ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃতির সংঘাত সৃষ্টি করা ঠিক না: প্রধানমন্ত্রী

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ১৩ ২০২২, ১৫:৫০

ফাইল ফটো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অনেকে ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃতির সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়। এটা মোটেও সঠিক না। ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃতির সংঘাত নেই। ধর্ম, যার যার ধর্ম। আমরা এটাই বলি, ধর্ম যার যার, উৎসব সকলের। কাজেই উৎসব আমরা সকলে এক হয়ে পালন করব।’

বুধবার (১৩ এপ্রিল) সকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নবনির্মিত আটটি জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ পালন করতে গিয়ে আমরা বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। ১৪০০ সাল বরণ করতে গিয়ে আমরা বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম- এটা হচ্ছে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এমনকি রমনা বটমূলে বোমা হত্যা করেও মানুষ হত্যা করা হয়েছিল, যাতে করে আমাদের সংস্কৃতিচর্চা বন্ধ হয়ে যায়। আজকে পহেলা বৈশাখ আমরা উদযাপন করি, এই একটা উৎসবে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাই, সব বাঙালি এক হয়ে আমরা কিন্তু এই পহেলা বৈশাখে উদযাপন করি।’

সংস্কৃতিচর্চার গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেকোনো একটি দেশে মানুষের জীবনে সংস্কৃতির চর্চা বা সংস্কৃতির বিকাশ এটা অপরিহার্য। কারণ এই সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে কিন্তু একটি জাতির স্বাতন্ত্র্যবোধটা আরও বেশি বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়। কাজেই আমরা সব সময় এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতিচর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের ঐতিহ্য আমরা ভুলব না। আবার যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েও চলতে হবে। কারণ আধুনিক যুগের যে সংস্কৃতি তার সঙ্গেও যাতে দেশের ছেলেমেয়েরা, তারাও যেন তার সঙ্গে মিল রেখে চলতে পারে বা সেই সংস্কৃতিও যেন তারা রপ্ত করতে পারে, চর্চা করতে পারে। কাজেই আমি মনে করি, আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি এবং আধুনিক জ্ঞানও অর্জন করা একান্তভাবে দরকার। একটা থেকে আরেকটা বাদ দেয়া যাবে না। আমাদের সামনের দিকেও এগিয়ে যেতে হবে।’

লোকজ সংস্কৃতিকে অমূল্য সম্পদ আখ্যা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘একেকটা অঞ্চলভিত্তিক যেসব লোকজ শিল্প যেমন, পালা গান, কবির লড়াই, কবিতা, গান যাত্রা- এ রকম বিভিন্ন জিনিস রয়েছে। যার মধ্য দিয়ে অনেক ঐতিহ্যও আমরা জানতে পারি। এগুলো চর্চা করার সুযোগ সৃষ্টি করা এবং এগুলো বিকশিত করা একান্তভাবে প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সিনেমা আমাদের দেশের মানুষের বিনোদনের একটা অবলম্বন ছিল। যেটা পর্যায়ক্রমিকভাবে, আসলে প্রযুক্তির কারণে হোক, এটা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি মনে করি, আমাদের প্রতিটি জেলায় উপজেলায় আবার সিনেমা হলগুলো তৈরি করা উচিত। সিনেমা হলের সঙ্গে শুধু সিনেমা হল না সিনেপ্লেক্স অর্থাৎ সিনেমা হলে সঙ্গে শপিং মলসহ সবকিছুই করতে পারেন।’

এজন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরনো সিনেমা হলগুলো ভেঙে আবার নতুনভাবে তৈরি করে, সেখানে মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা করতে পারেন। এই লক্ষ্যে আমরা কিন্তু এক হাজার কোটি টাকার একটা বিশেষ বরাদ্দ রেখেছি। যারা পুরনো সিনেমা হল ভেঙে নতুন সিনেমা হল তৈরি করবেন, তারা এখান থেকে বরাদ্দ পাবেন। এবং আরো নতুন নতুন সিনেমা হল যারা করতে চাইবেন তাদেরকেও এখান থেকে কিন্তু টাকা দেয়া হবে।’

কুষ্টিয়া, খুলনা, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন অনুষ্ঠানে। দেশবাসীকে নববর্ষ ও ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন শেখ হাসিনা।