পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও ধর্মান্তকরণের অপতৎপরতা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ২০ ২০১৯, ১৮:২৪

আমিনুর রশিদ
প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশ দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এক স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র। এদেশের শতকরা 85% মানুষ মুসলমান। এদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও মুসলমান। তাঁর সুদৃষ্টিতে ও তাঁরই প্রাণপন প্রচেষ্টায় প্রদত্ত জায়গায় টঙ্গির তুরাগ নদীর তীরে আজও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ তথা বিশ্ব ইস্তেমা অনুষ্টিত হচ্ছে। তাঁর পরবর্তিতে অদ্যবধি সকল রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানও মুসলিম। তাঁদের মধ্যে কেউ সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্তকরণে বিশ্বাসী ছিলেন না। তাঁরা প্রত্যেকেই শান্তিপ্রিয় ছিলেন। তাঁরা কেউ দেশে বা সমাজে  বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেননি। আমাদের এ প্রিয় দেশের পবিত্র সংবিধানও প্রত্যেক নাগরিককে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে। সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে “ প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রয়েছে। প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রয়েছে” । আমরা জানি সংবিধানের এ ধারা অন্য ধর্মের প্রতি সহানুভুতিশীল থেকে প্রণিত।
ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্মান্তকরণ:-
ইসলাম অন্য ধর্মের প্রতি বা পরমতের প্রতি অসহিষ্ণু হওয়া এবং সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে সমর্থন দেয় না। বরং ইসলাম পরমতের প্রতি সহিষ্ণু এবং সম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। সহানুভুতি ও পরমতের প্রতি সহিষ্ণু হওয়া স্বয়ং মহানবী হযরত মুহাম্মদ স. আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং দেখিয়েছেন । যাঁর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল প্রথম লিখিত সংবিধান (First written constitution of the world) “মদিনার সনদ”।
 উক্ত সনদের একটি ধারা নিম্মরূপ:-
“ মদিনার ইহুদী , নাসারা ( খৃষ্টান), পৌত্তলিক এবং মুসলমান সকলেই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। কেউ কারো ধর্মের উপর হস্তক্ষেপ করবেন না।
(সুত্র: ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, অক্টোরব-2010, পৃষ্ঠা-08, মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন, প্রগুপ্ত, পৃষ্ঠা-121)
ইসলাম সামপ্রদায়িক বিশৃখঙ্খলা ও ধর্মন্তকরণের অপতৎপরতাকে বিশ্বাস করেনা এবং এর অনুমোদনও করেন না। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মোমেনীন হযরত ওমর ফারুক র. হতে বর্ণিত একটি কাহিনীতে এর দৃষ্টান্ত খুঁজে পাই। তিনি বর্ণনা করেন, তিনি একবার একজন বৃদ্ধা মহিলাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেন। বৃদ্ধা উত্তর দিল, “ আমি মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়ানো এক বৃদ্ধা, শেষ জীবনে নিজের ধর্ম ত্যাগ করব ?”  হযরত ওমর রা. এ কথা  শুনেও তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করেন নি। বরং তখন তিনি উচ্চারণ করেন- “لَا اِكْرَاهَ فِىْ الدِّيْنِ  (লা ইকরাহা ফিদ্ দ্বীন)  অর্থাৎ ধর্মে কোন বল প্রয়োগের নিয়ম নেই । এই আয়াতটি পাঠ করেন।                                                        . সুত্র: মা‘রিফুল কোরআন, সংকলিত, মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ., বাদশা ফাহাদ কোরআন মুদ্রণ প্রকলাপ, সৌদি আরব, 1314 হিজরী, পৃষ্ঠা-139। 
