দুর্গাপুরে নদীতে ভেসে যাওয়া তিন শিশুর জীবন বাঁচালো থানা পুলিশের ড্রাইভার আতিক

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ২১ ২০২০, ১৯:৪৮

  • ছবি: দুর্গাপুরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হোজা নদীতে ভেসে যাওয়া তিন শিশুর স্থান দেখাচ্ছেন থানা পুলিশের ড্রাইভার কনস্টেবল আতিক

দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি: মঙ্গলবার সকাল ১০টা। তিন শিশু খেলা করছিল দুর্গাপুর থানা সংলগ্ন মন্দিরের পেছনে। খেলার ছলে ওই তিন শিশু মন্দিরের পেছন দিয়ে বয়ে যাওয়া হোজা নদীতে পা ভেজাতে যায়। গত কয়েক দিনের উপুর্যপরি বৃষ্টিপাতের কারণে ঝুলন্ত ব্রিজের উপর দিয়েই পানির স্রোত প্রবল বেগে বয়ে যেতে থাকে। ওই তিন শিশু পানিতে নেমে নদীর মাঝামাঝি ঝুলন্ত ব্রীজের কাছাকাছি যেতেই পানির প্রবল স্রোতে ভেসে যায়।

এ সময় অনেকেই আশপাশ থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেও কেউ এগিয়ে যাননি ওই তিন শিশুকে বাঁচাতে। তবে তিন শিশুর স্রোতে ভেসে যাওয়ার সে দৃশ্য দেখে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি দুর্গাপুর থানা পুলিশের ড্রাইভার পুলিশ কনস্টেবল আতিক। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি একাই নদীর প্রবল স্রোতে ঝাপিয়ে পড়ে বয়ে যাওয়া পানির প্রবল স্রোত থেকে টেনে তুলে জীবন বাঁচান ওই তিন শিশুর।

এমন সাহসী কাজের কারণে থানা পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের প্রশংসায় ভাসছেন ড্রাইভার আতিক। তবে এ ঘটনাটিকে দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যেই ভাবছেন ড্রাইভার আতিক।

স্রোতে ভেসে যাওয়া ওই তিন শিশু হলো, দুর্গাপুর থানার পুলিশ কনস্টেবল জাকির হোসেনের পুত্র মাহাদী (১১), স্থানীয় ইয়ানুচ আলীর পুত্র রুবেল (১১) ও কলেজ শিক্ষক আয়নাল হকের পুত্র স্বচ্ছ (১০)।

স্থানীয় বাসিন্দা আবু হেনা জানান, দুর্গাপুর উপজেলা সদরের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে হোজা নদী। ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম এই নদীতে এতো পানির স্রোত দেখলাম। মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে ওই তিন শিশু খেলার ছলে নদীর পানিতে পা ভেজাতে গিয়ে পানির প্রবল স্রোতে ভেসে যায়। এ সময় থানা পুলিশের ড্রাইভার আতিক ঝুঁকি নিয়ে নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে ওই তিন শিশুকে উদ্ধার করেন।

থানা পুলিশের ড্রাইভার আতিক জানান, থানার সামনেই নদীর পাশের একটি বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। তার স্ত্রীও পুলিশ সদস্য। স্ত্রী সন্তান সম্ভাবা হওয়ায় ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে স্ত্রীকে সময় দিতে বাসায় ছিলাম। সকাল ১০ টার দিকে মানুষের চিৎকার শুনে বাসার পেছন দিকে নদীর পাশে যেতেই দেখি তিন শিশু পানির প্রবল স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। অনেকেই নদীর দুই পাশ থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখছে, কেউবা মোবাইলে ভিডিও করছে বা ছবি তুলছে। ওই তিন শিশুকে কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসছেনা। এ দৃশ্য দেখে স্থির থাকতে না পেরে প্রবল স্রোতে ঝাপিয়ে পড়ে ভেসে যাওয়া ওই তিন শিশুকে উদ্ধার করি।

তিনি আরো বলেন, নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যের জায়গা থেকেই তিন শিশুকে উদ্ধার করেছি। অনেকেই এদৃশ্য তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেও তাতে আমার মন সায় দেয়নি। যা করেছি মানবিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে করেছি অন্যকোন উদ্দেশ্যে নয়।

দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খুরশীদা বানু কণা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রতিটি দুর্যোগ, মহামারি ও দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। পুলিশ সদস্যদের এমন গর্বিত কাজে পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।

ড্রাইভার আতিক সম্পর্কে ওসি কণা বলেন, আতিক অনেক সাহসী একটা ছেলে। তার স্ত্রীও পুলিশ বাহিনীর সদস্য। সাহসী এমন কাজের জন্য আতিক নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। পুলিশ কনস্টেবল আতিকের সাহসী ও মানবিক এমন কর্মকান্ডের বিষয়টি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে।