পাশ্চাত্য ও মুসলিম চিন্তার একটি মৌলিক ভেদ

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ০৭ ২০২২, ২২:৪৯

মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত: পাশ্চাত্য দর্শনের ভিত্তিভূমি হলেন প্লেটো বা আফলাতুন। অনেকে বলেন বাদ বাকী পাশ্চাত্য দর্শন হল প্লেটোকে অতিক্রম করে যাওয়ার চেষ্টা; কিংবা প্লেটোকে বিরোধিতা করা বা এন্টি-প্লেটো/পোস্ট-প্লেটো। আরাস্তু বা এরিস্টটলের দর্শন মূলত তা-ই—অর্থাৎ এরিস্টটল হলেন এন্টি-প্লেটো/পোস্টপ্লেটো। মোটা দাগে পাশ্চাত্য দর্শনের এই দুইটি মৌলিক ধারা। সৌন্দর্যের বিষয়টা হল ইউরোপীয় দর্শনে এই দুই ধারা কেউ কাউকে অচ্ছুৎ বা অস্পৃশ্য মনে করে না। একে অপরকে পাঠ ও পুনর্পাঠের মধ্য দিয়ে নতুন নতুন ভাষ্য ও মোচড় বা ইজম সেখানে তৈরি হয়। এই ধারা আজও বহমান।

কিন্তু মুসলিম জ্ঞানকান্ড যে কয়েকটি মৌলিক ধারায় বিভাজিত হয়েছে সেগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক প্রধানত মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ বা একে অপরকে নাকচমূলক। যেমন ইউনানি নয়া-আফলাতুনীয় বা নিও-প্লেটোনিক বা পেরিপেটেটিক ফালসাফার অনুসারীদেরকে (যেমন আল ফারাবি, ইবন সিনা, ইবন রুশদ প্রমুখ) আশারীয়া বা মাতুরিদিয়া কালামের অনুসারীরা (যেমন গাজালিয়ান মুতাকাল্লিমুন যারা) গ্রহণ করতে চাননি; আবার মারেফাতী তাসাউফের অনুসারী যারা যেমন ইবন আরাবীরা—তাদেরকে অনেকেই তেমন গ্রাহ্য করতে চান না; এবং সালাফী তাইমিয়ানরা তো এসবের সকল কিছুকেই তীব্রভাষায় ক্রিটিক করেছেন। আর সমন্বয়বাদী ইশরাকীরাও (যেমন শিহাবউদ্দীন সুহরাওয়ার্দী কিংবা মোল্লা সদরা প্রমুখ) কেবলমাত্র শিয়া ইরানের মধ্যে নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ করে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন।

অর্থাৎ মুসলিম চিন্তার বিভিন্ন ধারাগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিনিময় ও পর্যালোচনার সম্পর্ক একে অপরকে নাকচমূলক হবার কারণে কোনো ধারাই শেষপর্যন্ত টেকসই হতে পারেনি। সবগুলো ধারাই পরস্পরকে ধরাশায়ী করে নিস্তেজ ও নীরব হয়ে গেছে। আর তখনই বলা হয়েছে ইজতিহাদের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর থেকে চলছে প্রধানত কিতাবী মুখস্থবিদ্যা আর মেদবহুল শরা বা ভাষ্য রচনা। যা আসলে পুনরুৎপাদনের ফুলঝুরি।