পতি ও প্রতিনিধি

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ৩১ ২০১৮, ২৩:২৭

ইসলামের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বক্তব্য রয়েছে। এখন তো এটি স্বীকৃত বিষয় যে, সমাজের কোনো কিছুই রাজনীতির বাইরে নয়। আর ধর্ম, যেটি মানুষের মধ্যে সবচে বেশি প্রভাবক — সেটি রাজনীতির বাইরে থাকে কীভাবে! এই দৃষ্টিকোণে সব ধর্মই রাজনীতিগত। না, এমন নিষ্ক্রিয় রাজনীতির কথা বলছি না। বলছি, সুস্পষ্ট ও সক্রিয় রাজনৈতিক অবস্থানের কথা। ইসলাম এই ক্ষেত্রে অন্য সব ধর্মমত থেকে স্বতন্ত্র।

ধর্ম পরকালের, আর রাজনীতি ইহকালের কল্যাণের জন্যে — এমন বক্তব্যে ইসলামের সায় নেই। মানুষের ইহ ও পরকালীন কল্যাণের জন্য ইসলামের আবির্ভাব। বরং আরো এগিয়ে বলা যায়, ইসলাম ইহজাগতিক ধর্ম।

ধর্ম অর্থ রীতি, বিধি। ইসলাম মানুষের জন্য যত বিধি-নিষেধ আরোপ করে, সব ইহকালে। পরকালের জন্য কোনো বিধি-নিষেধ নেই। এটা করবে, ওটা করবে না — এই সব বিধিবিধান কেবল দুনিয়ায়। দুনিয়ার জন্য সব নিয়ম। আখেরাতে সব অনিয়ম। লাকুম মা তাশতাহী আনফুসুকুম — তোমাদের জন্য রয়েছ যা তোমরা চাইবে। যাচ্ছেতাই করতে পারা অনিয়ম বৈকি! এই দৃষ্টিকোণে ইসলাম ইহকালীন ধর্ম।

ইসলাম মানুষের ইহজাগতিক আর সব বিধানের মতো সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বিধানও দান করে। রাজনীতি অর্থ রাষ্ট্রপরিচালনার নীতি। রাষ্ট্রপরিচালনা কীভাবে করতে হয়, ইসলামের নবী, মাদানীজীবনের দশ বছর হাতে-কলমে শিখিয়ে গেছেন। কুরআন-সুন্নায় এর পর্যাপ্ত বিবরণ রয়েছে।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ — আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। ইসলামের এই সূচনাবক্তব্যই একটি রাজনৈতিক বক্তব্য। এক আল্লাহ ছাড়া অন্য সকল উপাস্যকে অস্বীকার করা প্রবল রাজনৈতিক বক্তব্য। মানুষ যখন মানুষের দাসত্ব করছিল, বিদ্যমান ব্যবস্থা ভেঙে মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে একমাত্র স্রষ্টার অনুগত করার জন্য ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (সা.) আহ্বান করেছেন। চলমান ব্যবস্থা ভেঙে নতুন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাদান প্রবলভাবে রাজনৈতিক বিষয়। ইসলাম শুধু প্রচার চায় না, প্রতিষ্ঠাও চায়। প্রচার অরাজনৈতিক হতে পারে, প্রতিষ্ঠা প্রবলভাবে রাজনৈতিক। ইসলাম এসেছে মানবজাতির কল্যাণের জন্যে। আর মানবজাতির সবচে বেশি কল্যাণ করা যায় রাজনীতি দিয়ে।

ইসলাম যে রাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে প্রয়াসী, তার শাস্ত্রীয় নাম খিলাফাহ। ইসলামী রাষ্ট্রে কোনো রাষ্ট্রপতি থাকে না। ‘পতি’ মানে স্বামী, প্রভু, পালক ও রাজা থাকে না। ইসলামী রাষ্ট্রে থাকে খলীফা, অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিনিধি। ইসলামী রাষ্ট্রনীতির মূলকথা হলো, বিধান চলবে বিধাতার। মানুষ শুধু বিধাতার বিধানের প্রতিনিধিত্ব করে মাত্র। প্রতিনিধি অলঙ্ঘ্য অপরিবর্তনীয় বিধি কার্যকর করতে পারেন কেবল। তাঁর জন্য নিজের পক্ষ থেকে ব্যতিক্রম কিছু করার সুযোগ নেই।

