দুনিয়ার পিছনে দৌঁড়ানোর কুফল

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ২১ ২০১৯, ১৮:৪১

মাওলানা জুনাইদ আহমদ জুনেদ

দুনিয়ার পিছনে দৌঁড়ানো মানে দুনিয়ার ধন-দৌলত ও মান-মর্যাদা অর্জনের জন্য ব্যস্ত থাকা। দুনিয়ার সম্পদ উপার্জন বা মান-সম্মান অর্জন মূলত কোন দোষনীয় কোন কাজ নয়। বরং সঠিক পন্থায় সম্পদ উপার্জন একটি পুণ্যের কাজ; একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এ ব্যাপারে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন – হালাল সম্পদ উপার্জন ফরজের পর আরেকটি ফরজ। অর্থাৎ মৌলিক ফরজ ইবাদাত সমূহ আদায়ের পর হালাল পন্থায় সম্পদ উপার্জন করাও আরেকটি ফরজ। কেননা আপনি যদি আপনার পরিবারের অভিভাবক হয়ে থাকেন , তাহলে পরিবারের লোকজনের অন্ন,বস্ত্র ও চিকিৎসা সহ যাবতীয় ভরণপোষণ করা আপনার দায়িত্ব। এ দায়িত্ব আদায়ে কমতি করলে আপনাকে হাশরের ময়দানে জবাবদিহি করতে হবে! আর এ গুরুদায়িত্ব পালন করতে হলে আগে আপনাকে অবশ্যই হালাল উপায়ে উপার্জন করতে হবে। অন্যথায় সম্ভব নয়। আর পরিশ্রম করে হালাল উপায়ে উপার্জন করে আপনি যেটুকু আপনার পরিবার পরিজনের পিছনে খরচ করবেন এর সবটুকুই আপনার আমলনামায় সদক্বাহর সাওয়াব হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে! যা কাল হাশরের দিনে আপনার নাজাতের জরিয়া বা বেহেশতে দরজা বুলন্দির কারন হয়ে যেতে পারে! অতএব বুঝা গেল- হালাল পন্থায় দুনিয়াতে সম্পদ উপার্জনও একটি ইবাদত। কিন্তু এ ইবাদত যদি অন্য কোন মৌলিক ইবাদত তথা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও রমজানের রোজার প্রতিবন্ধক হয় অথবা হালাল পন্থার পরিবর্তে যদি অন্য পন্থায় আপনি সম্পদ উপার্জন করতে যান, তাহলে সেটা আর ইবাদত থাকেনা! হয়ে যায় একটি হারাম কাজ; হয়ে যায় মস্ত গোনাহের কাজ! যেমন – মনে করেন আপনি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়িক ব্যস্ততায় যদি আপনি আল্লাহর দেয়া ফরজ বিধান নামাজ ছেড়ে দেন অথবা রোজা ছেড়ে দেন তাহলে এ ব্যবসা আপনার জন্য গোনাহের কারণ হয়ে গেল! কিন্তু আপনি যদি নামাজের সময় নামাজ আদায়ের পর ব্যবসার জন্য ব্যস্ত হয়ে যেতেন এবং পরবর্তী ওয়াক্ত পর্যন্ত ওজনে কম না দিয়ে ও মিথ্যা না বলে হালাল ভাবে ব্যবসা করতেন, তারপর পরবর্তী ওয়াক্তের নামাজটুকুও সময়মত আদায় করে নিতেন,তাহলে আপনার ব্যবসাটা আপনার জন্য পূণ্যের কাজ হয়ে যেত। তবে আমাদের অবস্থা এমন,যেন নামাজের সময় দোকান বন্ধ করলে বা কাজ ছেড়ে দিলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে !নামাজ আদায় না করলে তেমন কিছু হবেনা!(নাউজুবিল্লাহ)। অথচ হাদীস শরীফে এক ওয়াক্ত নামাজ কাযা করার শাস্তি স্বরুপ দুই লক্ষ আটাশি হাজার বছর দোযখের আগুনে জ্বলার কথা রয়েছে! এখন যদি আমরা সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তাভাবনা করি, তবে সহজেই বুঝে নিতে পারবো যে, নামাজ ছেড়ে দিয়ে এই সময়টুকুতে ব্যবসা করে বা ক্ষেতখামারে কাজ করে আমরা যতটুকু না লাভবান হতে পেরেছি,এর চেয়ে কত কোটিগুণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েগেছি; শাস্তির উপযুক্ত হয়ে গেছি! তাছাড়া ইবাদত বন্দেগী বাদ দিয়ে শুধু শুধু দুনিয়ার পিছনে দৌঁড়ানো ব্যক্তিদের ব্যাপারে হাদীস শরীফে দয়ার নবীজি সা. কঠিন মন্তব্য করেছেন! ইরশাদ করেছেন — দুনিয়া একটি মৃত জন্তু এবং এর সন্ধানকারীরা কুকুর (সমতুল্য)! এই হাদীসখানা শুনার পর দুনিয়ার পিছনে দৌঁড়ানোর কুফল নিজেই বুঝে নিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আল্লাহ আমাদেরে সহিহ বুঝ দান করুন।

লেখক : আলেম ও শিক্ষক