পরমতের প্রতি এরূপ উদারতা ও সহিষ্ণুতা বর্তমান মানব সমাজে কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু আমাদের সংবিধানের ধারা ও ইসলামের এ নিয়ম-নীতি ও সহানুভুতিশীলতার অপব্যবহার করার মাধ্যমে কিছু অসাধু সম্প্রদায় জোর পূর্বক বা বিভিন্ন উপায়ে তথা অর্থ, চাকুরী, ও বাড়ী-গাড়ি এবং বিনা মুল্যে সেবা ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন অপকৌশল ও প্রতারণামুলক লোভ দেখিয়ে সম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা ও ধর্মন্তকরণের তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। যা বিভিন্ন সময় জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। জোরপূর্বক ধর্মকরণ যে কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকেই নিন্দনীয় তা নয়, বরং ব্যাক্তি বা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্যও তা হুমকি স্বরূপ।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্মন্তকরণের অপতৎপরতা:
পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা ও ধর্মন্তকরণের অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত অন্যতম সমপ্রদায়ের নাম “ আহমদিয়া মুসলিম জামাত বা কাদিয়ানী সমপ্রদায়” যারা ইতিমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ করে রাঙ্গামাটি  পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজেলায়  (তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: বাঘাইছড়ি ও লংগদু ) সরলমনা মুসলমান ও ক্ষেত্র বিশেষ উপজাতীয়  সমপ্রদায়কেও অর্থসহ বিভিন্ন লোভ ও প্রলোবন দেখিয়ে ধর্মন্তকরণের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মুসলমান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভুতিতে আঘাত করে বিভিন্ন গ্রামে সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পরিকল্পিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার  অপতৎপরতা ও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বাঘাইছড়িরউপজেলার আমতলি ইউনিয়নের মাহিল্যা–কবিরপুর গ্রামে সরলমনা দারিদ্র জনগোষ্টির অনেক লোকজনকে ধর্মের অপবাখ্যা ও অর্থ-বিত্তের লোভ দেখিয়ে কাদিয়ানী মতবাদে ধর্মন্তরিত করেছে। তারা তাদের মিশন বাস্তবায়নের অপকৌশল হিসেবে একটি বেসরকারী প্রাইমারী স্কুল নির্মান করেছে। যা মুলত তাদের ধর্মন্তকরণের কার্যক্রমেই ব্যবহৃত হয়। লংগদু উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের উত্তর ইয়ারিংছড়ি এলাকায় বসবাসকারী পাহাড়ী –বাঙ্গালী মুসলিম ও বৌদ্ধ ধর্মীয় জনগোষ্ঠিকেও ধর্মন্তকরণের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ঐ এলাকার বসবাসরত  পাহাড়ী –বাঙ্গালীরা গত 13/05/2013 তারিখে ইসলাম ও বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে কুটক্তির অভিযোগ এবং  তাদের কার্যক্রম বন্ধেরে দাবি জানিয়ে লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদনও করেছিলেন। তাদের অপতৎপরতার কারণে উক্ত এলাকার জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠছে।  তাদের সংঘাত মূলক একার্যক্রম  বন্ধ করার জন্য বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ বার বার প্রতিবাদ সভা , খতমে নবুওয়াত সম্মেলন করে যাচ্ছেন এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন।  শান্তিপ্রিয় জনসাধারণ যে কোন সামপ্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আগেই তাদের এঅপতৎপরতা বন্ধের প্রত্যাশা ও দাবি করেন।
 কারা এ ‘কাদিয়ানী’ ? 