বিধান যে বিধাতার, এই মর্মে ইসলামের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য রয়েছে। কুরআন কারীমে আল্লাহ বলেন, ‘বিধান একমাত্র আল্লাহরই।’ [আনআম ৫৭, ইউসুফ ৪০ ও ৪৭] আরো বলেছেন, ‘আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে যারা সিদ্ধান্ত দেয় না তারা অস্বীকারকারী।’ [মায়িদাহ ৪৪]

মানুষকে আল্লাহ তায়ালা খলীফা তথা প্রতিনিধি বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ বলেছেন, ইন্নী জায়ি’লুন ফিল-আরদি খলীফাহ — আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব। আল্লাহ তা-ই করেছেন। মানুষকে প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু অবাধ্য অতৃপ্ত মানুষ প্রতিনিধি হয়ে সন্তুষ্ট নয়। মানুষ পতি হতে চায়, প্রভু হতে চায়। আল্লাহর বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অথচ ইসলাম এসেছেই মানুষকে মানুষের প্রভুত্ব ও গোলামি থেকে মুক্ত করে স্রষ্টার অনুগত করতে। মানুষ মানুষের প্রভুও হতে পারে না, গোলামও হতে পারে না। মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক নেই। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বের। ইন্নামাল-মুমিনূনা ইখওয়াহ।

প্রতিনিধিত্ব ও পতিত্বের পার্থক্য বোঝার জন্য মাত্র একটা উদাহরণই যথেষ্ট। কোনো অপরাধীকে আদালত দণ্ড দিলে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিনিধি দণ্ড মওকুফ করতে পারেন না, যতক্ষণ না বিচারপ্রার্থী ক্ষমা করে। বিধাতার বিধানে প্রতিনিধির জন্য দণ্ড মওকুফের সুযোগ নেই। কিন্তু ‘আধুনিক’ রাষ্ট্রের ‘পতি’ খুনীকেও ক্ষমা করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে বিচারপ্রার্থীর ইচ্ছার কোনো মূল্য নেই। প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করার অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত খুনীকে ক্ষমা করে দিলেও কারো কিছু বলার নেই। কারণ তিনি যে মহামান্য। এই মহামান্যের ধারণাটাই ইসলামে নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে সবাই সমান মর্যাদার অধিকারী। খলীফা নীতিচ্যুত হওয়ার আগে পর্যন্ত নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন শুধু। এর বাইরে তাঁর যথেচ্ছ কিছু করার সুযোগ নেই। এই বিষয়টাই ধ্বনিত হয়েছে ইসলামের প্রথম খলীফা আবূ বাকার সিদ্দীক (রা.)-এর মুখে। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমি কেবল অনুসারী, উদ্ভাবক নই। আমি যদি ঠিক পথে থাকি, তবে আপনারা আমায় মান্য করবেন। আর আমি যদি বিপথগামী হই, তাহলে আপনারা আমাকে সংশোধন করে দেবেন।’ [তারীখ আত-তাবারী, ৩:২২৪]

তিনি আরো বলেছেন, ‘আমাকে আপনাদের শাসক নিযুক্ত করা হয়েছে, অথচ আমি আপনাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি নই। আমি যদি ভালো করি, তবে আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। আর যদি খারাপ করি, আমাকে সোজা করে দেবেন। সততা হচ্ছে, গচ্ছিত ধন। আর মিথ্যা হচ্ছে সম্পদ অপহরণ।… আপনারা আমাাকে মান্য করবেন, যতক্ষণ আমি আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর অনুসরণ করি। আর আমি যদি আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর অবাধ্যতা করি, তবে আপনাদের ওপর আমার আনুগত্য নেই।’ [ইবনে হিশাম, আসসীরাহ আননাবাবিয়্যাহ]

প্রণিধানযোগ্য যে, আবূ বাকার (রা.) নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলেন নি। শাসক-শাসিতের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপণের বিধান ইসলামে নেই। ইসলামে শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপণ হয় তাকওয়ার ভিত্তিতে। আর মুত্তাকী মানুষ নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন না। আবূ বাকার অবশ্যই শ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন, তাকওয়ার ভিত্তিতে। সেই যুগের এবং সব যুগের হিসেবেও।

