দুর্ভোগে থাকা কুড়িগ্রামের তিন লক্ষাধিক বানভাসিদের ঈদ আনন্দ ম্লান

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ৩০ ২০২০, ১৯:৩৩

রোকন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: করোনার দুঃসময়ে কুড়িগ্রামের জেলা, এক মাসেই মুখোমুখি হয়েছে তিন দফা বন্যার। নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে প্লাবিত এলাকার প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের। বন্যায় আর করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষেরা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। যারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়ে কষ্টে দিন যাপন করছে তারাও ঘরে ফিরতে পারছে না। নদী ভাঙ্গন ও বন্যায় ভেসে গেছে শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি।

বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ও গবাদি পশুর খাদ্যের সংকট চরম আকার ধারন করেছে।

এ অবস্থায় কোরবানীর ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে উপজেলার চরাঞ্চলের বন্যা দুর্গত মানুষের। বিশেষ করে হতদরিদ্র পরিবারগুলো ছেলে-মেয়েদের নতুন জামা-কাপড়তো দুরের কথা এক টুকরো মাংস মুখে তুলে দেয়ার কথাও ভাবতে পারছে না।

সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার গারুহারা চরের মোফাজ্জল হোসেন জানান, আমরা দিনমজুরের কাজ করে দিন এনে দিন খাই। ভাইরাসের কারনে কাজ ছিল না। তার উপর বন্যা কাজ নাই বসে থাকা ছাড়া উপায় নাই। ৭ জনের পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে রয়েছি। এই এক মাসের বন্যায় মাত্র ১০ কেজি চাল পেয়েছি। তাও শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ঈদের কথা ভাবতে কষ্ট হয় মনে। আমাদের কোন ঈদ নেই।

উলিপুরের বেগমগন্জ ইউনিয়নের বালাডোবার চরের হাজেরা বেগম জানান, ৩/৪ মাস ধরে আমার স্বামীর হাতে কোন কাজ নেই। ঘরে খাবার নেই। ঈদ আসলেও ছেলে-মেয়েদের মাংস খাওয়ানোর কোন উপায় নাই।

উলিপুর উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক জে এম আলি নয়ন বলেন, “উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি বানভাসি মানুষদের চরম দুর্ভোগ।করোনা আর বন্যার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে এখানকার মানুষজন।পানিবন্দী কর্মহীন এসব মানুষের নেই পর্যাপ্ত খাবার, চরম দুর্ভোগ আর পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তারা, পাননি পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা। কাজেই বানভাসি মানুষদের এবার ঈদ আনন্দ নেই। যেহেতু আমাদের জেলা বিভিন্ন নদ-নদী বেষ্টিত তাই এখানকার বন্যা এবং নদীভাঙন রোধে স্হায়ী পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন।”

উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের তারুণ্যের ঐক্য “সংগঠনের সভাপতি আতাউর রহমান বলেন, বন্যা আর নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত আমরা। পানি তিনবার খেয়ে গেল। আর কত দিন থাকবে বুঝতে পারছি না। এলাকার লোকজন পড়েছে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে। গবাদি পশু থেকে মানুষ- সবাই অসহায় অবস্থায় আছি। এই অবস্থায় ঈদের আনন্দ নেই আমাদের। ”

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, “জেলার বন্যা কবলিতদের জন্য সরকারীভাবে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। ঈদের আগে জেলার ৪ লাখ ২৮ হাজার ৫শ ২৫ পরিবারকে ১০ কেজি করে ভিজিএফ’র চাল দেয়া হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী আরো খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে।”