পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভের ডাক ইমরান খানের

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ১১ ২০২২, ১৫:৩৪

বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের পতন ও ‘আমদানি করা’ সরকার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার প্রতিবাদে আগামী বুধবার থেকে পুরো পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন ইমরান খান।

আরও পড়ুন: ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতির প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান

সোমবার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) জ্যেষ্ঠ নেতা ও ইমরান সরকারের সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি বলেন, আগামী বুধবার (১৩ এপ্রিল) থেকে দেশজুড়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করছি আমরা। দলের প্রথম বিক্ষোভ সমাবেশ হবে পেশোয়ারে।

গতকাল রোববার রাতেও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বিক্ষোভ হয়েছে। গোটা পাকিস্তানজুড়ে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন তেহরিকে ইনসাফ পার্টির আয়োজনে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

রাজধানী ইসলামাবাদের পাশাপাশি করাচি, পেশোয়ার, লাহোর, মালাকান্দ, জং, কোয়েটা, ওকারা ও অ্যাবোটাবাদসহ অন্য বড় শহরে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

রোববার রাতে ইমরান খান এক টুইটার বার্তায় তার আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে স্বাধীন করতে গিয়ে তিনি মার্কিন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।

আরও পড়ুন: বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে; ইমরান খান

ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের আসন্ন সরকার হবে ‘বিদেশ থেকে আমদানি করা’ এক সরকার এবং এর প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন থাকবে না।

বিক্ষোভের একটি ভিডিও টুইটারে শেয়ার করে ইমরান খান লিখেছেন, ‘দুর্বৃত্তদের নেতৃত্বে আমদানি করা সরকার প্রত্যাখ্যান করে আমাদের ইতিহাসে আগে কখনোই এভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতসংখ্যক বিক্ষোভকারী রাজপথে নেমে আসেননি’।

শনিবার রাতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে (জাতীয় পরিষদ) অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন ইমরান খান। ক্ষমতাচ্যুতি নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান। এ ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন ইমরান।

দেশটির ৩৪২ সদস্যের সংসদের ১৭৪ জনই ইমরান খানের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। সফল ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরান ২০১৮ সালে দুর্নীতিমুক্ত, সমৃদ্ধ, বিশ্বের কাছে শ্রদ্ধা পাওয়ার মতো দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

তবে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে সেনা শাসনে থাকা পাকিস্তানে তার ক্ষমতা আরোহনের নেপথ্যে সেনাবাহিনীর আশির্বাদ ছিল বলেই মনে করা হয়। যার উপর ভর করে বড় দুই দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও মুসলিম লিগকে (নওয়াজ) হটিয়ে ক্ষমতায় বসেন তিনি।

সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে ইমরানের সম্পর্কের অবনতির মধ্যে বিরোধী দলগুলো জোট বেঁধে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে জাতীয় পরিষদে।

সেটা আটকাতে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার মতো কৌশল ইমরান করলেও পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট তা আটকে দেয়। আদালতের আদেশেই শনিবার মধ্যরাতে অনাস্থা ভোটে ইমরানের বিদায় ঘণ্টা বাজে। তার আগে জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কাইসার ও ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি পদত্যাগ করেন।

পাকিস্তানের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো সরকার প্রধান ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারলেও ইমরানের আগে আর কাউকে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়নি।

শনিবার ক্ষমতা হারানোর পর রবিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে প্রথম টুইটেই আন্দোলনের ডাক দিয়েছেলেন ইমরান খান। সেই টুইটবার্তায় তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হয়েছে ঠিকই, কিন্তু স্বাধীন হওয়ার সংগ্রাম আজ শুরু হল, ক্ষমতা পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। আর সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার কাজটি বরাবর জনগণই করে আসছে’।

পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য সোমবার বসছে দেশটির জাতীয় পরিষদের অধিবেশন। দেশটির স্থানীয় সময় আজ দুপুর ২টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায়) পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসার কথা রয়েছে। পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি শেহবাজ শরিফ নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।