আরো লক্ষণীয় যে, তিনি বলেছেন, ‘আপনারা আমাাকে মান্য করবেন, যতক্ষণ আমি আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর অনুসরণ করি। আর আমি যদি আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর অবাধ্যতা করি, তবে আপনাদের ওপর আমার আনুগত্য নেই।’ কারণ, ইসলাম চূড়ান্ত বিচারে মানুষের আনুগত্য অস্বীকার করে। শাসকের আনুগত্যও করবে আল্লাহর আনুগত্যের ভিত্তিতে। শাসক যতক্ষণ আল্লাহর অনুগত, জনগণ শুধু ততক্ষণ পর্যন্ত শাসককে মান্য করবে।

আল্লাহর আনুগত্যের ভিত্তিতে শাসকের আনুগত্য এবং শাসক ভুল করলে আবূ বাকার-কথিত সোজা করে দেওয়ার উদাহরণ ইসলামের ইতিহাসে বিস্তর রয়েছে। তার একটি: একবার উমার (রা.) মসজিদের মিম্বারে মতপ্রকাশ করেন যে, কেউ যেন চারশ দিরহামের অধিক মাহরানা দিয়ে বিয়ে না করে। সমগ্র মুসলিম জাহানের শাসকের কথায় আপত্তি জানালেন এক মহিলা। তিনি বললেন, ‘উমার, আপনি চারশ দিরহামের অধিক মাহরানা নির্ধারণ করতে নিষেধ করছেন?’ উমার বললেন, ‘হ্যাঁ।’ মহিলা বললেন, ‘আপনি কি শোনন নি আল্লাহ কী নাযিল করেছেন?’ উমার বললেন, ‘কী সেটি?’ মহিলা বললেন, ‘(আল্লাহ বলেছেন) তোমরা ইচ্ছা করলে স্ত্রীকে গচ্ছিত সম্পদ দিতে পার…’ উমার ভুল বুঝতে পেরে বললেন, ‘আল্লাহ, আমি ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। সবাই উমারের চেয়ে বেশি জ্ঞানী।’ এরকম ঘটনা প্রচুর আছে।

প্রতিনিধি যেন পতি হয়ে যেতে না পারে, এজন্যও আল্লাহ বিধি তৈরি করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, আন্নাল-আরদা ইয়ারিসুহা মিন ইবাদিয়াস-সালিহূন — আমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাগণ পৃথিবীর অধিকারী হবে। সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিনিধি হওয়ার বিধান এজন্য যে, নয়ত প্রতিনিধি একসময় পতি হওয়ার চেষ্টা করবে। এ থেকে আরো বোঝা গেল, যারা ‘পতি’ তারা সৎকর্মী নয়।

উমাইয়া ও আব্বাসী খিলাফাহ দ্বারা অনেকের বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ আছে। মনে রাখা কর্তব্য যে, সেই খিলাফাহ নির্ভেজাল ছিল না। আসলে সেটি খিলাফাহ ছিল কি না, বিতর্কের অবকাশ আছে। এ নিয়ে বিজ্ঞজনদের মধ্যে বিতর্ক চলেছেও। খিলাফাহ হলেও সেটি যে রাজতন্ত্রমিশ্রিত খিলাফাহ ছিল, এটি বিতর্কহীন। খিলাফাহমিশ্রিত রাজতন্ত্র বলারও যথেষ্ট সুযোগ আছে।

যে কোনো বিষয়কে যাচাই করার জন্য তার নিয়মকানুন দেখা কর্তব্য। সেই নিয়মকানুনের প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই যুগে যেমন মুসলমান দেখে ইসলামকে যাচাই করা কঠিন, সে যুগের খলীফা দেখেও খিলাফাহ যাচাই করা কঠিন বৈকি।

তবু বলতেই হবে যে, সেই সময়কার রাজতন্ত্রমিশ্রিত খিলাফাহ বা খিলাফাহমিশ্রিত রাজতন্ত্রও তৎকালীন অন্য সব শাসনব্যবস্থার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর ছিল। আর এই যুগের তথাকথিত গণতান্ত্রিক শাসনের চেয়ে সব বিচারেই ভালো ছিল। সেই স্বেচ্ছাচারী শাসকেরাও এই যুগের জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে জনহিতকারী ছিল।

হ্যাঁ, শাসক দিয়েও যদি শাসনব্যবস্থা মূল্যায়ন করতে চান, খিলাফাতে রাশিদাহ আপনার পথপ্রদর্শক হবে। তাঁরা স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচার থেকে পরিপূর্ণ মুক্ত ছিলেন। তাঁরা ছিলেন রাসূল (সা.) পরিপূর্ণ পদাঙ্ক অনুসারী। জীবদ্দশায় স্বেচ্ছায় বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হন নি।