‘কাদিয়ান’ ভারতের পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাশপুর জেলার অন্তর্গত একটি গ্রামের নাম। সে গ্রামে অধিবাসী মিথ্যা নবুওয়াতের দাবিদার, মির্যা গোলাম আহমদ জম্ম গ্রহন করায় তার নামের শেষে কাদিয়ানী লিখা হয়। আর সে কাদিয়ানী থেকে তার অনুসারীদেরকেও কাদিয়ানী বলা হয়। তাদের সাংগঠনিক নাম হল “ আহমদিয়া মুসলিম জামাত”। তারা নিজেদেরকে ‘আহমদি’ বা ‘মির্যায়ী’ হিসাবেও কোন কোন ক্ষেত্রে প্রকাশ করে থাকে। মির্যা গোলাম আহমদ এর পিতার নাম মির্যা গোলাম মর্তুজা। সে তার বাবার কনিষ্ট পুত্র। তার পরিবার তৎকালিন বৃটিশ (ইংরেজ) সরকারের দালাল, হিতাকাঙ্খি ও নিবেদিত প্রাণ ছিল। তার পিতা ইংরেজ সরকারের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছে। আযাদী আন্দোলনে বীর সৈনিকদের বিরুদ্ধে ইংরেজদের পক্ষে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে তার পিতা।
                  (সুত্র: ইজালাতুল আওহাম, প্রথম খন্ড,পৃষ্ঠা-67, লিখক, মির্যা গোলাম আহমদ।
কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্য )
মুসলমানদের আক্বিদা বিশ্বাসের প্রতি আঘাত করে সুকৌশলে  তাদেরকে অমুসলিম বানানো।
মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা তথা মহান আল্লাহ, আম্বিয়ায়ে কেরাম , প্রিয় নবী মুহাম্মদ স. ও ইসলামের বিধান তথা  নামাজ, হজ্ব, জিহাদ,কোরআন  ইত্যাদি বিষয়ে অবমাননামুলক বিকৃত উক্তি পেশ করে ও অপ্রচার চালিয়ে সরলমানা মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করা ও ঈমান বিনষ্ট করা।
অন্যান্য ধর্মালম্বীদের ( বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিষ্টান) ধর্মের প্রবর্তকদের নিয়মনীতি ও বিশ্বাসকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে তাদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করা।
সকল ধর্মের লোকদের মধ্যে ধর্মীয় ব্যাপারে বাড়াবাড়িতে জড়িয়ে দিয়ে একটি সামপ্রদায়িক বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সমগ্র দেশে অশান্তি সৃষ্টি করা এবং কাদিয়ানী মতবাদ প্রচার করা।
কাদিয়ানীরা মুসলমানদের যে বিশ্বাসের প্রতি আঘাত করে: 
একজন মানুষকে খাটি মুসলমান হিসেবে “ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত” এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য মৌলিকভাবে 6টি বিষয়কে দৃঢ় মনে বিশ্বাস করা অবশ্যক। অন্যথায় সে মুসলমান হিসাবে গন্য হবে না। এই মৌলিক বিষয়ের মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হল, ঈমান বির-রুসুল বা রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস। নবী-রাসুলগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাসুল  প্রিয় নবী  মুহাম্মদ স. সম্পর্কে অন্যান্য নবীদের চেয়ে ভিন্ন কিছু বিশেষ আক্বীদা পোষন করা অবশ্যক ।
মহানবী মুহাম্মদ স. সম্পর্কে বিশেষ আক্বিদা সমুহ:
তিনি কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র জাহানের সকল জাতির জন্য নবী ও রাসুল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন।
তিনি সকল নবী রাসুল আ. এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তিনি  সকল নবী রাসুল আ, এর সর্দার। যাহা আল কোরআন, সুন্নাহ,ইজমা ও কিয়াস দ্বারা প্রমানিত।(সুত্র: আকাইদে ইসলাম লিল হক্কানী, সহিহ বোখারী ও মুসলিম)
তিনি খাতামুননাবিয়্যীন অর্থাৎ সর্বশেষ নবী, তাঁর পর আর কোন নবী আসবেন না বা হবে ন না। যাকে ইসলামী পরিভাষায় “ খতমে নবুওয়াত” বলা হয়। (সুত্র: সুরা আহযাব , আয়াত -40, মাসনাদে আহমদ)
মুসলমানদের উপরোক্ত আক্বীদা বিশ্বাসগুলোর প্রতি কাদিয়ানীরা অপবাখ্যা, মিথ্যা ও বিকৃত সাধন করার মাধ্যমে আঘাত করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যা রাসুল প্রেমিক ঈমানদার মুসলমানগণ মেনে নিতে পারে না। তাই এই এলাকার সরলমনা সর্বস্তরের জনসাধারণ কাদিয়ানীদের সকল কার্যক্রম বন্ধ ও তাদেরকে রাস্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষনার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন ও জোর দাবি জানাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে সকল প্রকার বিশৃঙ্খল পরিবেশ থেকে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্র ও সংবিধান বিরোধী সকল প্রকারের ধর্মন্তকরণের অপতৎপরতা বন্ধ করা সময়ের দাবি মনে করছি।