা বলে জানা যায়, চরপৌলী গ্রামে প্রায় দেড় হাজার তাঁত শ্রমিক রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৯০০ পুরুষ ও ৬০০ নারী।করোনার কারণে এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হলেও এ পর্যন্ত ওই এলাকায় সরকারি-বেসরকারি কোন খাদ্য সহায়তা পৌঁছেনি। খাদ্য সহায়তা না পেয়ে এলাকার প্রায় সাড়ে ৬০০ পুরুষ ও সাড়ে চারশ’ নারী তাঁত শ্রমিক কাজের সন্ধানে লকডাউন ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁত মালিকরাও বেঁচে থাকার তাগিদে তাদেরকে কাজ দিচ্ছেন। ফলে সরকার নির্দেশিত সামাজিক দূরত্ব এক প্রকার ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে।

কাকুয়া ইউনিয়নের চরপৌলী গ্রামের তাঁত শ্রমিক আনোয়ার, মনির, ওমরসানী, আব্দুর রশিদ সহ অনেকেই জানান, তাদের ঘরে যে খাবার ও জমানো টাকা ছিল লকডাউনের কারণে তা শেষ হয়েছে। তারা কোন প্রকার ত্রাণ বা খাদ্য সহায়তা পাননি। বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও মা-বাবা রয়েছে। তাই কারখানা মালিকের হাতে-পায়ে ধরে তাঁতে কাপড় বুনতে এসেছেন। মজুরি পেলে তারা বাড়ির জন্য খাবার কিনবেন।স্থানীয় তাঁত মালিক শাহজামাল, সোলেমান, রওশন আলী, আইয়ুব আলী সহ অনেকেই জানান, সরকারি নির্দেশনা মেনে তারাও লকডাউনে আছেন। কিন্তু তাদের ঘরে কিছু ভেজা সুতা ও কাঁচামাল রয়েছে। সেগুলো ব্যবহার না করলে নষ্ট হয়ে যাবে। এদিকে শ্রমিকদের খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় তারা কাজ করতে আসছে।

শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার কথা ভেবে পাশপাপাশি কাঁচামালগুলো যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এছাড়া অন্য সময়ে তারা সামাজিক দূরত্ব মেনে ঘরে থাকছেন।কাকুয়া ইউনিয়ন প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সভাপতি মো. শামসুল আলম জানান, তাদের এলাকার প্রায় দেড় হাজার তাঁত শ্রমিকের ঘরে খাবার নেই। অপেক্ষাকৃত দরিদ্রদের তালিকা করে তিনি তাঁত বোর্ডের বেসিক সেন্টারে জমা দিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোন সহায়তা তারা পাননি। তিনি জানান, খাবার না পাওয়ায় লকডাউন বা সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি শ্রমিকরা মানতে পারছে না। শ্রমিকরা মূলত পেটের দায়ে তাঁতে কাপড় বুনছেন।কাকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, তার ইউনিয়নের চরপৌলী গ্রামটি সবচেয়ে বড় ও তাঁতী অধ্যুষিত এলাকা। তারা নদীভাঙা এলাকার হওয়ায় রাষ্ট্রীয় অধিকাংশ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ পর্যন্ত তিনি উপজেলা পরিষদ থেকে ১০০ প্যাকেট খাদ্য সহায়তা পেয়ে কর্মহীন মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য ইউপি সদস্যদের দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, তাঁত শ্রমিকরা খাদ্য সহায়তা না পেয়েই মূলত টুকটাক কাজ করছে।

তাঁত বোর্ডের টাঙ্গাইল বেসিক সেন্টারের লিয়াজোঁ অফিসার মো. রবিউল ইসলাম জানান, চরপৌরী এলাকার কর্মহীন তাঁত শ্রমিকদের তালিকা করে তিনি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জমা দিয়েছেন। অচিরেই ওই এলাকার তাঁত শ্রমিকরা খাদ্য সহায়তা পাবে।