নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারসহ ৪ দফা দাবিতে হেফাজত

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

নভেম্বর ২৭ ২০২১, ২০:৪৯

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এবার মহান আল্লাহ তায়ালা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও কুরআন-সুন্নাহ তথা ইসলাম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আইন পাস করার দাবীতে ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

শনিবার(২৭ নভেম্বর) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে ‘আল্লাহ, রাসুল, কুরআন-সুন্নাহ তথা ইসলাম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আইন পাস করার দাবি’তে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

আয়োজিত সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, হেফাজত অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হলে অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে সাবধান থাকা উচিত। হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত নয়- এমন সাধারণ আলেমদের মুক্তির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু জামিনের বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার।

তিনি আরও বলেন, মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে বিশ্বাস করি। আমি কুরআন ‍সুন্নাহকে মেনে চলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের নবিজির নামে বা কুরআনকে কেউ যদি অপবিত্র করার প্রচেষ্টা করবে আপনাদের যেমন হৃদয় যেমন কষ্ট লাগে তেমন আমার হৃদয়েও কষ্ট লাগে। এজন্যই আমি বলি আমরা কারো বিশ্বাসের প্রতি আমরা অমর্যদা করি না। এবং করতে দিবো না। এটা আমাদের কথা। আমাদের আইনের কথা।

হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা নামানো হেফাজতে ইসলামের কাজ নয়। জাতীয় নির্বাচন তো দূরের কথা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও হেফাজতের কোনো প্রার্থী নেই।

বক্তব্য রাখছেন হোফাজতের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী

এছাড়া আয়োজিত সম্মেলনে হেফাজতের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবী জানানো হয়, এ দাবিগুলোর মধ্যে আছে–

১. আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, কুরআন-সুন্নাহ তথা ইসলাম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে মহান জাতীয় সংসদে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আইন পাশ করতে হবে।

২. কাদিয়ানি সম্প্রদায় (আহমদিয়া জামাত) কুরআন-হাদিস-ইজমা-কিয়াস ও সারা বিশ্বের ওলামা-মাশায়েখ এবং মুফতিদের সর্বসম্মত ফতোয়া মোতাবেক কাফের। তারা মুসলমান না হয়েও মুসলমানদের লেবাসে সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে ঈমানহারা করছে। দেশে তাদের ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারণার মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে অরাজক পরিস্থিতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত করছে। সুতরাং কাদিয়ানিদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের যাবতীয় অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।

৩. বিভিন্ন মামলায় এখন পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মী, আলেম-ওলামা কারাগারে আটক আছেন। কারাগারে থাকা আলেম-ওলামা ও হেফাজতের নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।

৪. বাংলাদেশের সংবিধানে মীমাংসিত ও অপরিবর্তনশীল বিষয় ‘রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম’-কে কটাক্ষ করে কতিপয় দায়িত্বশীলদের কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্যে ক্ষোভ এবং ঘৃণা প্রকাশ করে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

হেফাজতের ইসলামের আমীর আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়। জাতীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচনে হেফাজতের কোনো প্রার্থিতা নেই, প্রোপাগান্ডাও নেই। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হেফাজতের সংশ্লিষ্টতা নেই। কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা ক্ষমতা থেকে নামানো হেফাজতের এজেন্ডা নয়। হেফাজতের ব্যানারে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করারও কোনো সুযোগ নেই। হেফাজতে ইসলাম শুধু ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও তাহজিবের বিকাশ এবং নাস্তিকতাবাদের প্রতিরোধে কাজ করবে।

মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, ইসলামকে হেফাজতের লক্ষ্যে ২০১০ সালে মাওলানা আহমদ শফীর হাত ধরে হেফাজতে ইসলামের জন্ম। প্রতিষ্ঠার পর নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেও ১৩ দফায় অটল রয়েছে হেফাজত। এর বাইরে হেফাজতের কোনো কর্মকাণ্ড নেই।

দলটির মহাসচিব আরও বলেন, কিছু দিন আগে যে কারণেই হোক দেশে হেফাজতের ডাকে হারতাল পালিত হয়েছে। এ হরতালকে কেন্দ্র করে কিছু দুর্ঘটনা ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ ছাত্রদের মাঝে কিছু বিশৃঙ্খলাকারী অনুপ্রবেশ করে জ্বালাও-পোড়াও এবং ভাঙচুর করেছে। মাদ্রাসার ছাত্ররা কখনোই এর সঙ্গে যুক্ত ছিল না। মাদ্রাসায় কারো জানমালের ক্ষতির শিক্ষা দেওয়া হয় না। কিন্তু সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ আলেম-ওলামাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হেফাজত তাদের মুক্তি চায়।

হেফাজতের ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আমীরে হেফাজত আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা সাজিদুর রহমান, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান,মাওলানা মীর মোঃ ইদ্রিস,  মুফতী মোবারকুল্লাহ, মুফতী মুহাম্মদ আলী কাসেমী ও মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী, মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জি, মাওলানা নুরুল ইসলাম,  মাওলানা ইয়াহইয়া, মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা আব্দুল আওয়াল, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদি, মাওলানা শাব্বির আহমদ রশিদ, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা জসিমউদদীন , মাওলানা হারুন আজিজি,  প্রমুখ।