গণতান্ত্রিক পন্থার সঙ্গে খিলাফাহ ব্যবস্থার মিলও আছে, অমিলও আছে। মিল হলো, খিলাফাহ ব্যবস্থায়ও খানিকটা গণতান্ত্রিক ধারা অনুসৃত হয়। খিলাফাহ ব্যবস্থায় খলীফাকে নিয়োগ দেয় শূরা, যেই শূরার সদস্যরা সারা মুসলিম জাহানের আস্থাভাজন। তো, জনমত সেক্ষেত্রেও জরুরি। আবার দেখুন, খলীফারা বিভিন্ন অঞ্চলের নেতৃস্থানীয় লোকদের বাইয়াত তথা সমর্থন নিতে বাধ্য। আবার এই জনগণের সমর্থনই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি। অমিল কী? মোটাদাগে অমিল হলো, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের সরকার রাষ্ট্রপরিচালনা-বিধি ইচ্ছেমত রচনা করেন। খলীফা বিধি রচনা করেন না, আল্লাহর দেওয়া অলঙ্ঘ্য বিধি কার্যকর করেন মাত্র।

আল্লামা ইকবাল গণতন্ত্র সম্পর্কে যথার্থ বলেছেন, ‘গণতন্ত্রে মানুষকে গণনা করা হয়, ওজন করা হয় না।’ গণতন্ত্রে সংখ্যাই বিচার্য। দেশের সবচে অচেতন ও সবচে সচেতন— ভোটদানে দুইজনের অধিকার সমান। কোথাও নির্বাচন হলে পরদিন পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন হয়, ‘একশ বছরের বৃদ্ধার ভোটদান’। বিবরণ পড়ে জানা যায়, দৃষ্টিশক্তিহীন ও প্রায় চেতনালুপ্ত বৃদ্ধা নিকটাত্মীয়ের সহযোগিতায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। সুষ্ঠু ভোটের নিদর্শন হিসেবে এসব ঘটনার উদাহরণ টানা হয়। ভোটদান এ ধরনের মানুষের অধিকার হয় কীভাবে, বোঝা মুশকিল। রাষ্ট্রের পরিচালক নির্বাচনের জন্য সচেতন ও বাহ্যজ্ঞান সম্পন্ন লোকের মতামতই অগ্রগণ্য হওয়া উচিত। অন্যদিকে খলীফা নির্বাচনে মানুষের ওজন বিবেচ্য। এক্ষেত্রে দেশের ন্যায়পরায়ণ গণ্যমান্য ও সচেতন মানুষের মতামত গৃহীত হয়। তবে হ্যাঁ, এসব গণ্যমান্য লোকেরা সাধারণ মানুষের প্রীতিভাজন হতে বাধ্য। জনসাধারণের আস্থা— এই জায়গায় আবার গণতন্ত্রের সঙ্গে খিলাফাহর মিল লক্ষিত হয়।
অনেক খিলাফাহপন্থী গণতন্ত্রকে কুফরি বলে উপসংহার টানতে চান। গণতন্ত্র সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে খিলাফাহর সঙ্গে তার মিল-অমিল মাথায় রাখতে হবে। স্মর্তব্য যে, পুরো উমাইয়া ও আব্বাসী শাসনকালে শাসক-নির্বাচন রাজতান্ত্রিক পন্থায় হতো। রাজতান্ত্রিক পন্থা তো খিলাফাহর বাইরে গণতন্ত্রের মতোই ভিন্ন একটা পন্থা। তবু এই ভিন্ন পন্থাকে সালাফের কেউ কুফরি বলেন নি। তাদের নিয়োগলাভ যদিও রাজতান্ত্রিক পন্থায় ছিল, তবু দেশের আইন-কানুন ও রীতিনীতি ইসলামিক ছিল। শাসক নির্বাচন-প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় হলেও যদি আইন-কানুন কুরআন-সুন্নাহর অনুরূপ হয়, তবে গণতন্ত্র সম্পর্কে ভিন্ন দৃষ্টি রাখা সম্ভব। একটা ব্যবস্থাকে বিনা বিচারে কুফরি বলে দেওয়া সহজ নয়, উচিতও নয়।

আবুল কাসেম আদিল
লেখক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।