দাওয়াতের মাঠ, ওয়াজের মঞ্চ; ক্রমেই চলে যাচ্ছে মূর্খদের দখলে

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

নভেম্বর ১৭ ২০২১, ২৩:৩২

ওবাইদুল্লাহ ওবাইদ: আমাদের দেশে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ওয়াজ মাহফিল ও ইসলামী সম্মেলনের সংখ্যা বেড়েছে। শুধু বেড়েছে বললে ভুল হবে, বরং একপ্রকার প্রতিযোগিতা চলছে। ওয়াজ মাহফিলগুলোর আয়োজক বিভিন্ন দল, সংগঠন, সংস্থা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সমাজের মসজিদ, বিশেষ বাড়ি বা ব্যক্তি উদ্যোগেও এসব মাহফিল হয়ে থাকে।

একসময় মাহফিলগুলোতে আহলে ইলম, বিজ্ঞ ও পরহেজগার আলেমদের জবান থেকে সাধারণ মানুষ দীনের প্রয়োজনীয় কথাবার্তা শুনত। সাধারণ মানুষ মুরুব্বিদের হাত ধরে আত্মশুদ্ধির পথ খুঁজত। পুরো জীবনে করণীয় ও বর্জনীয় জেনে রাখত। কিন্তু বর্তমানে মাহফিল আয়োজনের উদ্দেশ্য ও মাহফিলের চিত্র পুরোটাই বদলে গেছে। আজকাল মাহফিল যেন সংগঠন বা সংস্থার জনপ্রিয়তা, দলের শক্তি প্রদর্শনের জন্য আয়োজন করা হয়ে থাকে। ফলে মাহফিলগুলোতে লোক সমাগম বাড়াতে এমন লোকগুলোকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়, যাদের থেকে মানুষ দীনি জ্ঞান অর্জন এবং ইসলাহ গ্রহণ করার চেয়ে তাদের সাথে সেলফি তোলা বা এক নজর দেখাটাকে গৌরবের মনে করে।

এ ক্যাটাগরিতে আছে কয়েক শ্রেণির লোক। ক. প্রসিদ্ধ শিল্পী, যে কেবল কণ্ঠের জোরে বক্তা বনেছে। শিল্পী থেকে বক্তা বনে যাওয়াদের বেশির ভাগই ইলমি বয়ানের জন্য অযোগ্য। খ. এমন আলেম যার ফেসবুক পোস্টে প্রচুর লাইক কমেন্ট আসে। অর্থাৎ ফেসবুক সেলিব্রিটি। তিনি কোরআন ও হাদিসের তাফসির সরাসরি মতন থেকে কতটুকু উদ্ধার করতে পারেন তা মোটেও বিবেচিত হয় না। গ. অকাল পরিপক্ব কথিত শিশু বক্তা। অর্বাচীন। ঘ. আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে খ্যাতি অর্জনকারী তরুণ। যে কিনা ইলমি জগতের শিশুও হতে পারেনি। ঙ. ২৬ ইঞ্চি বক্তা। চ. কমেডিয়ান বক্তা। ইত্যাদি।…

উপরে উল্লেখিত যে কয় শ্রেণির লোক ওয়াজের ময়দানে এসেছে তারা তাদের নিজ পরিচিতির জায়গায় বড় কিছু। কিন্তু তারা তাদের জগৎ ছেড়ে ওয়াজের মাঠে কেন? একজন দায়ির সেসব গুণাবলি থাকতে হয়, আহলে ইলমের যে সব বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হয় তা কি তাদের আছে? বা যে পরিচিতি ব্যবহার করে তারা বয়ানে নেমেছে সে পরিচিতি কোনোভাবে কি আহলে ইলম হওয়ার পরিচয়? যেমন ধরুন, একজন মানুষ গুণী শিল্পী হলেই কি কোরআন হাদিসের বিষয়ে তার বুৎপত্তি অর্জন করা হয়ে যায়? কোনো ব্যক্তি ২৬ ইঞ্চি হলেই কি তার কথাবার্তায় আলাদা রওনক এসে যায়? শিল্পী, ২৬ ইঞ্চি বক্তা, শিশু বক্তা, সুমধুর কণ্ঠ, কমেডিয়ান, আন্তর্জাতিক পুরষ্কার প্রাপ্ত হাফেজ এসব কি আহলে ইলম বা মুসলিহের যোগ্যতা? তারা কি কোরআন হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়ার যোগ্যতা রাখে? গজল গাওয়া আর কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যা করতে পারা উভয়টাকে এক ভাবলে তো ভুল হবে। এখানে আকাশ পাতাল ব্যবধান রয়েছে।

ওয়াজ মাহফিল দাওয়াতের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এক সময় শরিয়তের কথা মানুষের দ্বারে পৌঁছাতে মসজিদের মেহরাব যে ভূমিকা পালন করত এখন ওয়াজের মঞ্চ সে ভূমিকা পালন করছে। এ মঞ্চে এমন লোককেই বসাতে হবে যিনি কোরআন হাদিসের বুৎপত্তি অর্জন করেছেন। আহলে ইলম। ওয়াজের মঞ্চে অযোগ্য কেউ এসে পড়লে তার দ্বারা কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। মানুষ কি কখনও কোনো নার্স দিয়ে বা অপরিপক্ব শিশু দিয়ে নিজের চিকিৎসা করাবে? তাহলে শরিয়তের ব্যাপারে কেন এমন উদাসিনতা? এসব মাহফিল কর্তৃপক্ষ দীনি উদ্দেশ্য বাদ দিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্যকে গুরুত্ব দেয় বলেই এমন উদাসিনতা। সাধারণ মানুষের সাথে পাল্লা দিয়ে এখন বিভিন্ন মাদ্রাসার মাহফিলও সার্কাসে পরিণত হয়েছে।

সাধারণ মানুষের উচিৎ বিজ্ঞ আলেমদের পরামর্শক্রমে মাহফিলের বক্তা নির্বাচন করা। আলেমদের উচিৎ দীনের খেয়ানত থেকে নিজেকে এবং উম্মাহকে রক্ষা করা।

সম্পাদক, কওমি ভিশন