থার্টি ফার্স্ট নাইট: চরিত্র বিধ্বংসী উৎসব 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ৩১ ২০১৯, ২০:২৮

মুস্তাকিম আল মুনতাজ

কালের পরিবর্তনে আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ইংরেজি একটি বছর, ২০১৯ সাল। ৩১ শে ডিসেম্বর রাত বারোটা এক মিনিট থেকে শুরু হবে ১লা জানুয়ারি। নতুন একটি বছর। নতুন একটি সাল, ২০২০ ঈসায়ি। বিগত বছরের সব গ্লানি কিংবা দুঃখকষ্ট মুছে নব উদ্যমে আবারো শুরু হবে পথচলা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো- নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গিয়ে ৩১শে ডিসেম্বর মধ্যরাতে বর্ষবরণের নামে বেপর্দা, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, আর মাতলামির এক হারাম আনন্দে মেতে উঠে মুসলিম পরিবারের যুবক-যুবতীরাও! যা মুসলিম জাতি হিসেবে আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক। অথচ ১লা জানুয়ারি বা বর্ষবরণ পালনের ইতিহাস ইসলামের সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। বরং তা পরিহার করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজী নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন। সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল এবং এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়। ইরান হতে সাধারণ সংস্কৃতির ধারার মধ্যমে প্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে। মেসোপটেমিয়ায় এই নববর্ষ বা আকিতু শুরু হতো নতুন চাঁদের সঙ্গে। ব্যাবিলনিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো মহাবিষুবের দিনে ২০ মার্চ। অ্যাসিরিয়ায় শুরু হতো জলবিষূবের দিনে ২১ সেপ্টেম্বর। মিসর, ফিনিসিয়া ও পারসিকদের নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর। গ্রীকদের নববর্ষ শুরু হতো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত ২১ ডিসেম্বর। রোমান প্রজাতন্ত্রের পঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩-এর পরে ১লা জানুয়ারিতে। ইহুদীদের নববর্ষ বা রোশ হাসানা শুরু হয় তিসরি মাসের প্রথম দিন গোঁড়া ইহুদীদের মতে সেই মাসের দ্বিতীয় দিন।

মোটামুটি ভাবে তিসরি মাস হচ্ছে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর। মধ্যযুগে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে নববর্ষ শুরু হতো ২৫ মার্চ, তারা ধারণা করতো, এদিন দেবদূত।গ্যাব্রিয়েল যিশুমাতা মেরির কাছে যিশু খ্রিস্টের জন্মবার্তা জ্ঞাপন করে। অ্যাংলো-স্যাকসন ইংল্যান্ডে নববর্ষের দিন ছিল ২৫ ডিসেম্বর। পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন

হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয়, বরং সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হয়। যা আজ আমাদের কাছে “থার্টি ফার্স্ট  নাইট” বা “বর্ষবরণ” নামে পরিচিত।

সুতরাং, ইতিহাস যাচাই করলে দেখা যায়, থার্টি ফাস্ট নাইট বা বর্ষবরণ কোনো মুসলমানদের উৎসব নয়, বরং এটি বিজাতীয় বিধর্মীদের একটি উৎসব। এতে স্পট বুঝা যায়, থার্টি ফাস্ট নাইট পালন করার অর্থ হলো বিজাতীয় বিধর্মীদের অনুসরণ কিংবা অনুকরণ করা। অথচ ইসলাম হল মানবতার ‘পূর্ণাঙ্গা জীবনবিধান।’ যার স্বীকৃতি স্বয়ং মহান আল্লাহ তা’য়ালা নিজেই দিয়েছেন। আর তাই সকল মুসলমানের জন্য এই সমস্ত বিজাতীয় বিধর্মীদের সংস্কৃতির অনুসরণ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। কেননা আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিষ্কারভাবে মুসলমানদের উৎসব নির্ধারণ করে দিয়েছেন। হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ (খুশি) রয়েছে। আর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা হল মুসলমাদের ঈদ।’ (বুখারি ও মুসলিম) অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুস্মরণ করবে, সে সেই জাতির অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে। (সুনানে আবু দাউদ)

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর উপর তদারককারীরূপে।

সুতরাং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তুমি তার মাধ্যমে ফয়সালা কর এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে, তা ত্যাগ করে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আমি নির্ধারণ করেছি শরীআত ও স্পষ্ট পন্থা এবং আল্লাহ যদি চাইতেন, তবে তোমাদেরকে এক উম্মত বানাতেন। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। সুতরাং তোমরা ভাল কাজে প্রতিযোগিতা কর। আল্লাহরই দিকে তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তনস্থল। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন, যা নিয়ে তোমরা মতবিরোধ করতে।’ (সূরা আল-মায়িদাহ: ৪৮)

সুতরাং, সকল মুসলমানের উচিত-“থার্টি ফাস্ট নাইট” নামক চরিত্র বিধ্বংসী উৎসব থেকে নিজে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকা এবং অন্যকে বিরত থাকার ব্যপারে উদ্ভুদ্ধু করা। বর্ষবরণের নামে যেনো কোন ধরণের অশ্লীল কার্মকাণ্ড না হয়, সেজন্য সোচ্চার থাকা।

লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক।  নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক ছন্দপাতা।